বাংলাদেশকে জ্বালানি দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে ব্রুনাই

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পুরো বিশ্ব জ্বালানি সংকটে পড়েছে। জ্বালানির দাম বাড়িয়ে বাংলাদেশ সংকট মোকাবিলার চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রথাগত বাজারের বাইরে ভিন্ন উৎস থেকে জ্বালানি সংগ্রহের চেষ্টাও আছে জোরেশোরে। এরই মধ্যে জ্বালানি বাণিজ্যে আগ্রহ দেখিয়েছে ব্রুনাই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আগামী ৩১ আগস্ট বাংলাদেশ ও ব্রুনাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বৈঠকে যোগ দিতে ব্রুনাই যাবেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

আগামী অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে দেশটির সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদদৌল্লাহ বাংলাদেশ সফরে আসবেন। তারই অংশ হিসেবে সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে দুই দেশ এফওসি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। সুলতানের সফরকে কেন্দ্র করে ৩ থেকে ৪টি সমঝোতা সইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে দুই দেশ।

সুলতানের সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এখনও তারিখ নির্ধারিত হয়নি। আর জ্বালানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ডিজেল আমদানি নিয়ে কাজ করছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. নাজমুল হুদা। তিনি বলেন, ব্রুনাইয়ের সুলতানের বাংলাদেশ সফরের একটি সম্ভাবনা রয়েছে। তার প্রস্তুতি হিসেবে দুই দেশের মধ্যে এফওসি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বৈঠকে সম্পর্কের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

সূত্র জানায়, ব্রুনাইয়ের সুলতানের সফরকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু সমঝোতার প্রস্তুতি নিচ্ছে দুই দেশ। তারই অংশ হিসেবে জ্বালানির ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে একটি সমঝোতা করবে দুই দেশ। এর আগে বাংলাদেশ ও ব্রুনাই ২০১৯ সালের এপ্রিলে জ্বালানি নিয়ে সহযোগিতা বিষয়ক একটি সমঝোতা সই করেছিল। সেই সমঝোতা ২০২১ সালের এপ্রিলে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়। এ সমঝোতাটিই আবারও নবায়ন করা হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ব্রুনাইয়ের থেকে জ্বালানি নিয়ে সমঝোতাটি নবায়নের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আর বাংলাদেশও চিন্তা করছে, যদি বিকল্প বাজার থেকে প্রতিযোগী মূল্যে জ্বালানি সংগ্রহ করা যায়, তবে ক্ষতি কী। তবে দেশটি থেকে জ্বালানি কিনবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত জ্বালানি মন্ত্রণালয় নেবে।

সূত্র জানায়, জ্বালানির পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগে একটি সমঝোতার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যা আসন্ন এফওসিতে আলোচনা হবে। বাংলাদেশ ব্রুনাইয়ে পেশাজীবী, দক্ষ, আধাদক্ষ এবং অদক্ষ শ্রমিক পাঠাতে প্রস্তুত। বর্তমানে দেশটিতে প্রায় ১৫ হাজারের মতো বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছেন। এ ছাড়া বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিপিং, শিক্ষা, সংস্কৃতি, প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হবে।

প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, কৌশলগত দিক থেকে তেমন কোনো বিষয় না থাকলেও, প্রশিক্ষণ ভিত্তিক সহযোগিতা বাড়াতে চায় বাংলাদেশ। ব্রুনাইয়ের সামরিক কর্মকর্তারা বাংলাদেশে ডিফেন্স কলেজে ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এ সহযোগিতা আরও বাড়াতে চায় বাংলাদেশ। সেসঙ্গে দুই দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও সহযোগিতা বাড়াবে দুই দেশ।

কূটনীতিকরা বলছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কৌশলগত ও বাণিজ্যিক কারণে ইতোমধ্যে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। একে তো রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আসিয়ান জোটের সদস্য হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে ব্রুনাইসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। সেসঙ্গে ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাড়তে থাকা ক্রমবর্ধমান আগ্রহের দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এ অঞ্চল। এর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য তো রয়েছেই। তাই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে চায় বাংলাদেশ।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.