কাব্য-সুজানার মৃত্যু: দুর্ঘটনা নাকি পূর্বশত্রুতা!

পূর্বাচল উপ-শহরের ২নং সেক্টরের ৪নং সেতুর নিচের লেকে সাইনুর রশীদ কাব্য ও তার বন্ধু সুজানা আক্তারের মৃত্যুরহস্য উদঘাটন হয়নি এখনো। তবে তাদের পবিারের সদস্যরা বলছেন, এই মৃত্যু স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। এটি দুর্ঘটনা নাকি পূর্বশত্রুতা তা যেন পুলিশ তদন্ত করে। এই স্বাধীন দেশে খুন, গুম, হত্যা আর চাই না।

কাঞ্চন-কুড়িল বিশ্বরোডের বউরারটেক এলাকায় পূর্বাচল ২নং সেক্টরের ৪নং সেতুর নিচের লেকে বুধবার (১৮ ডিম্বেবর) পাওয়া যায় সাইনুর রশীদ কাব্যর (১৭) লাশ। পাওয়া যায় । এর আগের দিন মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে একই লেকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার হয় সুজানার লাশ। সেসময় লেক থেকে একটি হেলমেট ও ভ্যানেটি ব্যাগও উদ্ধার করা হয়।

মৃত আব্বাস মিয়ার মেয়ে সুজানা তার মা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে রাজধানীর কাফরুল থানার কচুক্ষেত এলাকায় থাকতেন। তিনি ভাষানটেক সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। মেয়েকে নিয়ে ভবিষ্যতের জাল বুনেছিলেন মা চম্পা বেগমের। মায়ের সব স্বপ্ন এক নিমিষেই যেন শেষ হয়ে গেল।

চার বছর আগে সুজানার বাবা মারা গেছেন। বড় ভাই মেহেদী হাসান আহসানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করে চাকরি খুঁজছেন। বাবাহীন সুজানা নিজের পড়ালেখার খরচ চালাতেন টিউশনি করে। একই সঙ্গে জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য উচ্চ মাধ্যমিকের নির্বাচনী পরীক্ষারও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল সুজানার। ছোটবেলা থেকে সাইকেল চালাতে পছন্দ করতেন। মোটরসাইকেল চালানোরও শখ ছিল তার। প্রায়ই বন্ধুদের সঙ্গে বাইকে ঘুরতে বের হতেন সুজানা। তবে, বিজয় দিবসের সন্ধ্যায় কাব্যর সঙ্গে মোটরসাইকেলে ঘুরতে বের হওয়ার কথা জানত না সুজানার পরিবারের সদস্যরা।

বিষয়টি জানত না কাব্যর পরিবারও। তবে কাব্য ও সুজানার বন্ধুত্বের বিষয়ে উভয় পরিবারের সদস্যরা অবগত ছিলেন।

সুজানার মরদেহ উদ্ধার

সুজানার মোবাইলের সূত্র ধরে পুলিশ জানতে পারে, সুজানা ও তার বন্ধু সাইনুর রশীদ কাব্য (১৬) গত ১৬ ডিসেম্বর মোটরসাইকেলে করে ঘুরতে বের হয়ে নিখোঁজ হন। সুজানার মরদেহ উদ্ধারের পর ১৮ ডিম্বেবর বুধবার সকালে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা পূর্বাচলের লেকে তল্লাশি শুরু করেন। উদ্ধার হয় কাব্য ও তার নীল রঙের মোটরসাইকেল। নিহত কাব্য আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র।

ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের ইনচার্জ আবুল খায়ের বলেন, সুজানার সঙ্গে পাওয়া আলামত হেলমেট ও মোবাইলের সূত্র ধরে জানা গেছে তার সঙ্গে কাব্যের বন্ধুত্ব আছে এবং তারা একত্রে নিখোঁজ হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার সকালে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা পূর্বাচলের লেকে তল্লাশি করে কাব্যের মরদেহ খুঁজে পায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে কাব্যর পরিবার। ছেলের মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন অসহায় বাবা-মা। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি কাব্যর বাবা হারুনুর রশীদের।

কাব্যর মা সোনিয়া রশিদ বলেন, কাব্য প্রায়ই মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে যেত। ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায়ও মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয় সে। রাত ৯টার দিকে সর্বশেষ মোবাইলে ছেলের সঙ্গে কথা হয় তার। এরপর থেকে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায় তার। আর ঘরে ফিরেনি কাব্য। সেদিন রাতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি কাব্যের। এজন্য রাজধানীর কাফরুল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়।

সোনিয়া রশিদ জানান, কাব্যের ফুফাতো ভাই আর সুজানা সহপাঠী। একই কোচিংয়ে যাতায়াতের সুবাদে সুজানার সঙ্গে কাব্যের পরিচয় হয়। মাসখানেক হয়েছে তাদের বন্ধুত্ব হয়েছে। সুজানা একাধিকবার আমাদের বাড়িতেও এসেছে। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর যে তারা দুজন একত্রে মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়েছে তা জানতাম না। ওই রাতে কাব্য বাসায় না ফেরায় সুজানার আরেক বন্ধুকেও কল করেছিলাম, কিন্তু সেও তখন কিছু জানতো না।

ছেলের মৃত্যুকে স্বাভাবিক মানতে নারাজ কাব্যের মা সোনিয়া। তিনি বলেন, পুলিশ আমাদের বলছে, ওদের মৃত্যু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় হয়েছে। কিন্তু আমার কাছে এই মৃত্যু স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। আমার দাবি থাকবে, পুলিশ যেন তদন্ত করেন। আসলেই দুর্ঘটনা হয়েছে নাকি অন্য কিছু।

                                                                               কাব্যর লাশ উদ্ধার

সুজানার ভাই মেহেদী হাসান বলেন, সুজানা আর কাব্যের মৃত্যুটা পূর্ব শত্রুতার জেরে হয়েছে কিনা তদন্ত করা দরকার। কাব্যর শত্রু অথবা আমার বোনের কোনো শত্রু এ ঘটনা ঘটাতে পারে। এছাড়া হয়তো অন্য কোনো বন্ধু ওদের একসঙ্গে পেয়ে সন্দেহবশত ওদের মেরে ফেলতে পারে। এখন আমরা চাচ্ছি প্রশাসন সুষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করুক। আমরা সুজানা হত্যার বিচার চাচ্ছি। প্রশাসন যেন এগিয়ে আসে। ফরেনসিক বিভাগ, সিআইডি এটার সুষ্ঠু একটা যেন তদন্ত করে। এই স্বাধীন বাংলাদেশে খুন, গুম, হত্যা এগুলো আমরা এখন আর চাই না।

এদিকে পুলিশের ধারণা, দ্রুত গতির মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে লেকে পড়েই মৃত্যু হয় দুজনের। এরপরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করবে পুলিশ।

নায়ারণগঞ্জ জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল-গ) মেহেদী ইসলাম বলেন, নিহত দুজনের কারও কাছ থেকেই কিছু খোয়া যায়নি। দেখে দুর্ঘটনা মনে হচ্ছে। এরপরও তদন্ত অব্যাহত থাকবে। তাছাড়া আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও সংগ্রহের কাজ করছে পুলিশ।

রূপগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত আলী বলেন, দুই পরিবারের পক্ষ থেকে দুটি মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মরদেহ দুটিও তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.