ইউক্রেনকে গুচ্ছবোমা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে, ইউক্রেনীয় বাহিনীকে ‘ক্লাস্টার বোমা’ বা গুচ্ছবোমা সরবরাহ করবে তারা। তবে মানবাধিকারগোষ্ঠীগুলো নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এই ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার বেসামরিক নাগরিকদের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। ১২০টিরও বেশি দেশ এই বোমার ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য ২০০৮ ইউএন কনভেনশন অন ক্লাস্টার মিনিশনে স্বাক্ষর করেছে।

গুচ্ছবোমাগুলো বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে প্রচুর পরিমাণে বোমা ফেলে দেয় এবং বিস্ফোরকগুলো উভয় ক্ষেত্রেই বেসামরিক নাগরিকদের জন্য একটি বড় হুমকি।

কারণ কিছু বোমা অবিস্ফোরিত অবস্থায় থেকে যায়।
হোয়াইট হাউস বলছে, অবিস্ফোরিত বোমা থেকে সৃষ্ট বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকির কারণে যত দিন সম্ভব তারা সিদ্ধান্তটি স্থগিত রেখেছিল। অস্ত্র ও গোলাবারুদের ঘাটতি থাকায় ইউক্রেন গত কয়েক মাস ধরেই সাহায্য চেয়ে আসছে। বিশ্বের শতাধিক দেশ এই গুচ্ছবোমার ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।

এটি এমন এক ধরনের যুদ্ধাস্ত্র, যাতে একাধিক বোমা থাকে, যা সাবমিউনিশন নামে পরিচিত।
হোয়াইট হাউসের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক জ্যাক সুলিভান বলেন, বেসামরিক নাগরিকদের যেকোনো সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি প্রশমিত করার জন্য ইউক্রেন যুদ্ধোত্তর নিরস্ত্রীকরণ প্রচেষ্টার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অস্ত্র সরবরাহ করুক বা না করুক, নির্বিশেষে এটি প্রয়োজনীয় হবে, কারণ রাশিয়া গুচ্ছ অস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার করছে।

তিনি বলেন, ইউক্রেন বিদেশি ভূমিতে এই যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করবে না। এটা তাদের দেশ, যা তারা রক্ষা করছে।

সুলিভান ব্যাখ্যা করেন, ইউক্রেনের গোলা-বারুদ ফুরিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের একটি সরবরাহ সেতু প্রয়োজন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র দেশীয় উৎপাদন বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, এই সংঘাতের সময় আমরা ইউক্রেনকে কোনোভাবেই অরক্ষিত রাখব না
মার্কিন কর্মকর্তারা ইউক্রেনে গুচ্ছ যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহে দ্বিধায় রয়েছে, কারণ এসব অস্ত্র বিস্তৃত অঞ্চলে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালাতে পারে এবং বেসামরিক নাগরিকদের জন্য হুমকি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এই গুচ্ছবোমার মজুদ রয়েছে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রথম তৈরি করা হয়েছিল।

গুচ্ছবোমা বিতর্কিত। কারণ, এগুলো মাটিতে পড়ে প্রায় সময়ই বিস্ফোরণ ঘটে না।

আর বিস্ফোরণ না হলেও বহুদিন পর্যন্ত সক্রিয় থাকে এবং পরে ফাটার ঝুঁকি থেকে যায়। সুলিভান সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গুচ্ছ যুদ্ধাস্ত্রের ব্যর্থতার হার আড়াই শতাংশের কম। রাশিয়ার গুচ্ছ যুদ্ধাস্ত্রের ব্যর্থতার হারের চেয়ে এর ব্যর্থতার হার যতটা সম্ভব কম বলে বর্ণনা করেন তিনি।
যেসব গুচ্ছবোমা অবিস্ফোরিত থেকে যাওয়ার হার বা ব্যর্থতার হার ১ শতাংশের বেশি-অর্থাৎ যে গুচ্ছবোমার ১ শতাংশের বেশি ছোট বোমার বিস্ফোরণ ঘটে না, সেগুলো অন্য দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের আইনে নিষেধাজ্ঞা আছে। তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই বিধি উপেক্ষা করতে সক্ষম।

পেন্টাগন উল্লেখ করছে যে রাশিয়া ইতোমধ্যে যেসব গুচ্ছবোমা ইউক্রেনে ব্যবহার করছে, সেগুলোর ব্যর্থতার হার আরো বেশি। জাতিসংঘের একটি তদন্তে দেখা গেছে যে ইউক্রেন সম্ভবত সেগুলোও ব্যবহার করেছে, যদিও দেশটি তা অস্বীকার করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কর্মকর্তারা ইউক্রেনে আর্টিলারি শেল পাঠানোর পরিকল্পনা করছে, যার প্রতিটিতে ৮৮টি পৃথক বম্বলেট থাকবে। ইউক্রেনের সেনাদের মোতায়েন করা হাউইটজার কামান থেকে এসব শেল ছোড়া হবে।

মানবাধিকারগোষ্ঠীগুলো রাশিয়া ও ইউক্রেনকে গুচ্ছ অস্ত্র ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে সেগুলো সরবরাহ না করতে আহ্বান জানিয়েছে। শুক্রবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার অফিস আবারও দেশগুলোকে গুচ্ছবোমা ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়েছিল এই যুক্তি দিয়ে যে এসব বোমা বিপজ্জনক।

ইউক্রেনকে দিতে যাওয়া বাইডেন প্রশাসনের নতুন সামরিক প্যাকেজ ৮০০ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের বলে জানা গেছে। কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানান, এই প্যাকেজের মধ্যে আরো থাকবে যুদ্ধযান ব্র্যাডলি ও স্ট্রাইকার, আকাশ-প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র।

সূত্র : বিবিসি

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.