বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিতে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি গঠন করা হবে। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সচিবালয়ের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত বিশেষ প্রেস ব্রিফিংয়ে আসেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তদন্ত কমিটিতে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, পুলিশ ও স্বশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের রাখা হবে। স্বশস্ত্র বাহিনীর সদস্যের সংখ্যা বেশি হবে। তবে পুনঃতদন্তের বিষয়ে এখনো নিশ্চিত না। এ আদেশ দেয়ার এখতিয়ার আদালতের বলে জানান তিনি। গঠিত কমিটি বিডিআর বিদ্রোহের পুরো ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করবে বলেও জানান উপদেষ্টা।
এর আগে রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে হাইকোর্টকে জানানো হয়, পিলখানার ঘটনায় দুটি মামলা বিচারাধীন থাকায় এ নিয়ে নতুন করে কমিটি গঠন করা হলে বিচারাধীন মামলার সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি হবে।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চকে এ তথ্য জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান।
এর আগে বিডিআর হত্যার পুরো ঘটনার তদন্তে কমিশন গঠন প্রক্রিয়াধীন বলে জানানো হয়েছিল। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর বিডিআর হত্যার পুনঃতদন্তদের দাবি ওঠে।
নেপথ্যের কুশীলবদের খুঁজে বের করতে পিলখানায় শহীদ সেনা সদস্যের পরিবার ও দণ্ড হওয়া বিডিআর সদস্যদের পরিবারও পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়ে আসছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও পুনঃতদন্ত হবে বলে জানিয়েছিলেন।
তবে হঠাৎ করে নতুন কমিটি গঠন থেকে সরে আসার এমন সিদ্ধান্তে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
এ বিষয়ে রবিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্ত বিষয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদনকারীর আজকের একটি বক্তব্য নিয়ে কিছু অস্পষ্টতা সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, সম্প্রতি দায়ের করা রিট মামলায় হাইকোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের আদেশ দেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উক্ত কমিটি গঠন করার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চায়।
আইন মন্ত্রণালয় হাইকোর্ট বিভাগের আদেশের ব্যত্যয় ঘটানোর সুযোগ নেই মর্মে ৩ ডিসেম্বর মতামত দেয়। অর্থাৎ উক্ত কমিটি গঠনের পক্ষে আইন মন্ত্রণালয় মতামত দেয়।
এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি স্মারকে (বা এর নামে প্রচারিত একটি স্মারকে) আপাতত এই কমিটি গঠন করা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়। এতে আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো মতামতের উল্লেখ করা হয়নি বলে জানান এ উপদেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের কমিটি গঠন করার এখতিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের, হাইকোর্টের আদেশ অনুসারেও এটি করার কথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভবিষ্যতে বিডিআর হত্যাকাণ্ড বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে অবশ্যই আইন মন্ত্রণালয় এজন্য সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বলে জানান আসিফ নজরুল। বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি বিডিআর হত্যাকাণ্ডের স্বাধীন একটি তদন্ত প্রয়োজন।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এক পোস্টে লেখেন, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ড দিয়ে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠার যাত্রা শুরু হয়েছিল। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচারের ক্ষেত্রে গড়িমসিকে আমি সন্দেহের চোখে দেখি।’
এরআগে অপর এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, ‘এটা বিডিআর বিদ্রোহ নয়; এটি হলো বিডিআর হত্যাকাণ্ড। এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাই এই হত্যাকাণ্ডের বিচার সবার আগে প্রয়োজন।
এদিকে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিতে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের কার্যালয় ঘেরাওয়ের ঘোষণা
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি দুইদিনে তৎকালীন বিডিআর বর্তমানে বিজিবি সদরদপ্তর পিলখানায় বিদ্রোহের নামে হত্যা করা হয় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে।