সিলেটে ৫০ বিঘা জমিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীর ‘কফি গার্ডেন’
বিশ্ববাণিজ্য ভলিউমে তেলের পর কফির অবস্থান। তাই সিলেটে এবার গতানুগতিক ধান চাষের পরিবর্তে কফি চাষ করে বাড়তি আয়ের স্বপ্ন দেখছেন অনেকেইে। শুধু কফিই নয় কাজুবাদাম, লেমন গ্রাস, নাসপাতিসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা।
গবেষকরা বলেছেন, পরিকল্পিত উপায়ে এসবের ফলন হলে সিলেট কৃষিতে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। এদিকে এবার প্রথম বারের মতো সিলেটে কফি চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে সিলেটের গোলাপগঞ্জে একজন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ৫০ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন ‘কফি গার্ডেন’।
বিয়ানীবাজার উপজেলায় কয়েকটি ছোট ছোট টিলায় কফির চাষ হচ্ছে। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) জার্ম প্লাজম সেন্টারে সিলেটে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কফি উৎপাদনের গবেষণা চালানো হচ্ছে।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) ক্রোপ বোটানি ও টি প্রোডাক্টশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক, সিকৃবি জার্ম প্লাজমের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান গবেষক ড. এ এফ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কফি উৎপাদন নিয়ে গবেষণা চলছে। কফি অ্যারাবিকা ও কফি রোভাস্টা এই দুই জাতের কফির গবেষণা চলছে এখানে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড় এবং বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ২শ’ কফির চারা সংগ্রহ করা হয়েছে জানিয়ে এই গবেষক বলেন, দেশে কফির চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। আজকাল গ্রামের বাজারের স্টলেও কফি বিক্রয় হচ্ছে। এতে মনে হয় বাংলাদেশে কফির ভবিষ্যত উজ্জল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সিলেটের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন খান বলেন, কৃষি বিভাগের উদ্যোগে সারাদেশে ‘কৃষি ও কাজু বাদাম উন্নয়ন প্রকল্প’ নামের একটি কর্মসূচি চালু আছে। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিলেটে কফি চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে বেশ কয়েকটি কফি বাগান গড়ে উঠেছে। এসব এলাকায় নতুন করে কফি রোভাস্টা প্রজাতির গাছ লাগানো হচ্ছে। সিলেটের পাহাড়ি এলাকায় কফি চাষের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল।
অন্যদিকে, সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার আমুড়া ইউনিয়ন কমপ্লেক্স সংলগ্ন কদমরসুল গ্রামে প্রায় ৫০ বিঘা জায়গা নিয়ে সাড়ে ৩ হাজার কফি গাছ নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে কফি গার্ডেন। উঁচু নিচু টিলায় সারি সারি আনারস গাছের মধ্যে লাগানো হয়েছে কফি গাছ। আগামী ৫ মাসের মধ্যে গাছে ফুল আসা শুরু করবে বলে জানিয়েছেন সংশিষ্টরা।
বাগান সংশ্লিষ্টরা জানান, অনাবাদি টিলা চাষের আওতায় নিয়ে আসতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সৈয়দ মাছুম আহমদ বাগান করার পরিকল্পনা নেন। এরই অংশ হিসেবে প্রায় ৫০ বিঘা জায়গা নিয়ে প্রথমে গড়ে তুলেন কফি বাগান। পরে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে টিলা আবাদের জন্য কফি চাষের জন্য ১৩৫টি ২৭০টি রোভাস্টা প্রজাতির কফির চারা দেওয়া হয়। এছাড়া বাগান কর্তৃপক্ষ ২ হাজার কফি গাছের চারা সংগ্রহ করে রোপন করেন।
উপজেলা কৃষি অফিস থেকে এবার আরও ১ হাজার ১২৫টি কফির চারা দেওয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সমপরিমাণ আরও চারা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
গোলাপগঞ্জ কফি গার্ডেনের ব্যবস্থাপক আবু সুফিয়ান জানান, ব্যক্তি উদ্যোগে ও উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় তারা কফি বাগানটি গড়ে তুলেছেন। কফি গাছে আড়াই থেকে ৩ বছরের মধ্যে ফলন আসে এবং ৫০ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায় বলে তারা জানতে পেরেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস চারা প্রদান, পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতা করছে এবং বাগানের মালিক সৈয়দ মাছুম আহমদ আমেরিকা থেকে প্রতিনিয়ত বাগানের দেখভাল করছেন। তিন বছর প্রতিটি কফি গাছ থেকে ৪-৬ কেজি কফি উৎপাদন হবে বলে তাদেরকে ধারণা দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে বাগান থেকে ভালো মুনাফা আসবে বলে তাদের প্রত্যাশা।
তিনি জানান, শুধু কফি আবাদই নয়, উদ্যোক্তারা বাগানের পাশেই টিলাবেষ্টিত লেকের পাশে গড়ে তুলেছেন কফি হাউস। শিগগিরই কফি হাউসের কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান তিনি।
সূত্র মতে গোলাপগঞ্জে কফি চাষকে কেন্দ্র করে কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ পরিকল্পনা অনেক দূর এগিয়ে রয়েছে।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, পতিত জমি চাষের আওতায় আনা, সিলেটের ঐতিহ্য লেবু, আনারস চাষ বৃদ্ধি, টিলা সংরক্ষণ, টিলা ধস রোধ, উদ্যোক্তা তৈরির জন্য এই বাগান একটি সূচনা হতে পারে। কৃষি বিভাগ তাদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।