কারখানার বর্জ্যে বিষাক্ত পানি, নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি

কুমিল্লা নগরীর বেশিরভাগ খাল দিয়ে ইপিজেডের রাসায়নিক বর্জ্য প্রবাহিত হচ্ছে

মনোমুগ্ধকর ডাকাতিয়া নদী কুমিল্লার কৃষি ও সেচ ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। তবে কল-কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য পানিতে পরে দূষিত হচ্ছে এই নদীর জীবন। বিষাক্ত পানিতে নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি ও মাছের প্রজনন। কৃষকদের দাবি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) রাসায়নিক বর্জ্য এই পানি নষ্ট করছে। পরিবেশ কর্মীদের মতে খালের পানির উৎস মুখে পরিশোধন না হলে মানুষের জীবন জীবিকা ও জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়বে। তবে ইপিজেড কর্তৃপক্ষের দাবি বর্জ্য পরিশোধনের মাধ্যমে পানি খালে ছাড়া হয়।

জানা গেছে, কুমিল্লা নগরীর বেশিরভাগ খাল দিয়ে প্রবাহিত পানির রং কালো ও ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত। নগরীর এসব খাল ৩টি উপজেলা অতিক্রম করে মিশেছে ডাকাতিয়া নদীতে। একসময় এই খালগুলোতে নৌকা চলত ও মাছ ধরার প্রচলন ছিল। তবে বিষাক্ত এই রাসায়নিক পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ৭৫টি গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।

নগরীর খালগুলো দিয়ে পয়ঃনিষ্কাশনের পানি প্রবাহিত হয়। কুমিল্লা ইপিজেড এর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয় একটি খাল। ফলে সাধারণ মানুষের ধারণা বিষাক্ত এই পানি কুমিল্লা ইপিজেড থেকে নিষ্কাশন হয়। এ নিয়ে অভিযোগ রয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও গ্রামবাসীদের।

সিটি করপোরেশনের পয়ঃনিষ্কাশনের পানি দূষণ ছড়ায়নি দাবি করেন কুসিক কর্মকর্তা। পরিবেশ ও মানুষের জীবন জীবিকা রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন।

পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘টমসম ব্রিজে একটা ইটিভি বসানো হলে এ সমস্যার সমাধান হয়। একটা ইটিভি বসানো হলে যে পানি যায় সেটা বিশুদ্ধ করা যায়।’

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সায়েম ভূইঁয়া বলেন, ‘আগের থেকে অনেক পানি বের হয়। বিশেষ করে ইপিজেডের পানি বের হয়ে ওখানের খাল ও জমিকে অনুর্বর করে তুলছে। ’

ইপিজেডে বিদেশি, দেশি এবং যৌথ মালিকানাধীন ৪৭টি কারখানা চালু রয়েছে। ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর বর্জ্য পরিশোধনাগারটি স্থাপনের পর থেকে রাসায়নিক ও জৈবিক উভয় পদ্ধতিতে প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য পরিশোধন করতে পারে।

২৪ ঘণ্টা তরল বর্জ্য পরিশোধন হচ্ছে দাবি বেপজার। পানির স্বাভাবিক প্রবাহ না থাকায় জমাটবদ্ধ হয়ে বিষক্রিয়া হতে পারে এমনকি একাধিক খালের সংমিশ্রণে পানি দূষণ হতে পারে বলে মত বেপজা কর্মকর্তাদের।

কুমিল্লা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহবুব বলেন, ‘এখানে পুরোপুরি ট্রিটমেন্ট করেই কিন্তু কুমিল্লা ইপিজেডের পানি খালের দিকে যাচ্ছে। এখন কিছু সমস্যা আছে। খালের খননটা শেষে সিটি করপোরেশন এসটিপি স্থাপন করলে কিছু সমস্যা দূর হবে। আর বেপজা চব্বিশ ঘণ্টা মনিটরিং অব্যাহত রেখেছে যাতে তারা কোনো ধরনের ট্রিটমেন্ট ছাড়া পানি ফেলতে না পারে।’

বেপজার পরিচালক মির্জা মোহাম্মদ মনজুর কাদের বলেন, ‘সরকারি যে নিয়ম আছে সে অনুযায়ী ট্রিটমেন্ট করে পানি আমরা খালে ছাড়ি। এখন এই খালের সাথে আরো খালের যোগাযোগ আছে। এগুলো কোথাও কোথাও পানি জমে গন্ধ তৈরি হচ্ছে। ’

বিষাক্ত পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তা প্রতিকারের উদ্যোগ নেয়াই জরুরি।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.