“কিশোর অসুখটাকে গুরুত্ব দাও, প্রয়োজনে দেশের বাইরে যাও, আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি”
আপা এই কাজটা হচ্ছেনা….
আপা অমুক বিষয়টা আপনি সমাধান করেন….
আপা তমুক বিষয়টা কিভাবে সমাধান করব বুঝতে পারছি না….
গত কয়েকমাসে দিন নাই, রাত নাইসময়ে অসময়ে কিশোরদার ট্রিটমেন্ট নিয়ে যে মানুষটির সার্বক্ষণিক সাপোর্ট সবথেকে বেশি পেয়েছি তিনি এদেশের কোটি মানুষের গানের পাখি কিংবদন্তী “সাবিনা ইয়াসমিন”! আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষের জন্য এতো পাহাড়সম দায়িত্ব পালন অনেক সহজ হয়েছে তাঁর জন্য! এ প্রসঙ্গে বলতেই হয় গত বছর জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে যখন কিশোর দা একটু একটু অসুস্থ বোধ করছিলেন তখন থেকেই সাবিনা আপা কিশোরদাকে বারবার বলতেন, “কিশোর অসুখটাকে গুরুত্ব দাও, প্রয়োজনে দেশের বাইরে যাও, আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি”
এরপর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত দাদার অসুস্থতার তেমন উল্লেখযোগ্য উন্নতি না হওয়ায় পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল যে তিনি সিঙ্গাপুরে যাবেন ট্রিটমেন্টের জন্য! সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারদের সাথে কথা বলে সবকিছু ঠিকঠাক করে চুড়ান্ত করে দিলেন সাবিনা আপা! এরপর ০৯ সেপ্টেম্বর সকালে কিশোর দা, বৌদি এবং জাহাঙ্গীর সাঈদ ভাই সিঙ্গাপুরে রওনা দেন!
বলার অপেক্ষা রাখেনা এতো ব্যয়বহুল এবং মরণঘাতী অসুখের কোন পূর্ব পরিকল্পনা না থাকা স্বত্তেও ডাক্তারদের পরামর্শে দ্রুত দাদার ট্রিটমেন্ট শুরু হয়! দাদার চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে ডাক্তারদের লড়াই শুরু হলেও বাংলাদেশে প্রকৃত যুদ্ধ শুরু হল আমাদের!
এদিকে দাদা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ কারো সহায়তা নিবেন না, ধীরে ধীরে তাঁর নিজের সর্বস্ব প্রায় শেষ পর্যায়ে! আমরাও নিরুপায়, শুরু হল তাঁকে বাঁচাতে দিন রাত এক করে ছোটাছুটি! যাঁদের মনে মনে পাশে আশা করেছিলাম তাঁদের সবাই একে একে সরে পড়লেন,যে যার বাস্তবতায় ব্যস্ত!
একা আকাশসম দায়িত্ব কিভাবে পালন করব? আবারও পাশে পেলাম সাবিনা আপাকে! ধীরে ধীরে এগোতে শুরু করলাম, কখনো সফল হই তো আবার কখনো নানারকম হোঁচট খেয়ে থেমে যাই! আবার উঠে দাঁড়াই, কি মধ্যরাত বা কি ভোরবেলা যখন যেভাবে চেয়েছি সেভাবেই আপার সহায়তা, পরামর্শ, নির্দেশনা, সমর্থন পেয়েছি!
দাদার চিকিৎসার মাঝপথে সাবিনা আপা নিজেই ছুটে গেলেন সিঙ্গাপুরে, ডাক্তারদের সাথে কথা বললেন, দাদা-বউদির পাশে থেকে এলেন কদিন!
যখন যেখানে আটকে গেছি সেখানেই আপা নিজে দেখভাল করেছেন! যাঁরা এই মরণঘাতী অসুখের ভুক্তভোগী শুধু তাঁরা এবং তাঁদের পরিবারই ভালো জানেন এই পরিস্থিতিতে কিভাবে চরম উৎকন্ঠা আর দুঃশ্চিন্তায় এক একটি মুহুর্ত কাটে! মাঝেমাঝে ডাক্তারদের কথা এবং দাদার শারীরিক পরিস্থিতি শুনে নানারকম দুঃশ্চিন্তা পেয়ে বসেছে! আপা নিজেও ভুক্তভোগী ছিলেন বলেই আমাদের সাহস যুগিয়েছেন, বুঝিয়েছেন এমন পরিস্থিতিতে কি কি হয়!
একজন এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসায় একজন সাবিনা ইয়াসমিন এর ভূমিকা এবং সর্বাত্মক সমর্থনের ঋণ কখনো শোধ করা যাবেনা! আপা আপনিও সুস্থ থাকুন সবসময় সেই দোয়া করি সবসময়! সর্বোপরি কিশোরদার সুস্থতার জন্য দোয়া এবং সমর্থন চাই সবার কাছে।
মোমিন বিশ্বাস,
কণ্ঠশিল্পী,
এন্ড্রু কিশোরের স্নেহভাজন।