‘বৈশ্বিক সংঘাতের কারণে রোহিঙ্গা সমস্যা যেন চাপা না পড়ে’
রাশিয়া-ইউক্রেন, গাজায় ইসরাইলের নির্বিচারে হামলাসহ পৃথিবীজুড়ে বর্তমানে ৫৪টি সংঘাত চলমান। এ ধরনের কোনো বৈশ্বিক সংঘাতের কারণে রোহিঙ্গা সমস্যা যেন চাপা না পড়ে যায়। কারণ রোহিঙ্গা সমস্যাও আন্তর্জাতিক সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
সোমবার দুপুরে অ্যান্টিগা ও বারবুডা সফরের বিস্তারিত তুলে ধরতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। এ সময় তিনি ‘বেনজীর আহমেদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। তিনি যে কোনো জায়গায় যেতে পারেন’ বলে মন্তব্য করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সফরকালে সেন্ট জনসে ক্ষুদ্র দ্বীপপুঞ্জের উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের (এসআইডিএস) চতুর্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেয়ার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ যে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়টি আমরা সেখানে উপস্থাপন করেছি।
তিনি বলেন, সম্মেলনে ভার্নারেবিলিটি এবং এডাপটেশনে আমাদের বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছি। আমরা ইউনিভার্সেল আই কেয়ার গ্রুপের সদস্য। বিষয়টির উপর সেখানে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে দেশে মানসম্মত চক্ষু সেবা দেয়ার জন্য ২০০টি আই সেন্টার চালু করা হয়েছে, সম্মেলনে বিষয়টি তুলে ধরা হয়। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমেও আমাদের দেশে ভবিষ্যতে চক্ষু সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছি। একইসঙ্গে দেশে আরো অনেকগুলো আই সেন্টার করার সরকারের যে পরিকল্পনা রয়েছে তা উপস্থাপন করা হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সম্মেলন চলাকালে সাইড লাইনে অনেক দেশের প্রতিনিধির সাথে মন্ত্রীর সাক্ষাৎ ও বৈঠক হয়। তিনটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও অংশ নেন তিনি।
জাতিসংঘে একটি ফলপ্রসূ সফর হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ৩০ মে জাতিসংঘ মহাসচিব এন্টোনিও গুয়েরেসের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সাক্ষাৎকালে জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশী সৈনিকদের ভুয়সী প্রশংসা করেন।
মন্ত্রী বলেন, ৩১ মে ছিল আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষী দিবস। দিবসটি উপলক্ষে জাতিসংঘে বাংলাদেশ ও অস্ট্রিয়া যৌথভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বাংলাদেশী সৈনিকদের ভুয়সী প্রশংসা করেন জাতিসংঘ মহাসচিব এন্টোনিও গুয়েরেস।
ড. হাছান বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা, সমাধানের উপায় এবং সাহায্য সহযোগিতার বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ মিশনের পক্ষ থেকে ৩০ মে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও গাজায় ইসরাইলের নির্বিচার হামলা, এসব কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্পটলাইন থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুটি অনেকটা সরে গিয়েছিল। মূলত রোহিঙ্গা ইস্যুটির স্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সমস্যা যে প্রকট রূপ ধারণ করেছে তা আমরা উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। ওআইসিভুক্ত সকল দেশ ও জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধিরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আইসিজিতে গাম্বিয়ার করা মামলার বিষয়ে আলোচনা হয়। সেখানে রোহিঙ্গা সমস্যা বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ডয়চেভেলের সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন সর্ম্পকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ডয়চেভেলের প্রতিবেদনটি একটি অসাড় এবং অন্তসারশূন্য প্রতিবেদন।
তিনি বলেন, প্রতিবেদনটি কোনো রকম তথ্যউপাত্তের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়নি। জাতিসংঘে আমাদের শান্তিরক্ষীদের যে অবদান তা খাটো করার জন্য প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলে মনে হয়েছে। আমাদের দেশের স্বার্থবিরোধী এবং বাংলাদেশকে হেয় করে, এমন কিছু প্রতিবেদন ডয়চেভেলে মাঝেমধ্যেই প্রকাশ করে। সেখানে কিছু বাঙালি এগুলোর সাথে যুক্ত।
মন্ত্রী আরও বলেন, জাতিসংঘে আমাদের শান্তিরক্ষী বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সাথে, পেশাগত যোগ্যতার সাথে এবং অত্যন্ত সুনামের সাথে বিভিন্ন মিশনে কাজ করছে। জাতিসংঘের মহাসচিবও আমাদের শান্তি রক্ষী ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।জাতিসংঘের শান্তি মিশনে দায়িত্ব ও পালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ১৬৯ জন সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন। তারা অত্যন্ত সুপ্রিম সেক্রিফাইস করেছেন। এটি অত্যন্ত প্রশংসিত হচ্ছে বিশ্বময়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ প্রতিবেদনটির বিষয়ে আরও বলেন, দেশ যেখানে বিশ্বময় প্রশংসিত, জাতিসংঘের মহাসচিব যেখানে প্রশংসা করছেন, সেখানে ডয়েচেবেলের এই প্রতিবেদনের কোনো মূল্য নাই।এগুলো দেশবিরোধী, অন্তসারশূন্য প্রতিবেদন।
সংবাদ সম্মেলনে অপর এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান এদেশে গণতন্ত্রের হত্যা করেছিল। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পেছনে জিয়াউর রহমান ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত ছিল। সে কারণেই খন্দকার মোস্তাক ক্ষমতা গ্রহণের পর জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। সেনাবাহিনীর প্রধান থাকা অবস্থায় জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন। এটি কোনো গণতান্ত্রিক বিধি-বিধান নয়। জিয়াউর রহমানই মূলত গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। আর জিয়াউর রহমানকে হত্যা করেছে তার লোকেরাই।
এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর সাত্তার সাহেব রাষ্ট্রপতি ছিলেন, বেগম খালেদা জিয়া সোয়া দশ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তারা কেন জিয়া হত্যার বিচার করল না? তারা নিশ্চয়ই কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরোবে বলেই হত্যার বিচার করেনি। প্রকৃতপক্ষে জিয়াউর রহমানই গণতন্ত্রের হত্যাকারী।
এ সময় বেনজীর আহমেদ সর্ম্পকে ড. হাছান বলেন, বেনজীর আহমেদের দেশত্যাগে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। তিনি যে কোনো জায়গায় যেতে পারেন। ৬ জুন তিনি (দুদক) হাজির হচ্ছেন কি, হচ্ছেন না সেটি দেখার বিষয়; না কি তিনি সময় নিচ্ছেন! যেহেতু তার দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা কোনো জায়গা থেকে দেওয়া হয়নি, তাহলে তিনি যে কোনো জায়গায় যেতেই পারেন।
বেনজীর-আজিজ আওয়ামী লীগ সরকারের সৃষ্টি বিএনপি’র এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে সরকার দেশ পরিচালনা করছে। দুদক অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে স্বাধীনভাবে কাজ করছে। ফলে এ বিষয়গুলো উঠে এসেছে। আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করছে বিধায় এই বিষয়গুলো উঠে এসেছে। এটা তো অন্য কেউ তুলে আনেনি। সরকার এ ব্যাপারে অত্যন্ত স্বচ্ছ এবং সরকারের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার।
দুদক এবং সরকার স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছে বলে আজিজ আহমেদ ও বেনজীরের বিষয়গুলো সামনে আসছে বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দেশটিকে সময় বাড়ানোর বিষয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে। যারা এই প্রক্রিয়ার গাফিলতিতে জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।