কেমন ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা-নায়ক জাফর ইকবাল?
বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে স্টাইলিশ নায়কদের একজন জাফর ইকবাল। ছিলেন সংগীতশিল্পীও। অকালমৃত্যু ঘটেছিল তার জীবনে। মাত্র ৪২ বছর বয়সে মারা যান তিনি। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯২ সালে ৮ জানুয়ারি পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন জাফর ইকবাল। গতকাল ছিল তার ২৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী। কিন্তু চলে যাওয়ার প্রায় তিন দশক পরেও বাংলার সিনেমাপ্রেমী মানুষ ভুলতে পারেনি তাকে।
শুধু অভিনয় বা গান নয়, ব্যক্তিত্বের আবেদন, পোশাকে নতুনত্ব, নিজস্ব স্টাইল সব মিলিয়ে জাফর ইকবাল ছিলেন অনন্য। সময়ের তুলনায় তিনি ছিলেন অনেকটাই এগিয়ে।
১৯৫০ সনে জন্ম নেয়া জাফর ইকবাল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের আগেই তিনি চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। তার অভিনীত প্রথম ছবির নাম ‘আপন পর’। এই ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন কবরী। জাফর ইকবাল অভিনীত শেষ সিনেমার নাম ‘লক্ষ্মীর সংসার’। সে ছবিতে একটি সংলাপ ছিলো এমন- ‘ভাই আজিমপুর যাবো কীভাবে?’ এখনো জাফর ইকবাল ফ্যানদের কানে বাজে তার বলা সেই সংলাপ। ছবিটি মুক্তির কিছুদিন পরই চলে যান জাফর ইকবাল।
জাফর ইকবাল ১৯৬৬ সালে একটি ব্যান্ড দল গড়ে তোলেন। সিনেমায় তার প্রথম প্লে-ব্যাক করা গান ছিল ‘পিচ ঢালা পথ’। তার গাওয়া “হয় যদি বদনাম হোক আরো ” গানটি একসময় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। তিনি ভালো গিটারবাদকও ছিলেন। জাফর ইকবাল গিটার বাজিয়ে খুব ভালো ইংরেজি গান গাইতে পারতেন।
উল্লেখ্য জয় বাংলা বাংলার জয়, একবার যেতে দে না, একতারা তুই দেশের কথা ইত্যাদি গানের সুরকার আনোয়ার পারভেজ তার ভাই এবং এক নদী রক্ত পেরিয়ে, একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়ে, একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল্, প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ, আমায় যদি প্রশ্ন করে, যে ছিল দৃষ্টির সীমানায় ইত্যাদি গানের গায়িকা শাহনাজ রহমতুল্লাহ তার বোন।
জাফর ইকবাল ১৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। যার বেশিরভাগই ছিল ব্যবসা সফল।
ববিতার সঙ্গে তার জুটি ছিল দর্শক নন্দিত। তার সাথে জনপ্রিয় অভিনেত্রী ববিতা জুটি হয়ে প্রায় ৩০টির মত ছবি করেন। এই জুটির বাস্তব জীবনে প্রেম চলছে বলেও গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। তাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ায় হতাশ হয়ে জাফর ইকবাল অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জোর গুঞ্জন উঠেছিল।
জাফর ইকবাল সনিয়া নামের জনৈক নারীকে বিয়ে করেন। অনেকে মনে করেন, পারিবারিক অশান্তির কারনে তিনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। পরবর্তীকালে মদ্য পানসহ অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। যার ফলে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তার হার্ট এবং কিডনি নষ্ট হয়ে যায়।