চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে মরিয়া ফিলিস্তিনিরা

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার খান ইউনিসে একটি ছোট অ্যাপার্টমেন্টে, যতদূর চোখ যায় যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ল্যান্ডস্কেপে ঘেরা, আবির আল-আওয়াদি বহু প্রত্যাশিত যুদ্ধবিরতি পর্যন্ত মিনিট গণনা করছিলন। কারণ, এই যুদ্ধবিরতির ওপরই নির্ভর করছে ক্যান্সারে আক্রান্ত মেয়ে হানার জীবন। আল জাজিরা থেকে প্রতিবেদনটি অনুবাদ করেছেন কাইয়ুম আহমেদ

১৫ বছর বয়সী আবীর যখনই তার মুখের কম্বলটি তুলে নেয় তখনই হানা একটু ফাক করে কাঁদে। এমনকি আলোর ক্ষীণতম ঝলকও তার ফোলা চোখে অসহ্য যন্ত্রণার উদ্রেক করে। আবীরের কাছে তার মেয়ের এই যন্ত্রণাদায়ক অনুনয়গুলোকে আবার ঢেকে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই তার কাছে।

হানা কম্বলের ভেতর থেকে যখন মুখ বের করে তখন তার বাম চোখ বেরিয়ে আসে, মাথা সঙ্কুচিত হয়। তার দুর্বল কণ্ঠস্বর এবং ক্রমাগত কান্না বলে দেয় কত যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছে সে।

আবির প্রার্থনা করে যে রাফাহ ক্রসিং, যা গাজা মিশরের সঙ্গে ভাগ করে নেয় এবং মে মাসে ছিটমহলের দক্ষিণতম অঞ্চলে স্থল অভিযানের পর থেকে ইসরায়েল বন্ধ করে দিয়েছে, রবিবারের প্রথম দিকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খুলে যায়। আমি জানি না হানা আর কতদিন বেঁচে থাকবে।

মুখ থেকে কম্বল সরালেই হানা একটু ফাক করে কাঁদে। কত যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছে সে। ছবি: সংগৃহীত

গাজার হাজার হাজার আহত ফিলিস্তিনি হানার মতো রোগীদের আশা যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে রাফাহ ক্রসিং খোলা হবে এবং ফিলিস্তিনিরা চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারবে।

এই অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা খাত যুদ্ধের দ্বারা বিধ্বস্ত হয়েছে, এতে মানবসম্পদ, সরঞ্জাম এবং অবকাঠামো এবং চিকিৎসা কর্মীদের অবক্ষয় ঘটেছে যারা ইসরায়েলি আক্রমণকে সাহসী করেছে এবং তাদের রোগীদের অফার করার জন্য সামান্যই অবশিষ্ট রয়েছে।

আল-শিফা মেডিকেল কমপ্লেক্সের পরিচালক এবং বিদেশে চিকিৎসা বিভাগের প্রধান ডা. মুহাম্মাদ আবু সালমিয়া বলেন, গাজার স্বাস্থ্যসেবা খাত জটিল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রস্তাব দিতে পারে এমন কিছুই নেই: কোনো ওষুধ নেই, বিশেষজ্ঞ নেই, অপারেশনের জন্য উপযুক্ত সরঞ্জাম নেই। এ অবস্থায় অনেকের জন্য বেঁচে থাকার একমাত্র সুযোগ বিদেশে চিকিৎসা।

রবিবার (১৯ জানুয়ারি) ফিলিস্তিনের গাজায় কার্যকর হয়েছে বহু প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘোষণা করেছে যে, স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে গাজায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে।

যুদ্ধ বিরতি চুক্তিতে রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে চিকিৎসার প্রয়োজনে ফিলিস্তিনিদের প্রস্থান সহজ করা হয়েছে। তবে রোগীরা চিকিৎসার জন্য কোথায় যাবেন তার বিস্তারিত এখনও পরিষ্কার নয়।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.