ভাইকে ত্যাজ্য করলেন মমতা
লোকসভা নির্বাচনের টিকিট কোন্দলে এবার নিজের ভাইকে ত্যাজ্য ঘোষণা করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
লোকসভা নির্বাচনের টিকিট না মেলায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় (বাবুন)। জল্পনা ছিল বিজেপিতে যোগদান করছেন তিনি। এমনকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্ধারিত হাওড়ার প্রার্থী ফুটবলার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নির্দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেন স্বপন। এর পরই বুধবার (১৩ মার্চ) শিলিগুড়ির প্রশাসনিক ভবন উত্তরকন্যায় সংবাদ সম্মেলনে করে ভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে বাবুনের সঙ্গে সব সম্পর্ক ত্যাগ করার কথা জানিয়ে দেন মমতা।
সংবাদ সম্মেলনে মমতা বলেন, লোভীদের পছন্দ করি না।
ভাইয়ের প্রসঙ্গে মমতা বলেন, আমি যে দিন থেকে দল করি, কোটি কোটি মানুষের সঙ্গে কাজ করি। আমার পরিবার বলে কিছু নেই। মা, মাটি, মানুষই আমার পরিবার। আমাদের পরিবারে রক্তের সম্পর্কে ৩২ জন সদস্য। কেউ এ রকম নয়। এতে সবাই ক্ষুব্ধ।
মমতা আরও বলেন, আমি সরাসরি বলছি, যারা বেশি বড় হয়ে যায়, তাদের লোভও বেড়ে যায়। ওকে পরিবারের সদস্য বলেই আমি মনে করি না। সব সম্পর্ক ছেদ।
ভাইকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ওর অনেক কাজই আমি অনেক দিন ধরে পছন্দ করি না। কিন্তু সব কথা তো বাইরে বলা যায় না। আজ বলছি। যে যেখানে খুশি যেতে পারে। স্বাধীন ভাবে ভোটে দাঁড়াতে পারে। তবে হাওড়া সদরে তৃণমূলের প্রার্থী, জোড়াফুলের প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ই। অন্য কেউ নয়।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতার ভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিতে যোগদান করছে এমন জল্পনা তুঙ্গে ওঠে।এরই মধ্যে আচমকাই স্বপন দিল্লি চলে যাওয়ায় সেই জল্পনা আরও বেশি করে দানা বাঁধে।
বাবুন নিজে এক পরিচিতের চিকিৎসার জন্য দিল্লিতে এসেছেন বলে জানালেও বিভিন্ন রাজনৈতিক সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছিল, দিল্লিতে গিয়ে স্বপন দেখা করবেন অলিম্পিক সংস্থার প্রাক্তন সহ-সভাপতি নরেন্দ্র বাত্রার সঙ্গে, যিনি বিজেপির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
বুধবার সমস্ত জল্পনা অপ্রাসঙ্গিক বলে জানিয়ে দেন স্বপন। তবে অসন্তোষ প্রকাশ করে এটাও স্পষ্ট করেন যে দলের প্রার্থী তালিকা নির্ধারণে তার মতামতের গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে টিকিটের দাবিদার ছিলেন, অথচ টিকিট পাননি, এমন অনেকেই তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর ক্ষোভ গোপন করতে পারেননি। তবে মমতার ঘরেই এই বিক্ষোভের আগুন প্রকাশ্যে আসতেই তা আলাদা মাত্রা পায়।
হাওড়ায় তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে এবারও টিকিট পেয়েছেন প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই প্রসূনের বিরুদ্ধেই নানা অভিযোগ নিয়ে আসরে নামেন ভাই স্বপন ওরফে বাবুন। ঘোষণা দেন হাওড়ায় নির্দল হয়ে ভোটে লড়বেন তিনি।
প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন তাও গোপন করেননি স্বপন। বললেন, যে মানুষটা হাওড়ায় প্রার্থী হয়েছেন, সেই প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় মোহনবাগান ক্লাবের এজিএমের সময় আমাকে গলাধাক্কা দিয়েছিলেন। আমাকে অপমান করেছিলেন। তাঁকে নিয়ে আমার প্রচুর অ্যালার্জি আছে। হাওড়ার মানুষ ওঁকে মেনে নিচ্ছেন কি না জানি না। কিন্তু আমি বলতে পারি, এই প্রার্থী ঠিক হয়নি।
বাবুনের অভিযোগ, এমপি ল্যাডের টাকা এলাকার মানুষের জন্য ঠিকমতো খরচ করতে পারেননি প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। কাজ হয়নি বলে মানুষের মধ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতাও নেই। তাঁর থেকে অনেক যোগ্য প্রার্থী হাওড়ায় রয়েছে।
বেসুরো গাইলেও দল ছাড়ার কথা তিনি ভাবছেন না বলেও জানান স্বপন। বলেন, আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যাইনি কখনও, যাব না। ১৯৮১ সাল থেকে দলের সঙ্গে জড়িয়ে। কখনও দলের বিরুদ্ধে যাইনি। দিদিকে বলে, দিদির আশীর্বাদ নিয়েই ভোটে দাঁড়াব।
ভাইয়ের এবং বিদ্রোহী আচরণ প্রসঙ্গে হতাশা ব্যক্ত করে মমতা বলেন, প্রতিটি নির্বাচন এলেই বাবুন অশান্তি করেন। অনেক অশান্তি সহ্য করেছি , আর করবো না।
কিছুটা আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, আমাদের বলা উচিত নয়। কিন্তু অভিষেককে বলছিলাম যে বাবা যখন মারা গিয়েছে, তখন ওর বয়স আড়াই। আমি ৪৫ টাকা পেতাম। দুধের ডিপোয় কাজ করে মানুষ করেছি। কিন্তু তখন থেকে রাজনীতিটা করতাম বলে ওকে হয়ত মানুষ করতে পারিনি।
এদিকে ভাইয়ের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী কড়া অবস্থান নেওয়ার পরেই দ্রুত নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেন স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে বাবুন। ঘোষণা দেন, এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছে না তিনি। তিনি শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই হয়েই থাকতে চান।