২০২১ ও ২০২২ সালের জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন তালিকা প্রায় চূড়ান্ত। বাছাই উপ-কমিটি কর্তৃক সুপারিশকৃত তালিকা নিয়ে ২৪ জানুয়ারি চূড়ান্তকরণ কমিটির সভা হয়েছে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপির সভাপতিত্বে।
ওই সভায় তালিকা চূড়ান্ত করার লক্ষ্য থাকলেও হয়নি। কমিটির কয়েকজন সদস্য নতুন করে কিছু নাম প্রস্তাব করায় তালিকা চূড়ান্তকরণের জন্য আরেকটি সভা লাগতে পারে বলে সোমবার জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি।
তবে সহসাই তালিকা চূড়ান্ত হয়ে যাবে। কারণ, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের একটা তারিখও করে রেখেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘৬ এপ্রিল ক্রীড়া দিবসে আমরা জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদান করবো, সেই লক্ষ্য নিয়েই এগুচ্ছি। এখন প্রধানমন্ত্রী ওই দিনে পুরস্কার প্রদানে সম্মতি দিলেই সেটা চূড়ান্ত হবে। নতুন করে কিছু নাম অন্তর্ভূক্ত হওয়ায় আমাদের আরেকটি সভা করতে হবে। তারপর তালিকা চূড়ান্ত করে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য পাঠাবো।’
২০২১ ও ২০২২ সালের জন্য ২০ থেকে ২২ জনের মতো ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠককে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হবে বলেও জানিয়েছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী, ‘এখন যে তালিকাটা আছে সেটা আরও ছোট করতে হবে। আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত হলো, পুরস্কারের জন্য মনোনীত ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক সর্বনিন্ম হবে ২০ জন এবং সর্বোচ্চ ২২ জন। ’
গত বছর একসঙ্গে ৮ বছরের জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদান করা হয়েছিল। ১১ মে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৮ বছরের জমে থাকা ৮৫ জনকে একসঙ্গে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছিল। এভাবে পুরস্কার জমে থাকা ভালোভাবে নেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ওই অনুষ্ঠানেই নির্দেশ দিয়েছিলেন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার যেন নিয়মিত প্রদান করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ২০২১ ও ২০২২ সালের জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদানের জন্য উদ্যোগ শুরু করতে এক মাসের বেশি সময় নেয়নি। গত জুন মাসেই ক্রীড়া পুরস্কারের জন্য আবেদন আহ্বান করে দেশের ক্রীড়া প্রশাসনের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানটি। সেই আবেদন নিয়ে বাছাই উপ-কমিটি কয়েকটি সভা করে তালিকা একটা পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। সেটা এখন চূড়ান্ত হওয়ার পথে।
২০২১ ও ২০২২ সালের জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের জন্য তালিকা চূড়ান্ত না হলেও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের পুরস্কার প্রদানের কার্যক্রমও শুরু করে দিয়েছে। এ বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা কার্যকর করার লক্ষ্যে আমরা আরও এক বছরের জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদানের কার্যক্রম শুরু করেছি। এরই মধ্যে আগ্রহী ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠকদের কাছে আবেদনও আহ্বান করা হয়েছে। ২৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই আবেদন গ্রহণ শেষ হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি।’
দুই বছরের ক্রীড়া পুরস্কার এখনও চূড়ান্তই হয়নি। এরই মধ্যে আরেক বছরের পুরস্কার প্রদানের কার্যক্রম শুরু করলেন। ২০২৩ সালের ক্রীড়া পুরস্কার কবে নাগাদ প্রদান করা হবে?
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আগেই বলেছি, আমরা ২০২১ ও ২০২২ সালের পুরস্কার ৬ এপ্রিল প্রদানের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। আর ২০২৩ সালের পুরস্কার দেওয়া হবে আগামী বছর। একটু আগেই কার্যক্রম শুরু করা হলো, কারণ এটা সময়সাপেক্ষ বিষয়। আবেদন গ্রহণ করতে হয়, তারপর বাছাইয়ের জন্য বেশ কয়েকবার সভা করতে হয়। তারপর তালিকা চূড়ান্ত করতে হয়। এজন্যই আমরা সময় নিয়ে কাজটি শুরু করেছি। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন পুরস্কার যেন জমে না থাকে। ২০২৪ সাল থেকে আর জমে থাকবে না। আগামী বছর ২০২৩ সালের ক্রীড়া পুরস্কার দিয়ে দিলেই জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদানে ধারাবাহিকতা ফিরে আসবে।’
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘২০২৩ সালের ক্রীড়া পুরস্কারের যাবতীয় কিছু আমরা এ বছরই শেষ করে রাখতে পারবো। যাতে ২০২৪ সালে একটা সুবিধাজনক সময়ে আমরা পুরস্কার প্রদান করতে পারি। যে কারণেই আমরা দুটি পুরস্কার বিতরণ নিয়ে পাশপাশি কাজ করে যাচ্ছি।’
জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রবর্তন হয়েছিল ১৯৭৬ সালে। প্রয়াত সাঁতারু ব্রজেন দাসসহ ৮ জন প্রথম বছর জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পেয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০২০ সালে পুরস্কার পেয়েছেন শহীদ শেখ কামালসহ ৮ জন।
১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদানের পর বিশাল বিরতি পড়েছিল। ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল-এই ১৪ বছর কোনো পুরস্কার প্রদান করা হয়নি। ১৯৯৬ সালে পুনরায় শুরু হয় দেশের সবচেয়ে বড় ও মর্যাদার ওই ক্রীড়া পুরস্কার। ২০২০ সাল পর্যন্ত ৩১৪ জনকে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদান করেছে সরকার।