ভোজ্যতেলের সংকট কাটছেই না, হতাশ ক্রেতা-বিক্রেতা

বাজারে সংকটের অপর নাম ভোজ্যতেল। সংকট যেন কাটছে না কিছুতেই। সরকার থেকে দাম বাড়ালেও সংকট থেকে মুক্তি মিলছে না। সয়াবিন তেলের স্বাভাবিক সরবরাহ না থাকায় হতাশ ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই। বিশেষ করে ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল পেতে ঘাম ঝরাতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

দোকানিরা বলছেন, কোম্পানি প্রতিনিধিদের বারবার অর্ডার দিলেও চাহিদা অনুযায়ী তেল পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু আমরা জানতে পেরেছি বর্তমানে পাইকারি পর্যায়ে ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম কিছুটা কমেছে। তারপরও মিল থেকে তেলের সরবরাহ এখনো স্বাভাবিক হয়নি।

বর্তমানে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটার প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকা। আর পাঁচ লিটারের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল বিক্রি মূল্য ৮৫০-৮৫৫ টাকা। প্রায় দুই মাস আগে সরকার থেকে দাম বাড়লেও সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট চলমান। এখনও বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক নয় বলেই দাবি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। যার কারণে আর খোলা সয়বিন তেল লিটার প্রতি বাড়তি দামে ১৮০-১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মধুবাগ ও রামপুরা বাজার থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে এমন চিত্র দেখা গেছে।

মধুবাগ বাজরের দোকানি তানভির বলেন, গত দুই-তিন মাস ধরেই ডিলাররা তেল সরবরাহ করছে না। অর্ডার দিয়েও তেল পাচ্ছি না। অনেকেই তেল চাচ্ছে দিতে পারছি না। এক দফা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, তারপরও সরবরাহ স্বাভাবিক নয়। রমজানকে ঘিরে আরেক দফা দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারা করছে বড় ব্যবসায়ীরা। বাধ্য হয়ে বর্তমানে খোলা তেল ১৮৫-১৯০ টাকায় বিক্রি করছি।

অন্যদিকে কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা জাহাঙ্গীর বলছেন, বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট নেই। দাম বৃদ্ধির পর থেকে বাজারে ভোজ্যতেলের স্বাভাবিক সরবরাহ রয়েছে। আমরা চাহিদা অনুসারেই সরবরাহ করতে পারছি। বরং গত সপ্তাহে ব্যারেলপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম এক হাজার টাকার বেশি কমেছে বলে জানি। তবে বোতলজাত তেলে সংকট দেখছি।

তেল নিতে এসে শাহেদ নামে এক ক্রেতা বলছেন, বাজারে সয়াবিন তেল নাই। ২ লিটার তেল পেয়েছি, তাও বাড়তি দামে কিনেছি। যদিও এমআরপি ৩৫০ টাকায় লেখা ছিল। ক্রেতা হিসেবে বাধ্য হয়ে প্রতিনিয়ত ঠকে যাচ্ছি। দেখার কেউ নেই।


ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে সম্প্রতি কারখানা পরিদর্শন করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান।ছবি: সংগৃহীত

গত ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বেড়েছে। এর ফলে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকায়। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ টাকা থেকে বেড়ে ১৫৭-১৬০ টাকা হয়। খোলা পাম তেলের লিটারও ১৪৯ টাকা থেকে বেড়ে ১৫৭ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম এখন ৮৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৮১৮ টাকা।

সয়াবিন ও পামতেলের সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক বাজারে দর বিবেচনায় নিয়ে পবিত্র রমজান মাসে পণ্যটির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার উদ্দেশ্যে অব্যাহতি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সয়াবিন ও পাম তেলের অব্যাহতির মেয়াদ আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

ভোজ্যতেলের ওপর আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ মূসক ব্যতীত অন্য শুল্ক-করাদি প্রত্যাহার করা হয়। গত অক্টোবরে এমন আদেশ জারি করেছিল এনবিআর। আর ১৬ ডিসেম্বর ক্যানোলা ও সানফ্লাওয়ার তেল আমদানিতে আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার পাশাপাশি মূসক বা ভ্যাট হ্রাস করে প্রতিষ্ঠানটি। তারপরও ভোজ্য তেলের বাজার স্বাভাবিক হয়নি বলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই দাবি করছেন।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.