‘আমরা এহন ভাতেও মরি, শীতেও মরি’

বিধবা আরজু বিবি দিশেহারা,কষ্ট চরমে

‘মানুষ একটু সাহায্য করলে ছোডো-ছোডো পোলাইন লইয়া দিনে দু-এক বেলা খাইতে পারি। পোলাইন লইয়া ভাঙা ঘরডার মধ্যে থাইকা শীতে অনেক কষ্ট পাইতাছি। এহন ভাতেও মরি, শীতেও মরি।’- বলছিলভোলার মনপুরা উপজেলার কলাতলী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের কাজিরচর গ্রামের ৪ সন্তানের জননী বিধবা আরজু বিবি (৩৮)।

তিনি জানালেন, তিন বেলা খেতে না পারার কষ্টের কথা। তার মাথা গোঁজার শেষ সম্বল দো-চালা টিনের ঘরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘুর্ণিঝড় দানার প্রভাবে। এরপর থেকে তার কষ্ট চরমে পৌঁছেছে। তিনি এখন ওই গ্রামের কাচিরচর বাজার মসজিদের উত্তর পাশে বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তার কাছে পৌঁছেনি বিধবা ভাতাসহ সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা।

জানা গেছে, প্রায় ২০ বছর আগে আরজু বিবির বিয়ে হয় ওই একই উপজেলার দিনমজুর আব্দুল মন্নানের সঙ্গে। বসবাস করতেন মনপুরা বিভিন্ন চরের সরকারি জমিতে। তাদের অভাবি সংসার আলোকিত করে জন্ম নেয় মাহফুজ (১৫), জোনায়েদ (১০), জোবায়ের (৬) ও এক কন্যা সন্তান। তার স্বামী মেঘনায় মাছ ধরে কোনোমতে খেয়ে পড়ে দিন কাটত তাদের। গত ৬ বছর আগে তারা ঠাঁই নেয় মনপুরার কলাতলী চরের কাজিরচর গ্রামে মেঘনা নদীর তীরে এক টুকরো জমিতে।

মেঘনায় মাছ ধরে ৬ জনের সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়ায় বাধ্য হয়ে চট্টগামে পাড়ি জমান আরজু বিবির স্বামী আব্দুল মন্নান। যোগ দেন মাঝিরঘাটে শ্রমিক হিসেবে। সেখানে গত ৪ বছর কাজ করে মোটামুটি ভালোই চলছিল তাদের সংসার। বড় ছেলেকে ভর্তি করান একটি মাদরাসায়। এভাবেই চলছিল দিনমজুর আব্দুল মন্নান-আরজু বিবি দম্পতির সংসার।

এর মধ্যে গত বছর অসুস্থ হয়ে পড়েন আব্দুল মন্নান। বন্ধ হয়ে যায় উপার্জন। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে গত চার মাস আগে মৃত্যুবরণ করেন দিনমজুর আব্দুল মন্নান। সংসারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অন্ধকার সাগরে পড়েন এ নারী। তার বড় ছেলে মাহফুজের মাদরাসায় পড়ার খরচের দায়িত্ব নেয় মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে এ নারী ছোট ৩ সন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

আরজু বিবি বলেন, ‘আমার স্বামীরে আল্লাহ লইয়া গেছে, আমি এহন দুঃখের সাগরে ভাসতাছি স্যার। না পারি ছোডো ছোডো পোলাইন লইয়া তিনবেলা খাইতে, না পারি এই শীতের মধ্যে ঘরে থাকতে। প্রায় ১ মাস আগে তুফানের সময় প্রচণ্ড বাতাসে ঘরডাও তছনছ কইররা থুইয়া গেছে। তুফানের পরে ঘরের বেড়া-ও চালের কয়ডা টিন টোগায়া (খুঁজে) আইন্না কোনোমতে দড়ি দিয়া বাইন্দা রাখছি। এবারের শীতে ছোডো-ছোডো ৩ ডা পোলা-মাইয়া লইয়া অনেক কষ্টে আছি। এহন ভাতেও মরি, শীতেও মরি। এলাকার মাইনষে দিলে খাই, না দিলে দিলে পোলাইন লইয়া উপাস থাকি।’

আরজু বিবি আরও বলেন, কোনো সরকারি সাহায্য আমারে কেউ দেয় নাই। আমার একটা বিধবা ভাতা কার্ডও নাই। সরকারের কাছে আমি তিনবেলা খাওয়ার ব্যবস্থাসহ বসতঘরটা মেরামত করে চাই।

আরজু বিবির প্রতিবেশী মাওলানা আরিফুল ইসলাম বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর আরজু বিবি অনেক কষ্টে দিন পার করছেন। আমরা প্রতিবেশী ও গ্রামবাসীরা যতটুকু পারি তাকে সাহায্য করি। প্রতিদিন তো তাকে সাহায্য করা সম্ভব না,আমাদেরও তো সংসার আছে। তাছাড়া ৩ সন্তান নিয়ে তিনি যে ঘরটিতে বসবাস করেন সে ঘরটিও থাকার অনুপযোগী।

এ বিষয়ে মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইদুজ্জামান বলেন, সন্তানদের নিয়ে আরজু বিবির মানবেতর জীবনযাপনের বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। আপনার মাধ্যমে জেনেছি। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। তাকে সব ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা হবে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.