বিয়ের দেনমোহর ১০১ বই!
বই ভালোবাসে না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। ‘মদ রুটি ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে যাবে— বই, সে তো অনন্ত যৌবনা’ —ওমর খৈয়ামের এই বিখ্যাত উক্তির প্রতিফলন ঘটিয়েছেন বগুড়ার ধুনট উপজেলার এক নবদম্পতি। তারা বিয়ের দেনমোহর হিসেবে বইকে বেছে নিয়েছেন। ১০১টি বিভিন্ন ধরনের বই ছিল তাদের বিয়ের দেনমোহর।
ব্যতিক্রমী এই বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে গত ১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার। ঐ দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে ধুনট উপজেলা গোসাইবাড়ী ইউনিয়নের কাজী অফিসে এই বিয়ে সম্পন্ন হয়। গোসাইবাড়ী বাজারে আব্দুল হান্নান কাজীর বাড়িতে বিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয়। বিয়েতে ছেলের বাবা ও মেয়ের মা উপস্থিত ছিলেন। ব্যতিক্রমী এই বিয়ে নিয়ে এলাকাজুড়ে চলছে আলোচনা।
আলোচিত এই বিয়ের বর উপজেলার গোসাইবাড়ী ইউনিয়নের গুয়াডহরী গ্রামের সামছুল ইসলামের ছেলে নিখিল নওশাদ আর কনে সোনাতলা উপজেলার কামালেরপাড়া গ্রামের মোস্তাফিজার রহমানের মেয়ে সান্ত্বনা খাতুন। ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন সান্ত্বনা। নিখিল নওশাদ কবি ও লিটলম্যাগ সম্পাদক। পাশাপাশি বেসরকারি একটি কোম্পানির বিক্রয় কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।
বিয়ের পর মানুষের মাঝে এত সাড়া পড়ায় বেশ ভালো লাগছে তাদের। তবে খানিকটা বিড়ম্বনাও রয়েছে, একান্ত সময় পার করার সময় পাচ্ছেন না তারা। সমাজের সুধীজন, সংবাদকর্মীসহ অনেকেই ব্যতিক্রমী বিয়ের খবর জেনে তাদের কাছে আসছেন। সময় দিতে হচ্ছে।
নিখিল-সান্ত্বনা দম্পত্তি বলেন, কাগজের বই পড়ার মজাই আলাদা। বর্তমান সময়ে আমরা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে পড়া লেখা করি। বই সংগ্রহ করার অভ্যাস ভুলে যাচ্ছি।
অর্থ বা স্বর্ণের পরিবর্তে বই মোহরানা হিসেবে ঠিক করে বিয়ে করায় খুশি নিখিলের স্বজন ও এলাকাবাসি। তারা মনে করেন, এর মাধ্যেমে মানুষের মধ্যে বই পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।
ইসলামের দৃষ্টিতে মোহরানা পরিশোধ করা আবশ্যক। তবে বর ও কনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে তা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। স্বর্ণ অলংকার বা যে কোন কিছু দিয়ে তা পরিশোধ করা যায়। বই দিয়েও মোহরানা পরিশোধ করা যাবে বলে মত দিয়েছেন স্থানীয় আলেমরা। তারা বলেন, আল্লাহর বিধান হলো মোহরানা নির্ধারণ ও তা পরিশোধ করা। সেটা আদায় করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
একুশ শতকের এই ডিজিটাল সময়ে নিখিল-সান্ত্বনার এই ব্যতিক্রমী বিয়ে যুবসমাজকে কাগজের বই পড়া ও সংগ্রহের প্রতি আগ্রহী করে তুলবে বলে মনে করেন সকলে।