মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষে লাভবান চাষিরা
চাঁপাইনবাবগঞ্জে খরচ কম হওয়ায় মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ বাড়ছে। বিষমুক্ত সবজি চাষাবাদে এই পদ্ধতিকে পরিবেশবান্ধব বলছে কৃষি দপ্তর। চারার গোড়ায় বিভিন্ন বস্তু দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে ঢেকে দেওয়াকে মালচ বলে। আর এইভাবে আবাদ করাকে ‘মালচিং পদ্ধতি’বলে। চাষাবাদ প্রযুক্তি দিনদিন আধুনিক হওয়ায় মালচিং পেপারের ব্যবহারও বাড়ছে।
কৃষকেরা জানান, মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে জমিতে সেচ কম দিতে হয়। আবাদ করা সবজিতে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকেও বাঁচা যায়। যার ফলে কিটনাশকও কম লাগে। এছাড়া গ্রীষ্মকালে মাটি ঠান্ডা থাকে আর শীতকালে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা ধরে রাখা সম্ভব হয়। সব মিলিয়ে এই পদ্ধতিতে আবাদ করলে কৃষকরা লাভবান হন।
কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ হচ্ছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৫০০ হেক্টর, শিবগঞ্জ উপজেলায় ২ হাজার হেক্টর, নাচোল উপজেলায় ২০ হেক্টর, গোমস্তাপুর উপজেলায় ১০ হেক্টর ও ভোলাহাট উপজেলায় ৫ হেক্টর জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার জামতলা এলাকার আমিরা এগ্রো ফার্মের পরিচালক ইউসুফ আলী বলেন, ‘আসি মালচিং পেপার ব্যবহার করে ১২ কাঠা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। এ পদ্ধতিতে আগাছা কম হয়েছে। এছাড়া মালচিং পদ্ধতিতে মাটির আদ্রতা ধরে রাখে যায় এবং সারের অপচয় রোধ হয়। এছাড়া উৎপাদিত সবজির ফলনও ভালো পাওয়া যায়।’
শিবগঞ্জ উপজেলার সাইদুর রহমান নামের এক কৃষক বলেন, ‘মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ দিনদিন এলাকায় বাড়ছে। আমি প্রথমে মালচিং পেপার ব্যবহার করতাম, অন্যরা তাচ্ছিল্য করতো। এখন তারাই মাচলিং পেপার ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছেন। মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ সহজলভ্য হওয়ার কারণে লোকসানের শঙ্কা নেই।’
গোমস্তাপুরের কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বছর চারেক আগে মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করি। এখন এ পদ্ধতিতে ৫ বিঘা জমিতে তরমুজ, শসা, করলাসহ অন্যান্য সবজি চাষ করছি। মালচিং পেপার দিয়ে চারার গোড়া ঢেকে রাখায় মাটিতে দীর্ঘদিন রস থাকে। তাই সেচ কম লাগে, আগাছাও কম হয়। এছাড়া আগাছা পরিস্কারে শ্রমিক লাগে না। পোকামাকড় আক্রমণ হয় না তাই কীটনাশক কম প্রয়োগ করতে হয়।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মুঞ্জের আলম মানিক বলেন, ‘মালচিং পেপার আধুনিক চাষাবাদের একটি উন্নত পদ্ধতি। ফসল চাষে আধুনিকীকরণ হওয়ায় মালচিং পেপার ব্যবহার জনপ্রিয় হচ্ছে। সবজির চারা রোপণের পরে শুধুমাত্র দেখাশোনা করা ছাড়া আর তেমন কোনো পরিচর্যা করতে হয় না। এই পদ্ধতিতে খরচও কম হয়।’
কল্যাণপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. বিমল কুমার প্রামাণিক বলেন, ‘আগে খড় দিয়ে মালচিং করতেন কৃষকরা। এখন মালচিং পেপার পাওয়া যাচ্ছে। মালচিং পদ্ধতিতে ফসল চাষে রয়েছে নানাবিধ উপকারিতা।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, ‘মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে বীজ থেকে অঙ্কুরোদগম দ্রুত সম্পন্ন হয়। মাটির রস সংরক্ষণ এবং আগাছার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ফসলের চারা রোপণের পর থেকে শুধুমাত্র দেখভাল করা ছাড়া আর কোনো পরিচর্যা করতে হয় না। এজন্য মালচিং পদ্ধতিতে ফসল চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা।’