এক বছরে প্রাণের রপ্তানি আয় ৫ হাজার কোটি টাকা
দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী ‘প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ’ ২৫ বছর ধরে বিশ্বের ১৪৫টি দেশে তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি করে আসছে। এসব দেশে প্রাণের পণ্যসামগ্রীর ভোক্তা অন্তত ১৫০ কোটি মানুষ। গ্রুপটির মাধ্যমে সরাসরি কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার মানুষের। এর মধ্যে দেশের বাইরে কর্মসংস্থান হয়েছে তিন হাজার বাংলাদেশির। প্রতিষ্ঠানটি গত অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি করে আয় করেছে ৫৩ কোটি ২০ লাখ ডলার (প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা)। ২০৩০ সালের মধ্যে রপ্তানি এই আয় ২০০ কোটি ডলার করার টার্গেট নেওয়া হয়েছে।
রবিবার রাজধানীর গুলশানে হোটেল সিক্স সিজনে ‘রপ্তানির ২৫ বছর পূর্তি’ উপলক্ষে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান খান চৌধুরী এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘এই রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গত অর্থবছরে ১০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়া পণ্য বহুমুখীকরণে টুথব্রাশ থেকে বিচ টয়ের মতো পণ্য তৈরি করা হয়েছে। ’
আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘ফ্রান্সে আনারস রপ্তানি দিয়ে শুরু করলেও এখন আমরা এক হাজারের বেশি পণ্য রপ্তানি করছি। ’
বর্তমানে দেশের শীর্ষ ১০টি রপ্তানি খাতের মধ্যে সাতটি খাতে প্রাণ গ্রুপ পণ্য রপ্তানি করছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষিপণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, তৈরি পোশাক, পাদুকা, হালকা প্রকৌশল, কেমিক্যাল ও আসবাব।
আহসান খান বলেন, ‘প্রাণের বেশির ভাগ পণ্য রপ্তানি হয় এশিয়ার দেশগুলোতে, যা মোট রপ্তানির ৭০ শতাংশ। এর মধ্যে ভারতেই রপ্তানি হয় ৬০ শতাংশ। ইউরোপ-আমেরিকায় রপ্তানি হয় ১২ শতাংশ। আফ্রিকায় ৮ শতাংশ, ওশানিয়ার দেশগুলোতে ১০ শতাংশ। ’
দেশের আগামী অর্থনীতি রপ্তানি প্রবৃদ্ধিনির্ভর হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ জন্য রপ্তানি বহুমুখীকরণ হবে। প্রাণ গ্রুপের পণ্য এখন বিশ্বের নামিদামি প্রতিষ্ঠানের পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বিশ্ববিখ্যাত চেইন শপে জায়গা করে নিচ্ছে। ওয়ালমার্ট, ক্যারিফোর, লবলোজ, আলদি, লিডল, মাইডিন, ডলারামা, টেসকোর মতো শপে জায়গা করে নিয়েছে প্রাণের পণ্য, যা আমাদের দেশের জন্য গর্বের। ’
তিনি বলেন, ‘যখন কোনো পণ্য রপ্তানি করি, তখন নিজেদের সামর্থ্য টের পাই। পর্যায়ক্রমে বিশ্বের প্রতিটি দেশে আমাদের পণ্য রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশে বসে যদি সম্ভব হয়, বাংলাদেশ থেকেই পণ্য রপ্তানি করব। এতে দেশে বিপুল কর্মসংস্থান হবে। আর যদি কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় তবে সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আগামীতে বিশ্বের চার-পাঁচটি স্থানে পণ্য উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। ’
করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বৈশ্বিক নানা সংকটের মধ্যেও দেশের রপ্তানি খাত ভালো করছে উল্লেখ করে আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের আরো ভালো করার সুযোগ ছিল। কিন্তু পণ্য পরিবহনে নির্দিষ্ট রুটে লাইনার পরিষেবার সুযোগ না থাকা, ফ্রেইটের খরচ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া, পর্যাপ্ত কনটেইনার না থাকায় আমরা সে সুযোগ পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারছি না। এসব সমস্যা সমাধানে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এই সমস্যাগুলো সমাধান করা গেলে পণ্য রপ্তানি আরো বাড়বে। ’
তিনি বলেন, ‘রপ্তানি বাড়াতে দেশের ব্র্যান্ডিং এবং পণ্য ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য তহবিল গঠন, বিভিন্ন দেশের ট্রেড শোতে অংশগ্রহণের জন্য তহবিল সহায়তা, আন্তর্জাতিক মানের টেস্টিং ল্যাব, রপ্তানি বীমা, গুড অ্যাগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিস প্রবর্তন করা গেলে এসব রপ্তানি খাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। ’
প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি বলেন, ‘এক হাজারের বেশি পণ্য উৎপাদন করে প্রাণ। মান নিয়ন্ত্রণে আমরা ছাড় দিই না। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ’
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার এই সময়ে শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশের পরিস্থিতি হতে পারে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া হতে না চাইলে দেশের মানুষকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। কৃচ্ছ সাধন করতে হবে। একই সঙ্গে বিদুৎ ও গ্যাস ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে।
রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশেষ কোনো পণ্যে গুরুত্ব দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, খাদ্য ও বাইসাইকেল রপ্তানিতে জোর দেওয়া হবে। বর্তমানে প্রাণ দৈনিক এক হাজার বাইসাইকেল উৎপাদন করছে। আগামী এক বছরে প্রতিদিন চার হাজার বাইসাইকেল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ালমার্টে যাবে এসব বাইসাইকেল।
১৯৯৭ সালে ফ্রান্সে পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে রপ্তানি কার্যক্রম শুরু করে প্রাণ-আরএফএল। বর্তমানে ভারত, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, নেদারল্যাল্ডস, ইতালি, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, আরব-আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, ওমান, মালয়েশিয়া, বলিভিয়া, ভেনিজুয়েলা, দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া, ইথিওপিয়াসহ বিশ্বের ১৪৫টি দেশে নিয়মিত পণ্য রপ্তানি করছে গ্রুপটি।