পাথর বিক্রি কম, আর্থিক সংকটে মধ্যপাড়া

দিনাজপুরের পার্বতীপুরে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানিতে পাথর বিক্রি। এতে  আর্থিক সংকটে পড়েছে পেট্রোবাংলার অধীন ভূগর্ভস্থ কঠিন শিলা উত্তোলন এই প্রতিষ্ঠানটি।  উৎপাদন খরচের তুলনায় গড়ে ৫০০ টাকা কম দামে কঠিন শিলা বিক্রি করেও প্রতিষ্ঠানটির বিশাল মজুদ কমাতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে ঋণের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

বর্তমানে খনির ইয়ার্ডে প্রায় ৪৩০ কোটি টাকার পাথর মজুদ আছে। চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। বিক্রি বাড়ানোর প্রচেষ্টা ধীরগতি হওয়ায় ও খনি কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারদের বিলসহ কর্মচারীদের বেতন দিতে ঋণ করেছে।

গত সেপ্টেম্বরে পাথর খনির কর্তৃপক্ষ বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) কাছ থেকে ৩০ কোটি টাকা ঋণ নেয় চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামের (জিটিসি) বিল পরিশোধের জন্য।

এই টাকা দুই মাসের মধ্যে পরিশোধের কথা থাকলেও পাথর বিক্রি কম হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি পেট্রোবাংলার কাছে অতিরিক্ত ৪০ কোটি টাকা ঋণ চেয়েছে খনি কর্তৃপক্ষ।

মধ্যপাড়া খনি প্রতি বছর প্রায় দেড় মিলিয়ন টন পাথর উত্তোলন করে। দেশের বার্ষিক চাহিদা দুই দশমিক ১৬ কোটি টন। তবুও পাথর বিক্রি হচ্ছে না। উত্তোলিত পাথরের একটি অংশ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নেওয়ার কথা থাকলেও তারা নিচ্ছে না। ইয়ার্ডে পড়ে থাকছে পাথর। এখন পর্যন্ত প্রায় ১১ লাখ ৬০ হাজার টন পাথর অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে।

ভারত ও ভুটান থেকে কম দামে পাথর আসায় দেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ কঠিন শিলা উত্তোলন প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। অপর্যাপ্ত বিপণন ব্যবস্থা ও উত্পাদন খরচ বেশি হওয়ায় পাথরের বিক্রি কম বলে মনে করছেন অনেকেই।

উত্পাদন খরচ বেশি, বিস্ফোরক আমদানির ওপর ১০০ শতাংশ সিটি ভ্যাট, খুচরা যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জামের ওপর অতিরিক্ত ভ্যাটের পাশাপাশি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো উপকরণে নতুন শুল্কসহ অন্যান্য কারণগুলোকেও দায়ী করা হচ্ছে।

ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়াতেও খরচ বেড়েছে। ঠিকাদারদের বিল ডলারে দিতে হয়।

গত সেপ্টেম্বরে এমজিএমসিএলে যোগ দেওয়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, বিক্রি বাড়াতে চেষ্টা করছি। গত সাড়ে তিন মাসে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করেছি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অনেক চেষ্টার পর বাংলাদেশ রেলওয়ে আড়াই লাখ টন ব্যালাস্ট কিনতে রাজি হয়েছে। তাও বাকিতে। প্রস্তাবটি এখনো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায়।

মধ্যপাড়ার পাথর খনির প্রতি মাসে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা এক দশমিক শূন্য ছয় লাখ টন। গত তিন মাসে তা পূরণ হয়নি। তাই প্রতিষ্ঠানটিকে ঋণের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

চলতি ডিসেম্বর বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

নতুন সরকারি নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন না হওয়া, চলমান প্রকল্পগুলোর নতুন তহবিল বা পাওনা বিল পরিশোধ না করা এবং আমদানি করা পাথরের ওপর শুল্ক কমানোয় মধ্যপাড়া পাথর খনির আর্থিক সংকট আরও বেড়েছে। পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে উৎপাদন দ্বিতীয়বারের মতো উত্তোলন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ঋণ হচ্ছে মধ্যপাড়া পাথর খনির দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার স্বল্পমেয়াদি সমাধান। বিক্রি বাড়াতে এবং দেশীয় ও আমদানি করা পাথরের মধ্যে দামের পার্থক্যের সমাধান প্রয়োজন। সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটি এখন আর্থিক সংকটের ঝুঁকিতে আছে।

মো. ফজলুর রহমান জানান, বিক্রি দ্রুত করতে জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে এতে সময় লাগবে। অন্যদিকে, পাথরের আকৃতি চাহিদা মতো না থাকায় বিক্রি অনেক কমেছে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.