আজও অনশনে তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা, চান সাংবাদিকতা ও আইন বিভাগ

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের পর প্রতিষ্ঠানটিতে সাংবাদিকতা ও আইন বিভাগ চালুর দাবি জানিয়েছেন। সরকারি কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে যে সাত দফা দাবি নিয়ে তারা অনশন ও অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন তার মধ্যে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন এ দুই বিভাগ খুলে অনার্স কোর্স চালু করার দাবিও রয়েছে।

বর্তমানে ২২টি বিভাগ চালু থাকা তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা কেন নতুন দুই বিভাগ চালুর দাবি জানাচ্ছেন-তা নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতুহল তৈরি হয়েছে।

এই দাবির কারণ তুলে ধরেছেন অনশনরত গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম।

তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর আন্দোলনের প্লাটফর্ম ‘তিতুমীর ঐক্যের’ এ নেতা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, কথা বলতে পারছিলেন না। তিনি লিখিতভাবে আইন বিভাগ চালুর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে লিখেছেন, “বর্তমান সমাজে আইন ও ন্যায়বিচারের গুরুত্ব অপরিসীম। আইন বিষয়ে ভালো শিক্ষা প্রদান করলে তরুণরা ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে সক্ষম হবে এবং সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে।”

তারা মনে করেন, তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় হলে তারা চান সব সময় চান সেটা হবে বিশ্বমানের একটি বিদ্যাপীঠ। তাই আইনবিদ ও বিচারকদের নতুন প্রজন্ম তৈরি করার লক্ষ্যে আইন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম চালু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সাংবাদিকতা বিষয়ে অনার্স কোর্স চালুর যৌক্তিকতা তুলে ধরে আমিনুল লিখেছেন, “বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সাংবাদিকতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিকরা সমাজের চোখ ও কণ্ঠ হিসেবে কাজ করে। আমরা বলে থাকি সাংবাদিকরা হল সমাজের দর্পণ। তাই এই বিষয়টির সঠিক শিক্ষা দিলে তরুণরা পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে দক্ষতা অর্জন করতে পারবে এবং দেশের সংবাদমাধ্যমের মান আরও উন্নত হবে। আইন ও সাংবাদিকতা উভয়ই এমন দুটি ক্ষেত্র যেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক বেশি। একদিকে যেমন আইনি পরামর্শদাতা, আইনজীবী, বিচারক হিসেবে কাজের সুযোগ বাড়বে, তেমনি সাংবাদিকতা বিষয়েও সাংবাদিক, সম্পাদক, রেডিও বা টিভি উপস্থাপক, প্রযোজক হিসেবে কাজের সুযোগ তৈরি হবে।”

আমিনুল মনে করেন তাদের দাবি মেনে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর এবং নতুন দুটি বিষয়ে কোর্স চালু করা হলে তাতে শিক্ষালয়টির সুনাম বাড়ভে। এছাড়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবে বলেও মনে করছেন অনশনরত এই শিক্ষার্থী।

তার মতে, এই দুটি বিষয়ে শিক্ষার মাধ্যমে ‘সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে’।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কোনো কলেজে এ দুটি বিষয় পড়ানো হয় না। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকা অবস্থায়ও ঢাকার সাত কলেজে এ দুটি বিষয় ছিল না।

এদিকে, সরকারি তিতুমীর কলেজকে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে আমরণ অনশন’ ব্যানারে পঞ্চম দিনের মতো আমরণ অনশনে বসেছেন কলেজটির কয়েকজন শিক্ষার্থী। রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে বসেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তরের দাবিতে চলা অনশন কর্মসূচিতে এখন পর্যন্ত অসুস্থ হয়ে চারজন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন আন্দোলরত শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, যেকোনো মূল্যে ৭ দফা কর্মসূচি মেনে নেওয়ার ঘোষণা আসতে হবে। যতক্ষণ এই ঘোষণা না আসবে, ততক্ষণ তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) থেকে তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা অবরোধ, আগের দিন বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকাল থেকে অনশন ও মঙ্গলবার (২ ৮ জানুয়ারি) থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখে ‘শাটডাউন তিতুমীর’ কর্মসূচি শুরু করেন। দাবি মানতে তারা সরকারকে শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪টা পর্যন্ত সময় দিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন শুক্রবার রাতে। তবে তারা সন্ধ্যায় গুলশানে কিছুক্ষণের জন্য অবরোধ করলেও পরে সেখানে থেকে ক্যাম্পাসের সামনে ফিরে আসেন।  রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে আবার আমরণ অনশন কর্মসূচিতে বসেন তারা।

শিক্ষার্থীদের ৭ দফা দাবিগুলো হচ্ছে—

১. তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে।

২. তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠন করে ২০২৪-২০২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

৩. শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ নতুবা অনতিবিলম্বে শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন করতে হবে।

৪. ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ন্যূনতম দুটি বিষয় ‘আইন’ এবং ‘জার্নালিজম’ বিষয় সংযোজন করতে হবে।

৫. একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।

৬. শিক্ষার গুণগতমান শতভাগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আসন সংখ্যা সীমিত করতে হবে।

৭. আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার বিনির্মাণের লক্ষ্যে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিতকরণ করতে হবে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.