আমেরিকার ডেঙ্গু টিকার সফল পরীক্ষা বাংলাদেশে
ডেঙ্গু নিয়ে সারাদেশে আতঙ্কের মধ্যেই পাওয়া গেল একটি সুখবর। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআর,বি) বিজ্ঞানীরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে অবিষ্কার করা টিভি০০৫- টিকার বাংলাদেশে পরীক্ষা সফল হয়েছে। এটি দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা। ভারতে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা সফল হলে এই টিকা বাজারে আসবে।
বাংলাদেশে পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই টিকার এক ডোজ ডেঙ্গুর চারটি ধরনের জন্যই কার্যকর হবে। এমনকি এটি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রয়োগের জন্য নিরাপদ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম।
আইসিডিডিআর,বির বিজ্ঞানীরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের (এনআইএইচ) অবিষ্কার করা টিকা নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো পরীক্ষা চালানো হয়েছে। ডেঙ্গুর চারটি ধরন ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ এবং ডেন-৪-এর ক্ষেত্রে প্রয়োগের জন্য এই টিকা নিরাপদ।
গবেষকরা বলছেন, ডেঙ্গু টিকা আবিষ্কারে এনআইএইচ প্রথম প্রতিষ্ঠান নয়। এর আগে সানোফি ফার্মাসিউটিক্যালস এবং তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যালস টিকা তৈরি করেছে। সানোফির টিকা তিনটি আলাদা ডোজের এবং এটি ৯ বছরের কম বয়সী শিশু, যারা আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে, তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যালসের ডেঙ্গুর টিকা দুই ডোজের। এই টিকা ডেঙ্গুর মাত্র একটি ধরনের ক্ষেত্রেই কার্যকর বলে জানিয়েছেন আইসিডিডিআর,বির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী রাশিদুল হক। তিনি বাংলাদেশে টিকা পরীক্ষায় যুক্ত দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন।
তিনি বলেন, টিভি০০৫- টিকা নিয়ে এর আগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রাজিলে পরীক্ষা চালানো হয়েছে। দুই দেশেই প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা হয়েছে।
রাশিদুল হক বলেন, যে কোনো টিকা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়ু এই তিন ধাপে পরীক্ষা করা হয়। প্রথম ধাপে দেখা হয় টিকাটি মানুষের দেহে প্রয়োগের জন্য নিরাপদ কিনা। দ্বিতীয় ধাপে দেখা হয় টিকার নিরাপত্তা এবং এটির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির সক্ষমতা। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় এটির কার্যকারিতা দেখা হয়। অর্থাৎ যাদের ওপর টিকা পরীক্ষা করা হয়, তাদের মধ্যে কেউ আবারও আক্রান্ত হয় কিনা।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যে ট্রায়াল বা পরীক্ষা হলো, সেটি শুধু দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা। অর্থাৎ এই টিকার নিরাপত্তা এবং এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে কিনা, সে বিষয়টিই পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে।
ট্রায়ালের আওতায় ২০১৫ সাল থেকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ে পড়াশোনাসহ পরীক্ষা চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা তৈরি করা হয়। ২০১৬ সাল থেকে টিকার দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু হয়। এর আওতায় গবেষকরা ১ থেকে ৪৯ বছর বয়সী ১৯২ জনের ওপর টিকা প্রয়োগ করেন এবং পরবর্তী তিন বছর ধরে তাদের পর্যবেক্ষণ করেন। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সবাই স্বেচ্ছায় এতে অংশ নেন এবং তাদের দৈবচয়ন পদ্ধতিতে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচন করা হয়। টিকা দেওয়ার আগে তাদের চারটি ভাগে ভাগ করা হয়। তাদের মধ্যে এর আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেনু এমন ব্যক্তিও ছিলেন। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা ভারতে চলতি মাসে শুরু হওয়ার কথা।
আইসিডিডিআর,বির গবেষকরা বলছেন, তিন বছর ধরে পর্যবেক্ষণের পর তারা দেখতে পান টিকা গ্রহণকারী বেশির ভাগের দেহে ডেঙ্গুর চারটি ধরনের বিরুদ্ধেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। যারা এর আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের দেহে এই অ্যান্টিবডির মাত্রাও বেশি পাওয়া গেছে।
এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই প্রথম পরীক্ষা করা হলো। যাদের ওপর টিকা প্রয়োগ করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে গুরুতর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। কারও কারও শরীরে র্যাশ, জ্বর, মাথাব্যথার মতো উপসর্গ ছিল। টিকা গ্রহণকারীদের ২৮ শতাংশের মধ্যে র্যাশ ছিল, যা তিন-চার দিনের মধ্যে মিলিয়ে গেছে। রাশিদুল হক বলেন, ‘ক্যাপাবিলিটি থাকলে আমাদের দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলোও এটি তৈরি করতে পারবে। টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আশানুরূপ ফল পাওয়া গেলে সেটি উৎপাদনের জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা-এফডিএ, বাংলাদেশের ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর-বিজিডিএ ইত্যাদির মতো সংস্থা এই অনুমোদন দিয়ে থাকে।’