স্কুলে সংকট, বিনামূল্যের পাঠ্যবই খোলাবাজারে

ঢাকা ও শেরপুর থেকে জব্দ ১৯ হাজার বই

বছরের প্রথম দিন স্কুলে স্কুলে উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার রেওয়াজের শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে; যা দেখা গেছে গেল বছরেও। তবে ক্ষমতার পালাবদলের পর সেই উৎসবে ছেদ পড়েছে। নতুন বছরের প্রথম দিনে তো নয়ই; জানুয়ারির ২৩ তারিখ পর্যন্ত দেওয়া গেছে মাত্র ৩টি করে বই। তা-ও সব স্কুলে নয়। সব মিলিয়ে প্রথম দুই দিনে ৪১ কোটি বইয়ের মধ্যে ১০ কোটি বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবি।

বাকি বই ৩০ জানুয়ারির মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার আশা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সব বই না পাওয়া পর্যন্ত এনসিটিবির ওয়েবসাইটে আপলোড করা বইয়ের পিডিএফ কপি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে বই না পাওয়া অনেক শিক্ষার্থী বাজার থেকে কিনেছে বলেও জানা গেছে।

এই সংকটের মধ্যেই জানুয়ারির শেষভাগে এসে খোলাবাজারে মিলছে বিপুল পরিমান বই। রাজধানীর বাংলাবাজার এবং শেরপুর সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর দড়িপাড়া থেকে মোট ১৯ হাজার বই জব্দ করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে সিরাজুল ইসলাম উজ্জল ও দেলোয়ার হোসেনকে।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, একটি চক্র বাংলাবাজারের ইস্পাহানি গলিতে বিভিন্ন গোডাউনে প্রথম থেকে দশম শ্রেণির বিনামূল্যে বিতরণের সরকারি পাঠ্যবই বিক্রয়ের উদ্দেশে মজুদ করেছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে দুই ট্রাক বই জব্দ করা হয়। যেখানে বিভিন্ন শ্রেণির প্রায় ১০ হাজার বই রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম। ছবি সংগৃহীত

জব্দ করা বইগুলোর বিষয়ে আদালতকে ‘অবগত’ করা হবে, আদালতের ‘নির্দেশনা’ অনুযায়ী এনসিটিবিকে হস্তান্তরের কথাও জানান ডিবির এই কর্মকর্তা।

এক প্রশ্নের জবাবে নাসিরুল বলেন, বইগুলো পরিবহনের জন্য যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়, একটা চক্র বইগুলো নিয়ে যায়। এরপর অতিরিক্ত বইগুলো এনে খোলা বাজারে বিক্রি করে দেয় বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি।

অতিরিক্ত বই ছাপানোর সুযোগ রয়েছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে ডিবির যুগ্ম কমিশনার বলেন, ১১৬ প্রেসে বই ছাপানো হয়। ঢাকার বাংলাবাজার এবং ঢাকার বাইরেও কয়েকটি প্রেসে ছাপানো হয়, যারা সরকারি কার্যাদেশ পেয়ে থাকে। অতিরিক্ত বই ছাপানোর সুযোগ আছে কি না, বিষয়টা তদন্তাধীন। যদি অনুসন্ধানে পাই- অতিরিক্ত বই ছাপানো হয়েছে, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গ্রেপ্তার সিরাজুল ইসলাম উজ্জল ও দেলোয়ার হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

এনসিটিবি অথবা মাউশির কেউ জড়িত রয়েছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে ডিবির যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল বলেন, এনসিটিবির দুইটা গোডাউন রয়েছে একটা তেজগাঁও ও আরেকটা টঙ্গীতে। সেখানেই বইগুলো সংরক্ষণ করা হয়, এর বাইরে কোথাও সংরক্ষণের সুযোগ নেই। ভেতরের কারও সংশ্লিষ্টতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গ্রেপ্তার সিরাজুল ইসলাম উজ্জল ১০ বছর আগে একই অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন জানিয়ে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, এবার তার গোডাউন থেকেই বইগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি ১০-১২ টাকা করে বইগুলো কিনে ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি করে আসছিলেন। বিতরণ এবং পরিবহনের অনিয়মে কার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন আরও কিছু নাম আমরা পেয়েছি। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেরপুরের কৃষ্ণপুর দড়িপাড়া থেকে জব্দ করা বই দেখছে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

এদিকে, কুড়িগ্রামের রৌমারী থেকে ঢাকায় পাচার করার সময় শেরপুর সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর দড়িপাড়া থেকে প্রায় ৯ হাজার মাধ্যমিকের বই জব্দ করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে জব্দ করা বইগুলো অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ের।

শেরপুর সদর থানার ওসি জুবাইদুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার  (জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা-এনএসআই) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সকালে কৃষ্ণপুর দড়িপাড়া এলাকা থেকে ট্রাকভর্তি বিনামূল্যের বই উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে মাইদুল (৩২) নামের একজনকে আটক করা হয়েছে।

You might also like

Comments are closed.