পদ্মা সেতু এবং মেট্রো রেলের পর খুলতে যাচ্ছে বাংলাদেশের বড় উন্নয়নের স্বপ্ন দ্বার ‘বঙ্গবন্ধু টানেল।’ চট্টগ্রামের পতেঙ্গা-দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী কর্ণফুলী নদীর তলদেশে এই টানেল নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। সব ঠিক থাকলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে এই টানেলে যানবাহন চলাচল শুরু হতে পারে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেছেন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের পর এর ভেতর দিয়ে মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা ও থ্রি -হুইলার চলাচল করতে পারবে না।
বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্পের আওতায় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দুটি পৃথক টিউবে এই টানেলেটি নির্মিত হয়েছে। সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে নদীর তলদেশে নির্মিত এটিই প্রথম টানেল। কর্ণফুলীর দুই তীরকে সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেল প্রকল্প গ্রহণ করে বর্তমান সরকার।
পতেঙ্গা থেকে কর্ণফুলীর অপর প্রান্তে আনোয়ারা পর্যন্ত দুই টিউব সংবলিত মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং ভেতরের ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। নদীর এক প্রান্ত থেকে টানেলের ভিতর দিয়ে অপর প্রান্তে পৌঁছাতে সর্বোচ্চ ৬ মিনিট সময় লাগবে।
২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজ উদ্বোধন করেন। সর্বশেষ গত ২৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই টানেলের একটি টিউবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এখন দ্বিতীয় টিউব উদ্বোধন হলেই টানেলের মাধ্যমে যানবাহন চলাচল শুরু হবে।
বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ বলেন, ‘টানেলের সব ধরনের পূর্ত কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। এখন শুধুমাত্র শেষ মুহূর্তের কাজগুলো চলছে। টানেলের দুই প্রান্তে সংযোগ সড়কসহ অন্যান্য কাজগুলো শতভাগ শেষের দিকে। আগামী এক মাসের মধ্যেই টানেল উদ্বোধন এবং যানবাহন চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে টানেলের মধ্যে দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য টোল হার নির্ধারণে প্রস্তাব সেতু মন্ত্রণালয় হয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু টানেলে সব ধরনের ফোর হুইলার যানবাহন চলাচলের সুযোগ থাকলেও রিকশা, সাইকেল, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশাসহ কোনো থ্রি-হুইলার যানবাহন চলাচলের সুযোগ থাকছে না।
এই টানেলের বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের জন্য যে টোল প্রস্তাব করা হয়েছে তা নিম্নরূপ- প্রাইভেট কার ও জিপ- ২০০ টাকা, মাইক্রোবাস ২৫০ টাকা, বাস (৩১ আসনের কম) ৩০০ টাকা, বাস (৩২ আসনের বেশি) ৪০০ টাকা, বাস (৩ এক্সেল) ৫০০ টাকা। ট্রাক (৫ টন) ৪০০ টাকা, ট্রাক (৫.০১ থেকে ৮ টন পর্যন্ত) ৫০০ টাকা, ট্রাক (৮.০১ থেকে ১১ টন পর্যন্ত) ৬০০ টাকা, ট্রাক (৩ এক্সেল পর্যন্ত) ৮০০ টাকা। ট্রেইলার (৪ এক্সেল পর্যন্ত) ১ হাজার টাকা। ট্রেইলার (৪ এক্সেলের অধিক) ১ হাজার টাকার সঙ্গে প্রতি এক্সেলের জন্য অতিরিক্ত ২০০ টাকা। চলতি জানুয়ারি মাসেই এই টোল হার চূড়ান্ত হতে পারে বলেও জানা গেছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (উন্নয়ন) মো. আবুল হাসান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু টানেলের বিভিন্ন যানবাহনের টোলের হার (খসড়া) নির্ধারণ করা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত কমিটির প্রস্তাব অর্থ বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন শেষে এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।’