নৌকার ছাপ থাকছে না পুলিশের মনোগ্রামে

গবেষণা চলছে পোশাকের রঙ নিয়েও

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বদলে যাচ্ছে পুলিশের মনোগ্রামও। বিভিন্ন মহল থেকে পুলিশের পোশাক, মনোগ্রাম ও ক্যাপ থেকে নৌকার ছাপ পরিবর্তনের দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করে এ সুপারিশ করা হয়েছে। এজন্য করা হয়েছে কমিটি। পাশাপাশি পোশাকের রঙ নিয়েও গবেষণা চলছে।

সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা মহানগর পুলিশসহ সারা দেশের পুলিশ সদস্যদের জন্য একই রকমের পোশাকের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পোশাকের হাতের অংশে রেঞ্জ, জেলা, ইউনিট ও মেট্রোপলিটন পুলিশের মনোগ্রাম থাকবে। নৌকার ছবি থাকবে না। তবে পোশাকের রঙ কী হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। কয়েকটি রঙ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। নিজস্ব ফ্যাক্টরি থেকে কাপড় কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য একজন উপমহাপরিদর্শককে (ডিআইজি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানা করার পরিকল্পনা আছে পুলিশ সদর দপ্তরের। ২০০৪, ২০১৬ ও ২০২১ সালে পুলিশের কয়েকটি ইউনিটের পোশাকের রঙ পরিবর্তন করা হয়েছিল। সর্বশেষ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) পোশাক পরিবর্তন করা হয়েছে। পোশাক কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ আছে।

মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের অভিযোগ, পোশাকের কাপড় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিম্নমানের। এসব পোশাক সারাদিন পরে থাকা যায় না। গরম লাগে। অনেকে নিজের টাকায় ভালো মানের কাপড় কিনে পোশাক তৈরি করে থাকেন। আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতনদের পোশাকের কাপড়ের মান উন্নত। আর এসআই, এএসআই ও কনস্টেবলদের কাপড়ের মান নিম্ন। রঙেও ভিন্নতা রয়েছে।

পুলিশ-সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্রিটিশ আমল থেকে পুলিশের পোশাক ছিল খাকি। অনেক আগেই পোশাকের রঙ বদলেছে। মহানগর ও জেলাপর্যায়ে দুই রঙের পোশাক দেওয়া হয়। তবে, পুলিশের ইউনিট ও ব্যাটালিয়নভেদে পোশাকের ভিন্নতাও রয়েছে।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রোটেকশন ব্যাটালিয়নের (এসপিবিএন) পোশাক সম্পূর্ণ ভিন্ন রঙের। ২০০৪ সালে পুলিশের পোশাক পরিবর্তন করে  মহানগরে হালকা জলপাই রঙের করা হয়।

জেলা পুলিশকে দেওয়া হয় গাঢ় নীল রঙের পোশাক। র‌্যাবের কালো ও এপিবিএনের পোশাক তৈরি করা হয় খাকি, বেগুনি আর নীল রঙের মিশ্রণে। এসপিবিএনের পোশাকের জামার রঙ করা হয় ধূসর রঙের। প্যান্টও ভিন্ন ভিন্ন রঙের। বর্তমানে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা এসব পোশাক পরেই দায়িত্ব পালন করছেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিরীহ শিক্ষার্থী ও লোকজনের প্রাণহানির ঘটনায় পুলিশ সরাসরি জড়িত। ফলে পুলিশের পোশাকটি দেখলে মানুষের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়। নতুন সরকারের আমলে পুলিশের পোশাক বাতিল করে নতুন পোশাকের জোরালো দাবি উঠেছে। সংস্কার কমিশনও পোশাক পরিবর্তনে মত দিয়েছে।

সংস্কারের অগ্রগতির বিষয়ে কমিশন প্রধান সফর রাজ হোসেন বলেন, আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। জনসাধারণের মতামত নিয়েছি। অংশীজনদের প্রস্তাব পেয়েছি। সবকিছুর পর্যালোচনা চলছে এখন। পোশাক পরিবর্তনের সুপারিশ করা হবে।

কমিশন প্রধান সফর রাজ হোসেন। ফাইল ছবি

সূত্র জানায়, সংস্কার কমিটির প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে, স্বাধীন কমিশন গঠন ও পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত এবং জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত রাখা, ৫ আগস্টের আগে পুলিশ যে ইউনিফর্ম (পোশাক) পরে কলঙ্কিত হয়েছে, তার রঙ পরিবর্তন করা ও কনস্টেবল থেকে আইজি পর্যন্ত একই ড্রেস কোড চালু করা।

কমিশনের প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, শ্রম আইন অনুযায়ী পুলিশ সদস্যদের কর্মসময় আট ঘণ্টা নিশ্চিত করা, রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকে ওভারটাইম হিসেবে গণ্য করা, পরিদর্শকদের থেকে ৬০ শতাংশ এবং ৪০ শতাংশ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সরকারি কর্মকমিশনের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া, জটিলতা নিরসনে সুপারনিউমারারি পদোন্নতি চালু করা এবং ন্যূনতম পুলিশ সুপার পর্যন্ত পদোন্নতির ব্যবস্থা করা।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.