নিরাপদে ঈদ উদযাপনের লক্ষ্যে পুলিশের পরামর্শ

আগামী সোমবার (১৭ জুন) বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। আসন্ন ঈদ নিরাপদে উদযাপনের লক্ষ্যে পশু চুরি বা ডাকাতি রোধে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে নৈশকালীন প্রহরার ব্যবস্থা, ব্যস্ত সড়ক পারাপারে জেব্রা ক্রসিং ব্যবহারসহ নাগরিকদের বেশ কিছু প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ।

এ সংক্রান্ত নির্দেশনার প্রচার করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের পুলিশ সুপার ইনামুল হক সাগর।

পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনায় বলা হয়, কোরবানির পশু পরিবহন ও পশুর হাটের নিরাপত্তা, ফিটনেসবিহীন গাড়িতে কোরবানির পশু পরিবহন করবেন না। অনলাইনে কোরবানির পশু কেনায় সতর্ক থাকুন। কোরবানির পশুবাহী পরিবহন/নৌযানের সামনে পশুর গন্তব্যস্থান/পশুর হাটের নাম লিখে ব্যানার টানিয়ে রাখুন।

ট্রাক, লঞ্চ বা ট্রলারে অতিরিক্ত পশু পরিবহন করবেন না।

কোরবানির পশু চুরি/ডাকাতি রোধে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে নৈশকালীন প্রহরার ব্যবস্থা রাখুন। ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করুন। বড় আর্থিক লেনদেন বা অর্থ বহনের ক্ষেত্রে পুলিশের সহায়তা নিন। কোনো নোট জাল সন্দেহ হলে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে জানান।

কাউকে অজ্ঞানপার্টি, প্রতারকচক্র, চাঁদাবাজ বা অতিরিক্ত হাসিল আদায়কারী সন্দেহ হলে তাৎক্ষণিকভাবে নিকটস্থ পুলিশকে খবর দিন।

যাত্রীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়, পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ঈদের ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন। ভ্রমণকালে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় রাখুন। চালককে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাতে তাগিদ দেবেন না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে বাসের ছাদে কিংবা ট্রাক, পিকআপ ও অন্যান্য পণ্যবাহী যানবাহনে ভ্রমণ করবেন না।

রাস্তা পারাপারে জেব্রা ক্রসিং অথবা ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করুন। যেখানে জেব্রা ক্রসিং বা ফুট ওভারব্রিজ নেই সেখানে যানবাহনের গতিবিধি দেখে নিরাপদে রাস্তা পার হোন। প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নিন। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বেপরোয়া গতিতে কিংবা জয় রাইডিং করবেন না। এতে জীবন বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। অপরিচিত কোন ব্যক্তির নিকট থেকে খাবার খাবেন না।

নির্দেশনায় বাস মালিকদের বলা হয়, লাইসেন্সবিহীন, অদক্ষ, অপেশাদার, ক্লান্ত বা অসুস্থ চালককে যাত্রীবাহী বাস ও গাড়ি চালাতে না দেওয়া। চালক যাতে নিয়ম মেনে গাড়ি চালায় এবং ঝুঁকিপূর্ণ ওভার টেকিং না করে সেজন্য চালককে নির্দেশ দেওয়া। বাসে অতিরিক্ত যাত্রী উঠানো যাবে না। যাত্রীপরিবহনে ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় বের করা যাবে না।

এতে বাস চালকদের বলা হয়, বেপরোয়াভাবে ওভার স্পিডে গাড়ি চালাবেন না, ঝুঁকিপূর্ণ ওভার টেকিং করবেন না। ক্লান্তি বা অবসাদ বা অসুস্থ অবস্থায় গাড়ি চালাবেন না। ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সবসময় সাথে রাখুন। আঞ্চলিক সড়ক/মহাসড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে পুলিশের নির্দেশনা মেনে চলুন।

লঞ্চ/স্টিমার/স্পিডবোটের যাত্রী

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে নৌযানে উঠবেন না। নৌযানের ছাদে যাত্রী হয়ে ভ্রমণ করবেন না। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌযানে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকুন। যাত্রাপথে ঝড় দেখা দিলে এদিক ওদিক ছোটাছুটি না করে নিজের জায়গায় অবস্থান করুন। স্পিডবোটে ভ্রমণের ক্ষেত্রে লাইফ জ্যাকেট পরিধান করুন।

লঞ্চ/স্টিমার/স্পিডবোট মালিক
নির্ধারিত সংখ্যক ও নির্ধারিত গ্রেডের মাস্টার ও ড্রাইভার দ্বারা নৌযান পরিচালনা করুন। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় নৌযানের চলাচল বন্ধ রাখুন। নৌযানের মাস্টার ব্রিজে যাত্রী সাধারণের অবাধ চলাচল বন্ধ করার জন্য দু’পাশ অস্থায়ীভাবে বন্ধ করার ব্যবস্থা করুন। লঞ্চে পর্যাপ্ত বয়া রাখুন।

লঞ্চ/স্টিমার/স্পিডবোট চালক
আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে নৌযান নিয়ে বন্দর ত্যাগ করুন। ডেকের উপর যাত্রীদের বসার স্থানে মালামাল পরিবহন থেকে বিরত থাকুন। নৌযানে পর্যাপ্ত সংখ্যক বয়া/লাইফ জ্যাকেট রাখুন।

যাত্রাপথে ঝড়ের আশঙ্কা দেখা দিলে নৌযান নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিন বা তীরে ভিড়িয়ে রাখুন। নৌযানে মোবাইল ফোন ও রেডিও রাখুন এবং নিয়মিত আবহাওয়ার বুলেটিন শুনুন। প্রয়োজনে আবহাওয়া সংক্রান্ত অ্যাপ ব্যবহার করুন। বৈধ কাগজপত্রবিহীন নৌযান পরিচালনা থেকে বিরত থাকুন। সকল ফায়ার পাম্প ও অগ্নিনিরোধক যন্ত্রপাতির সঠিকতা নিশ্চিত করুন। দুর্ঘটনা কবলিত নৌযান সনাক্তকরণের লক্ষ্যে নৌযানসমূহে ১০০-১৫০ ফুট লম্বা দড়ি সম্বলিত বয়া এবং লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা রাখুন।

ট্রেন যাত্রী
ট্রেনের ছাদে, বাফারে, পাদানিতে ও ইঞ্জিনে ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণ থেকে বিরত থাকুন। ট্রেনে ভ্রমণের সময় পাথর নিক্ষেপ সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। ট্রেনে ভ্রমণকালে মালামাল নিজ দায়িত্বে রাখুন। বিনা টিকেটে ট্রেনে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকুন।

গুজবে বিভ্রান্ত হবেন না। যেকোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পুলিশকে অবহিত করুন। প্রয়োজনে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করুন।

প্রয়োজনে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করুন- ০১৩২০০০১২৯৯, হাইওয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ০১৩২০১৮২৫৯৮, রেলওয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ০১৩২০১৭৭৫৯৮, নৌ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ০১৩২০১৬৯৫৯৮, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ০১৭৭৭৭২০১৯৯ নম্বরে এবং জেলা পুলিশ সুপার ও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.