কৃষিতে স্বাবলম্বী হতে ৩০ হিজড়ার চেষ্টা
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ীতে ১০ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে কৃষি কাজ শুরু করছেন কালু নামের এক তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য। একসময় চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে চাল তুলতেন এমন আরও ২৯ জন তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে জমিতে নানা রকমের ফসল ফলিয়ে নিজেদের ভাগ্য বদলের চেষ্টা করছেন তিনি।
তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের এমন কাজের খবর পেয়ে শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বর্গা নেওয়া ওই জমি পরিদর্শনে আসেন গাজীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম খান। এসময় তিনি কালুর সঙ্গে কথা বলে কৃষি কাজে আগামীতে সব ধরনের সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ বছর আগে যেখানে ছিল ইটের ভাটা, সেখানেই ফলছে সোনার ফসল ধানসহ বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি। চলতি বছর কোনাবাড়ীর বাইমাইল এলাকায় ১০ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ধান, পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া, লাল শাক, মুলা, কলমি শাক ও টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ করেছেন তারা। ২-৩ বছর ধরে তারা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে এভাবেই কৃষি কাজ করে আসছেন।
এলাকাবাসী জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী থানাধীন বাইমাইলের বাঁশতলা এলাকায় ৩০ জন তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য রুম ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। তাদের গুরু মা কালু। তার দেওয়া দিক নির্দেশনা মেনে চলেন অন্য ২৯ জন। তারা বিভিন্ন বাড়ি ও দোকানে গিয়ে জিনিসপত্র ও টাকা তুলে নিজেদের প্রয়োজন মেটাতেন। এতে সাধারণ মানুষ তাদের ওপর বিরক্ত হতো। বিষয়টি খারাপ লাগতো তৃতীয় লিঙ্গের এই মানুষদেরও। তাই তারা কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেছেন।
কালু বলেন, দেশের মানুষ দেখুক। আমাদের সহযোগিতা করলে আমরাও কিছু করতে পারি। সমাজের মানুষ সুযোগ দিলে আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি। সরকারিভাবে যদি আমাদের সাহায্য সহযোগিতা করা হয়, তাহলে আমরা কৃষি কাজ করে লাভবান হতে পারবো।
তিনি সরকারের কাছে বাসস্থানের জন্য আহ্বান জানান। বিভিন্ন জায়গায় তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যরা যেভাবে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘর পেয়েছেন সেইভাবে তাদেরকেও যেন ঘর দেওয়া হয় সে আহ্বান জানান তিনি।
গাজীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো.রফিকুল ইসলাম খান বলেন, সমাজের অবহেলিত তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যরা পেশা হিসেবে কৃষিকে বেছে নিয়েছেন এটি একটি ভালো উদ্যোগ। আমরা কালুসহ যারা এই পেশায় যুক্ত হয়েছেন তাদের কৃষি কাজে সহযোগিতা করতে চাই। তাদের নিয়ে কৃষি কাজের ওপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। প্রশিক্ষণ শেষে যেন তারা নিজেরাই চাষাবাদ করতে পারেন সে ব্যবস্থাও করা হবে। আগামী বছর থেকে তাদের ধান বীজ, সার ও কীটনাশক দেওয়া হবে।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- গাজীপুর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাসিবুল হাসান, উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার মুহিদুল ইসলাম, উপ-সহকারী কৃষি অফিসার (কোনাবাড়ী জোন) শরমিন আক্তার প্রমুখ।