এভারগ্রিন হিরো রজনীকান্ত!

তাঁর কাছে বয়সটা কোনো ব্যাপারই নয়, কেবলই একটা সংখ্যা। বার্ধক্যকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে এ প্রজন্মের অভিনেতাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেভাবে সিনেমার পর্দা কাঁপিয়ে যাচ্ছেন, তা শুধু একজনের বেলায়ই সম্ভব। তিনি আর কেউ নন; ভারতের দক্ষিণী সিনেমার এভারগ্রিন হিরো রজনীকান্ত।

ক্যারিশম্যাটিক পর্দা উপস্থিতির জন্য ভক্তরা যাঁকে সম্মানের জায়গা থেকে ‘থালাইভা’ বলে জানেন। রজনীকান্ত অভিনীত সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘ভেট্টইয়ান’ রেকর্ডের পর রেকর্ড ব্রেক করে যাচ্ছে। ছবিটি মুক্তির প্রথম দিন ৩১ কোটি রুপি আয় করে নিজের খাতা খোলে। দ্বিতীয় দিন ২৪ কোটি। তৃতীয় দিন আরও একটু বেশি– ২৬ কোটি ৭ লাখ। চতুর্থ দিনে ২২ কোটি ৩ লাখ। সুপারস্টার রজনীকান্তের এ সিনেমা যদি একটা সাদামাটা ধরনেরও হতো, তাহলেও দর্শকরা প্রেক্ষাগৃহে ভিড় লাগিয়ে দিতেন। এটা তো একটা বড় বাজেটের ছবি। চার দিনে এ ছবি প্রদর্শন বাবদ ভারত থেকে মোট সংগ্রহ ১২২ কোটি রুপি। দেশের বাইরে থেকে আয় ৬৫ কোটি। আর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ১৮৭ কোটি। ‘ভেট্টইয়ান’ বিশ্বজুড়ে ছয় হাজার পর্দায় প্রদর্শিত হচ্ছে। মুক্তির প্রথম দিনই বক্স অফিসে ঝড় তুলে ছবিটি, যা সিনেমাপ্রেমীদের মনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

সত্তরের কোঠা পেরিয়ে ১৭০তম সিনেমায় এ তারকা নিজেকে যেভাবে ভাঙছেন, সেটার তারিফ না করে পারেননি সমালোচকরা। এ সিনেমায় মূলত নির্মাতা পুলিশের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে বার্তা দিতে চেয়েছেন। ছবিতে রজনীকান্তকে একজন পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় দেখা গেছে। টি জে জ্ঞানভেল পরিচালিত এ ছবিতে আরেক বর্ষীয়ান অভিনেতা বলিউডের শাহেনশাহ অমিতাভ বচ্চনও অভিনয় করেছেন।

বহু বছর পর আবারও পর্দায় দেখা গেল রজনীকান্ত ও বিগ বি জুটিকে। রজনীকান্তের চরিত্রটিকে এনকাউন্টার হত্যার জন্য পরিচিত একজন ট্রিগার-হ্যাপি পুলিশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। যার ওপর অপরাধীকে মোকাবিলা করার দায়িত্ব বর্তায়। অপরাধীকে দেখানো হয়েছে একজন বর্বর মাস্টারমাইন্ড হিসেবে, যে নারীর প্রতি অবমাননাকর কর্মকাণ্ডে জড়িত। ভেট্টইয়ান ঘোষণা করেছেন, ‘অন্যায় ঘটলে নীরব না থেকে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া পুলিশের পক্ষে অন্যায় নয়।’

অমিতাভ বচ্চন অভিনীত সত্যদেব চরিত্রটি এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের বিরোধিতাকারী। যিনি বিশ্বাস করেন যে আইন সবার ওপরে। বিচারক হিসেবে তিনি বলেছেন, ‘বিচার বিলম্ব করার মানে ন্যায়বিচার অস্বীকার করা।’ অ্যাকশন ড্রামাটিক এ ছবিটি আইন প্রয়োগকারী এবং পুলিশ এনকাউন্টারের জন্য তাদের মতাদর্শের সংঘর্ষকে দেখায়। এনকাউন্টার হত্যা ছাড়াও ছবিটি অন্যান্য প্রাসঙ্গিক সামাজিক সমস্যা তুলে ধরে। রজনীকান্ত ও অমিতাভ বচ্চন ছাড়াও এ ছবির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন– ফাহাদ ফসিল, রানা দাগ্গুবতি, মঞ্জু ওয়ারিয়র, ঋতিকা সিং, রোহিনী, রাও রমেশ প্রমুখ।

রজনীকান্ত শুধু একটি নাম নয়, কোটি মানুষের আবেগ! শুধু তামিলনাড়ুতে নয়, গোটা ভারতে তাঁর চলচ্চিত্র মুক্তি একটি উৎসবের চেয়ে কম নয়। বালাচান্দের হাত ধরে ১৯৭৫ সালে ‘অপূর্ব রাগাঙ্গাল’ চলচ্চিত্র দিয়ে কর্মজীবন শুরু হয় তাঁর। ৪৮ বছরের ক্যারিয়ারে কঠোর পরিশ্রম তাঁকে আজ সম্মানের উচ্চ শিখরে নিয়ে গেছে।

বেঙ্গালুরুর এক মারাঠি পরিবারে ১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর তাঁর জন্ম। আচার্য পাঠশালায় পড়ার সময় অভিনয়ের প্রতি তাঁর আগ্রহ বাড়তে থাকে। নাটকের অভিনয়ে প্রচুর সময় ব্যয় করতে থাকেন। এভাবেই একদিন কুরুক্ষেত্র নাটক ‘দুর্যোধন’ চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান তিনি। বিদ্যালয়ের পড়া শেষ করে মাদ্রাজ শহরে কাজ খুঁজতে থাকেন। এমনকি কুলি এবং মিস্ত্রির কাজও করেন এবং সর্বশেষে তিনি বেঙ্গালুরু ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসের বাসের কন্ডাক্টর হিসেবে নিয়োগ পান।

সত্তরের দশকের শেষ এবং আশির দশকের শুরুটা ছিল শুধুই রজনীকান্তের। তখন ‘মুল্লুম মালারুম’, ‘জনি’, ‘থিল্লু মুল্লুর’ মতো চলচ্চিত্রে কমেডি চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পান। একই সময় তিনি হিন্দি সিনেমায়ও অভিনয় করেন। সে সময় তিনি অমিতাভ বচ্চন ও রাজেশ খান্নার সঙ্গে পর্দা শেয়ার করা থেকে ‘ব্লাডস্টোন’ শিরোনামের হলিউড চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

উল্লেখ্য, পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ ও দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে সম্মানিত রজনীকান্ত।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.