দশম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে ইউটিউবে ভিডিও দেখে অনলাইনে আয় করার সিদ্ধান্ত নেন শাকিল মিয়া (২৪)। বোনের পুরাতন ফোন দিয়ে ইউটিউবে টেক কন্টেন্ট বানানোর কাজ শুরু করেন তিনি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাড়ি হওয়ায় ইন্টারনেটের নেটওয়ার্ক ছিলো বড় বাঁধা। একপর্যায়ে গাছের ডগায়, পকেট রাউটার রেখে অনলাইনে কাজ শুরু করেন এই যুবক।
ইউটিউবে কনটেন্ট তৈরি করে অল্প দিনের মধ্যেই আসে সফলতা। তবে, পরীক্ষা চলে আসায় ইউটিউব থেকে দূরে থাকায় কমে যায় শাকিল মিয়ার চ্যানেলের ভিউ। পরে তিনি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে শুরু করেন ওয়েব ডেভেলপের কাজ। বর্তমানে শাকিল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করে মাসে ১ লাখ ৭৯ হাজার টাকা আয় করছেন। এই টাকা দিয়ে নিজের এবং পরিবারের স্বপ্ন পূরণ করছেন তিনি।
শাকিল মিয়ার বাড়ি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার আফাজ উদ্দিন মুন্দিকান্দি গ্রামে। বাবা ইসমাইল মুন্সি কৃষি কাজ করেন। মা সেফালী বেগম গৃহবধূ। তিন ভাই বোনের মধ্যে শাকিল সবার ছোট। এই যুবকের বাড়িতে পৌঁছাতে পাড়ি দিতে হয় বাঁশের তৈরি সাঁকো।
শাকিল মিয়া জাজিরা উপজেলার বি.কে নগর ইউনিয়নের বি.কে নগর পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৬ সালে মাধ্যমিক এবং সরকারি বি.কে. নগর বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে ২০১৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। গত বছর তিনি ঢাকার তেজগাঁও কলেজ থেকে স্নাতক উত্তীর্ণ হন।
পরিবার জানায়, কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই ২০১৫ সালে বোনের পুরাতন ফোন থেকে ইউটিউবে টেক কন্টেন্ট তৈরি শুরু করেন শকিল। সাফল্যও পান তিনি। আয়ের পাশাপাশি ইউটিউব থেকে সিলভার প্লে-বাটনও পেয়ে যান। এসএসসি পরীক্ষা চলে আসায় ৫ মাস কাজ বন্ধ রাখতে হয় তাকে। ফলে ইউটিউবে তার চ্যানেলে ভিউ আসা কমে যায়। পরবর্তীতে ইউটিউবে ফ্রিল্যান্সিংয়ে আয়ের বিষয়ে জানতে পেরেন তিনি। অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে শুরু করেন ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ। এরপর আর কখনোই পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও জার্মানির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করেছেন শাকিল। মাসে তিনি ১ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ঘরে বসেই আয় করেন। এই টাকা নিয়ে তিনি পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তার এমন সাফল্যে খুশি বাবা-মাও।
শাকিলের মা সেফালী বেগম বলেন, ‘এসএসসি পাস করার পর ছেলেকে বিদেশ পাঠাবো বলে ভেবেছিলাম। ছেলে বিদেশ যায়নি। সে বলেছিল ঘরে বসে বিদেশের টাকা ইনকাম করবে। আমার ছেলে ওর কথা রেখেছে। ওর বন্ধুরা যখন বিদেশে যায় টাকা ইনকাম করতে, সে সময়ে আমার ছেলে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড যায় বেড়াতে। আমরা ওকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করি।’
বাবা ইসমাইল মুন্সি বলেন, ‘ছেলে যখন অনলাইনে কাজ করতো ওকে বলতাম পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করতে। শাকিল অনলাইনে কাজ করবে বলে জানায়। বর্তমানে ও নিজের আয় করা টাকা দিয়ে গাড়ি কিনেছে। জায়গা-জমি কিনেছে। আমাদেরকে সাহায্য করছে। আমরা ওর এমন সাফল্যে গর্বিত।’
স্থানীয় যুবক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এলাকার বড় ভাই শাকিল অনলাইন লাখ টাকা আয় করেন। আমি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছি, ইচ্ছে আছে ভাইয়ের কাছ থেকে ফ্রিল্যান্সিং শিখে আমিও টাকা রোজগার করবো।’
শাকিল মিয়া বলেন, ‘আমাদের এই এলাকাটি প্রত্যন্ত একটি অঞ্চল। আমি যখন ২০১৫ সালের দিকে প্রথম অনলাইনে কাজ শুরু করি, তখন নেটওয়ার্ক খুবই সমস্যা করতো। তখন আমার কাছে একটি পকেট রাউটার ছিল। সেটা আমি আমাদের বাড়ির একটি গাছের মাথায় রেখে অনলাইনে কাজ করতাম। পকেটে রাউটার নিয়ে ঘুরতাম। প্রথম আমি যে কাজটি করেছিলাম তাতে ৫০ ডলার পাই ও টিপস হিসেবে অতিরিক্ত ৫ ডলার পাই। বর্তমানে আমি প্রতিমাসে অন্তত ১৫০০ ডলার আয় করি। যা বাংলাদেশি টাকায় অন্তত ২ লাখ টাকার মতো।’
তিনি শিক্ষিত বেকার যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘অনেকেই আমার কাছে আসেন ফ্রিল্যান্সিং শিখতে। আমার ইচ্ছে আছে এ অঞ্চলের শিক্ষিত বেকার যুবকদের বিনামূল্যে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার ইচ্ছা আছে।’