জাতিসংঘের ই-গভর্নমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সে বাংলাদেশ ৮ ধাপ এগিয়ে

জাতিসংঘের ই-গভর্নমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স ২০২২ অনুযায়ী, এবছর বাংলাদেশ ১৯৩টি দেশের মধ্যে ৮ ধাপ এগিয়ে ১১১তম স্থান অর্জন করেছে, যা বিগত ২০২০ সালের রিপোর্টে ছিল ১১৯তম স্থান। অন্যদিকে, ই-পার্টিসিপেশন সূচকে বাংলাদেশ ২০ ধাপ এগিয়েছে। সারাবিশ্বে কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে গত দুই বছরের বৈশ্বিক সংকট সত্ত্বেও বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী ই-পার্টিসিপেশনে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে।

জাতিসংঘের এই ১২তম জরিপটি ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘের সদর দপ্তরে প্রকাশ করা হয়। জাতিসংঘ ই-গভর্নমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স বা ইজিডিআই-এ বাংলাদেশ ০.৫৬৩০ স্কোর নিয়ে ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১১১তম স্থান এবং ০.৫২২৭ স্কোর নিয়ে ই-পার্টিসিপেশন বা ইপিআইতে ৭৫তম স্থান অর্জন করেছে। এটি ২০২০ সালের জরিপ অনুসারে ০.৫১৮৯ স্কোর নিয়ে ১১৯তম স্থান এবং ০.৫৭১৪ স্কোর নিয়ে ৯৫তম স্থানে ছিল।

জরিপটি অনলাইনে সেবা প্রদান, আইন ও পলিসি কাঠামো, ই-পার্টিসিপেশনের অবস্থার পাশাপাশি টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো এবং হিউম্যান ক্যাপিটালকে মূল্যায়ন করে। এটি সকল সদস্য রাষ্ট্রের ই-গভর্নমেন্ট উন্নয়ন মূল্যায়নে বিভিন্ন প্রকাশনা এবং বিভিন্ন অনলাইনের সেবা প্রদানের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে থাকে। এই জরিপে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সূচকগুলো হলো ই-সেবা, টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো এবং বিশ্বব্যাপী হিউম্যান ক্যাপিটাল।

এই বছরের সূচকে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ইজিডিআই মান নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। অনলাইন সার্ভিস ইনডেক্সে (ওএসআই) বাংলাদেশ ০.৬৫২১ স্কোর করেছে, টেলিকমিউনিকেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনডেক্সে (টিআইআই) ০.৪৪৬৯ এবং হিউম্যান ক্যাপিটাল ইনডেক্সে (এইচসিআই) ০.৫৯। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ই-পার্টিসিপেশন টুলের মাধ্যমে সারাদেশ, পৌরসভা ও গ্রামীণ স্থানীয় সরকার পর্যায়ে যোগাযোগ ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে উন্নয়নে কাজ করা হয়। জাতিসংঘের এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ শীর্ষ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) মধ্যে সর্বোচ্চ ইজিডিআই মান অর্জন করেছে এবং পরপর দুটি জরিপে বাংলাদেশ উচ্চ ইজিডিআই গ্রুপে রয়েছে। বাংলাদেশে সরকারি সেবা প্রদানে দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়াতে বিভিন্ন ই-গভর্নমেন্ট উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ শাখাবিহীন ব্যাংকিংয়ের প্রসারের মাধ্যমে ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে অসাধারণ উন্নতি দেখিয়েছে। যা এজেন্ট ব্যাংকিং এবং মোবাইল আর্থিক পরিষেবা (এমএফএস) এর মাধ্যমে সারাদেশের ১০০ মিলিয়নের বেশি গ্রামীণ নাগরিকদের দোরগোড়ায় সকল সেবা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের এটুআই, ইউএনডিপি, গেটস ফাউন্ডেশন এবং কনসালটেটিভ গ্রুপ এর সহযোগিতায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক-এর সমন্বয়ে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় সকল ভাতার ডিজিটাল পেমেন্টের জন্য একটি নাগরিকবান্ধব আর্কিটেকচার তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, নিঃস্ব মহিলাদের জন্য ভাতা, আর্থিকভাবে অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতাসহ সকল ভাতা প্রদান ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হচ্ছে।

জাতীয় তথ্য বাতায়নে পৌরসভা এবং স্থানীয় সরকার পর্যায়ের ই-পার্টিসিপেশনের টুলের মাধ্যমে যোগাযোগ ও সহযোগিতার সুবিধা প্রদান করা হয়। ডিজঅ্যাবিলিটি ইনোভেশন ল্যাব প্রতিবন্ধীবান্ধব পণ্য ও ই-সেবা তৈরি, পরীক্ষা এবং বাণিজ্যিকীকরণে সহায়তা করা হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

২০০৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয় ডিজিটাল বাংলাদেশ কৌশল গ্রহণ করা হয়। যার লক্ষ্য সুশাসন, আইন প্রয়োগ, কর্মসংস্থান এবং প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে একটি ডিজিটাল দেশ হিসেবে উন্নত দেশে রূপান্তর করা।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.