‘দেশে গাড়ি তৈরির কারখানা করুন’
গাড়ি ব্যবসায়ীদের আমদানি-নির্ভরতা কমিয়ে দেশে গাড়ি তৈরির কারখানা স্থাপন করতে বললেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় ব্যবসায়ীদের প্রতি তিনি এ আহ্বান জানান।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘গাড়ি আনবেনই (আমদানি করবেন) শুধু? আমরা মধ্যম আয়ের দেশে যাবো বলছি। আবার আপনারা গাড়িও আনতে থাকবেন। আপনারা গাড়ি কবে বানাবেন? ২০৩০ সাল পর্যন্ত আপনাদের সুযোগ দিচ্ছি, তাড়াতাড়ি বানান।’
গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডা, রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ), চামড়া খাতের সংগঠন বিটিএ ও এলএফএমইবির নেতারা প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নেন। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে সভায় সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বৈদ্যুতিক গাড়ির ওপর কর ছাড়ের সুবিধা দাবি করে বারভিডা। ক্রেতার প্রথম ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ চেয়েছে রিহ্যাব। ফ্ল্যাট ও প্লট রেজিস্ট্রেশনে সংশ্লিষ্ট কর ও সর্বোমোট ফি ৭ শতাংশ করা, আবাসন খাতে বিদ্যমান মূসক হ্রাস, গৃহায়ন উদ্যোক্তাদের আয়কর হ্রাস করার প্রস্তাব দেয় রিহ্যাব। অপরদিকে গরু, মহিষের মাংস আমদানিতে উচ্চ হারে শুল্ক-কর আরোপ, সুপারাইজড বন্ডের আদলে বিশেষ ব্যবস্থায় কেমিক্যাল আমদানির সুযোগ চেয়েছে বিটিএ।
ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব শুনে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘অ্যাসেম্বলিং করার শিল্প নিয়ে যদি বসে থাকি, তাহলে গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ আমরা মোকাবিলা করতে পারবো? সেই জায়গাটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। একসময় টেলিভিশন আনতে আনতে (আমদানি করতে) টেলিভিশন বানানো শুরু হয়ে যায়। আপনারা গাড়ি আনতে আনতে গাড়ি বানাচ্ছেন কবে? আমরা গ্র্যাজুয়েশন করবো, উন্নত দেশ হবো, ইমপোর্ট করবো কিংবা পুরান গাড়ি আমদানি করবো, সেটা কেন হবে। চ্যালেঞ্জ আনেন (গ্রহণ করেন), দুই-একজন এগিয়ে আসেন, নতুন গাড়ি বানান। সেই গাড়ি আমরা রফতানি করবো।’
বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জিং স্টেশন রাজস্ব বোর্ডের চিন্তার মধ্যে আনতে হবে উল্লেখ করে আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘বৈদ্যুতিক গাড়ির আমদানি ও ব্যবহার বাড়ছে। একইসঙ্গে গণপরিবহনে সাপোর্ট দেওয়ার বিষয়টিও আমাদের মাথায় রয়েছে। প্রচুর রাস্তা-ঘাট হয়েছে। গণপরিবহন যত ব্যবহার হবে মানুষের মবিলিটি (গতিশীলতা) তত বাড়বে। আপনাদের প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করবো। হাইব্রিড গাড়ির কথা যেগুলো বলছেন, সেগুলো আসলে হাইব্রিড কিনা— এই প্রশ্ন দেখা দেয় মাঝেমধ্যে। হাইব্রিডের যে ক্লাসিফিকেশন আমরা করছি, যে প্যারামিটার আমরা করছি, সেই প্যারামিটার আসলে হাইব্রিডের পারপাস সার্ভ করে কিনা। আমি নিজেও শুনেছি, ইটস নট ফুল হাইব্রিড। যেটাকে হাইব্রিড আমরা বলছি, সেটা পুরোপুরি হাইব্রিড নয়।’
তিনি বলেন, ‘হাইব্রিডের প্যারামিটার আমাদের দেখতে হবে। হাইব্রিড গাড়ি হলে সেটি আমরা উৎসাহিত করি। কিন্তু শুধু স্টার্ট বা অন্য সময় ইলেকট্রিক, তারপর নরমাল— এটা তো হাইব্রিড, ওইভাবে আমরা আর যাবো না।’
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘হাইব্রিড ও ইলেকট্রিক গাড়িকে সাপোর্ট দিতে হবে কেন? আপনারাই বলছেন, এই ধরনের গাড়ি ছাড়া আর কোনও পথ নেই। সাপোর্ট না দিলেও এই গাড়িই সামনে আমরা পাবো। হাইব্রিড গাড়িতে যেহেতু খরচ কম হয়, সেখানে আমরা সুবিধা না দিলেও চলবে। সত্যিকার অর্থে হাইব্রিড গাড়ির মাইলেজ খরচ কম। তাকে ইনসেনটিভ দিতে হবে না, এটা আসবে। আসতেই হবে। এই ধরনের গাড়ি আমরাও চাই। এ জন্য ডিউটি স্ট্র্যাকচারে কোনও লোড আছে কিনা সেটা আমরা দেখবো।’
তিনি বলেন, ‘বন্ডের অপব্যবহার রোধ আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। সুবিধার বদলে অপব্যবহার দেশের অর্থনীতিতে কী ক্ষতি করছে সেটা দেখার আছে। এটার অপব্যবহার বন্ধ না হলে সৎ ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমাদের বন্ড অটোমেশন প্রজেক্ট চলছে। এ বছরেই সবগুলো মডিউল অপারেশনাল হবে।’