ইসলাম এবং হালাল উপার্জন

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান

মানবজীবনে অবৈধ পন্থায় উপার্জনকে কুরআন ও হাদিসে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা পরস্পরের মধ্যে তোমাদের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসার মাধ্যমে হলে ভিন্ন কথা। আর তোমরা নিজদের হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে পরম দয়ালু।’

রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘এক ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধূলিধূসরিত দেহ নিয়ে আকাশের দিকে হাত তুলে হে প্রভু! বলে মোনাজাত করে, অথচ সে যা খায় তা হারাম, যা পান করে তা হারাম, যা পরিধান করে তা হারাম এবং হারামের দ্বারাই সে পুষ্টি অর্জন করে। তার মোনাজাত কীভাবে কবুল হবে?’

সাদরা, বলেন, আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন আমার দোয়া কবুল হয়। রাসূল (সা.) বললেন: হে সাদ! তোমার উপার্জনকে হালাল রাখ, তোমার দোয়া কবুল হবে। মনে রেখ, কেউ যদি হারাম খাদ্যের একগ্রাসও মুখে নেয়, তাহলে চল্লিশ দিন যাবৎ তার দোয়া কবুল হবে না।’

‘যে ব্যক্তি দশ দিরহাম দিয়ে কোন কাপড় কিনল এবং তার মধ্যে এক দিরহাম অসৎ উপায়ে অর্জিত, সে যতদিন ওই কাপড় পরিহিত থাকবে ততদিন তার নামাজ কবুল হবে না।’ ইমাম ইবনুল ওয়ারদ বলেন, তুমি যদি জিহাদের ময়দানে যোদ্ধা অথবা প্রহরী হিসাবে নিয়োজিত থাক, তাতেও কোনো লাভ হবে না, যতক্ষণ তুমি যা খাচ্ছ তা হালাল না হারাম, তা বিবেচনায় না রাখ।’

আবুবকর (রা.)-এর একজন গোলাম ছিল। সে আবুবকরকে মুক্তিপণ হিসাবে কিছু অর্থ নেওয়ার শর্তে মুক্তি চাইলে তিনি তাতে সম্মত হন। অতঃপর সে প্রতিদিন তার মুক্তিপণের কিছু অংশ নিয়ে আসত। আবুবকর (রা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কীভাবে এটা উপার্জন করে এনেছ? সে যদি সন্তোষজনক জবাব দিত, তবে তিনি তা গ্রহণ করতেন, নচেত করতেন না।

একদিন সে রাতের বেলায় তার জন্য কিছু খাবার নিয়ে এলো। সেদিন তিনি রোজা ছিলেন। তাই তাকে ওই খাদ্যের উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেলেন এবং এক লোকমা খেয়ে নিলেন। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এ খাবার তুমি কীভাবে সংগ্রহ করেছো? সে বলল, আমি জাহেলিয়াত যুগে লোকের ভাগ্য গণনা করতাম। আমি ভালো গণনা করতে পারতাম না। কেবল ধোঁকা দিতাম। এ খাদ্য সেই ভাগ্য গণনার উপার্জিত অর্থ দ্বারা সংগৃহীত।

আবুবকর (রা.) বললেন, কী সর্বনাশ! তুমি তো আমাকে ধ্বংস করে ফেলার উপক্রম করেছো। তারপর গলায় আঙুল ঢুকিয়ে বমি করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু বমিতে খাদ্য বের হবে না। উপস্থিত লোকেরা তাকে বলল, পানি না খেলে খাওয়া জিনিস বের হবে না। তখন তিনি পানি চাইলেন।

পানি খেয়ে খেয়ে সব ভুক্ত দ্রব্য পেট এক লোকমা খাওয়ার কারণেই কি এত সব? আবুবকর (রা.) বললেন, খাদ্য বের করার জন্য যদি আমাকে মৃত্যুবরণও করতে হতো, তবুও আমি বের করে ছাড়তাম। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে শুনেছি: ‘যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা গড়ে ওঠে তার জন্য জাহান্নামের আগুনই উত্তম।’

লেখক : ধর্মীয় গবেষক

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.