উত্তরে কনকনে ঠাণ্ডা, বিপর্যস্ত জনজীবন

খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা অনেকের

কনকনে ঠাণ্ডা আর হিমেল বাতাসের দাপটে থমকে দাঁড়িয়েছে উত্তরের জনপদ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পঞ্চগড়, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের জনজীবন। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম। নিদারুন কষ্টে রয়েছেন ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, গঙ্গাধর, তিস্তা ও ধরলা নদী তীরবর্তী, চরাঞ্চল ও খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ।

উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত অঞ্চলের এ তিন জেলায় কয়েকদিন ধরেই শীত পড়ছে। ঠাণ্ডার কবল থেকে বাঁচতে খড়কুটোয় আগুন দিয়ে একটু স্বস্তি খুঁজছেন অনেকে।

পঞ্চগড় : সর্ব  উত্তরের এ জেলায় বেড়েছে শীতের প্রকোপ। ঘনকুয়াশার কারণে দুপুরের দিকে দেখা মিলছে সূর্যের। মাঝরাত থেকে বৃষ্টির মতো পড়ছে কুয়াশা। কয়েকদিন ধরে চলা এমন কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। শীতের দাপটে কাবু হয়ে পড়েছে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ। ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ছয়টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ ডিগ্রি ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা  বুধবার সকাল ৯টায় ছিল ১২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তীব্র শীতের কারণে বিপাকে পড়েছেন চা, পাথর, কৃষি শ্রমিক ও স্বল্প আয়ের খেটে খাওয়া মানুষজন। তীব্র ঠাণ্ডায় অনেকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। কয়েকদিন ধরে মাঝদুপুরে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও সন্ধ্যার পর থেকে তাপমাত্রা কমতে থাকে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হয়। শীতে কষ্টে দিন পার করছেন এই জেলার হতদরিদ্র মানুষ।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের চা শ্রমিক রেদোয়ান হোসেন বলেন, কয়েকদিন ধরেই খুব ঠাণ্ডা পড়েছে। আজ আরও বেশি ঠান্ডা। বাইরে বেরোলেই হাত-পা বরফ হয়ে যায়। কাজ করা খুব সমস্যা হইছে।

ভ্যানচালক রবিউল ইসলাম বলেন, ঘন কুয়াশায় কিছু দেখা যাচ্ছে না। কনকনে ঠান্ডার কারণে মানুষ সকালে বের হচ্ছে ন। শীতের কারণে জ্বর-সর্দি, কাশিতেও ভুগছি।

এদিতে শীতের কারণে বেড়েছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগ। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগীদের ভিড়। শিশু ও বয়স্করা সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।


পঞ্চগড়ে কনকনে শীতে বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের সাধারণ মানুষ। ছবি: সংগৃহীত

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সহকারী কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ রায় জানান, হিমালয় অঞ্চল থেকে বয়ে আসা হিমশীতল ঠান্ডা বাতাস বইছে এবং ঘন কুয়াশার আবরণে ঢাকা পড়েছে উত্তরের এ জেলা। তবে তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রির মধ্যেই ওঠানামা করছে ।

লালমনিরহাট : সদর উপজেলার ফুলগাছ গ্রামের ৬৪ বছর বয়সী কৃষি শ্রমিক গোপাল চন্দ্র বর্মণ বলেন, ঠাণ্ডা ও কুয়াশার কারণে রাত ও সকালের দিকে তাদের চরম কষ্ট পোহাতে হচ্ছে তাদের। প্রয়োজনীয় গরম কাপড় না থাকায় রাতে ও সকালে বাড়িতে খড়কুটোয় আগুন ধরিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছেন।

সদর উপজেলার বিশবাড়ী গ্রামের দিনমজুর রফিকুল ইসলাম (৪৫) বলেন, কনকনে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে ফসলের মাঠে কাজ করলেও মাঠে বেশিক্ষণ থাকা যায় না। ঠান্ডা খুব কষ্ট দেয়। ঘরের বাইরে না বেরোলো খাবার জুটবে না তাই এই শীতেও বাইরে যেতে হয়।

                       চুয়াডাঙায় রাস্তার পাশে খড়কুটোয় আগুন ধরিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা : ছবি সংগৃহীত

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় চর মনতলার দিনমজুর সেকেন্দার আলী (৫৫) বলেন, শীত আসলেই আমাদের কষ্ট বাড়ে। ঠাণ্ডার কারণে সকালে বাইরে বেরোতে পারি না। শীতের কাপড় নাই তাই আগুনের তাপই সম্বল।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস জানায়, লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় সরকারিভাবে এক হাজার কম্বল ও নগদ ১৫ লাখ টাকা এবং কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলায় ১ হাজার ৮০০টি কম্বল ও নগদ ২৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বলেন, আরও কম্বলের চাহিদা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.