ডিজিটাল হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন
দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল হচ্ছে। অনুসন্ধান থেকে প্রসিকিউশন, সব কাজ ম্যানুয়ালি করার পরিবর্তে আধুনিক সফটওয়্যারের (ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড প্রসিকিউশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-আইপিএমএস) মাধ্যমে করা হবে। এর জন্য এরই মধ্যে কমিশনের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে আইপিএমএসের পরীক্ষামূলক ব্যবহারও হয়েছে। এখন অপেক্ষা আইপিএমএস পদ্ধতি চালু করার।
দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে দুদকের কার্যক্রম আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনুসন্ধান থেকে প্রসিকিউশন, আগে যেখানে সব কাজ ম্যানুয়ালি হতো, এখন সেখানে আইপিএমএস ব্যবহার করে কাজগুলো সম্পন্ন করা হবে। এতে কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ কাজগুলো দ্রুত এবং সহজে করা যাবে। আইপিএমএস সফটওয়্যার ডেভেলপ করে এরই মধ্যে পরীক্ষামূলক ব্যবহার করা হয়েছে। দ্রুতই এই পদ্ধতি চালু করা হবে। ’
দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘কর্মকর্তাদের কাজগুলো আরো সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে করতে আইপিএমএস সফটওয়্যার ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এরই মধ্যে পরীক্ষামূলক ব্যবহার করে এখন ফলাফল পর্যালোচনা করা হচ্ছে। দ্রুতই এই পদ্ধতি চালু করা হবে। ’
কমিশনের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যুগোপযোগী করতে দুদককে আরো আধুনিকায়ন করতে হবে। আইপিএমএস ব্যবহারের ফলে কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়ার পাশাপাশি কমিশনের সব কাজে আরো গতি বাড়বে। দ্রুত আইপিএমএস কার্যকর করা হোক। ’
আইপিএমএস বাস্তবায়িত যেভাবে
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে সরকারের মন্ত্রণালয়, দপ্তর, পরিদপ্তরের মতো দুদকের কার্যক্রমও ডিজিটাইজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) দুদককে সহযোগিতা দেয়। এরই অংশ হিসেবে পাঁচ বছর মেয়াদি দুদক শক্তিশালীকরণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের আওতায় আইপিএমএস সফটওয়্যারটি দুদককে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
আইপিএমএসের কাজের প্রক্রিয়া
ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড প্রসিকিউশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা আইপিএমএস পদ্ধতিকে চারটি মডিউলে ভাগ করা হয়েছে। অভিযোগ ম্যানেজমেন্ট মডিউল, অনুসন্ধান ম্যানেজমেন্ট মডিউল, তদন্ত ম্যানেজমেন্ট মডিউল এবং প্রসিকিউশন ম্যানেজমেন্ট মডিউল। এসব মডিউলের মাধ্যমে অভিযোগ, অনুসন্ধান, তদন্ত ও প্রসিকিউশনের সব কাজ করা হবে। অনুসন্ধান বা তদন্তকারী কর্মকর্তা সরাসরি তাঁর অনুসন্ধান বা তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করতে পারবেন। কমিশনে অভিযোগকারীরাও এক ক্লিকে তাঁদের দেওয়া অভিযোগের সর্বশেষ অবস্থা জানতে পারবেন।
অভিযোগ ম্যানেজমেন্ট মডিউল
দুদকে দেওয়া সব অভিযোগ নিবন্ধন ও নিবন্ধন করা অভিযোগ অনুমোদনসংক্রান্ত কাজ করতে অভিযোগ ম্যানেজমেন্ট মডিউলটির উন্নয়ন করা হয়েছে। বর্তমানে অভিযোগ নিবন্ধন ও নিবন্ধন করা অভিযোগ অনুমোদনসংক্রান্ত কাজগুলো ম্যানুয়ালি করা হয়, যা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ। অভিযোগ ম্যানেজমেন্ট মডিউলটির দুটি অংশ। একটি অনলাইন ওয়েব পোর্টাল, অন্যটি ব্যাক অফিস ম্যানেজমেন্ট। অনলাইন ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে যে কেউ অভিযোগ করতে পারবেন এবং নিবন্ধন করা অভিযোগটি ট্র্যাক করতে পারবেন। ব্যাক অফিসের ব্যবহারকারীরা অনলাইন ওয়েব পোর্টাল অথবা ব্যাক অফিসের মাধ্যমে নিবন্ধন করা অভিযোগগুলোর তালিকা অনুমোদন, অনুমোদিত তালিকার ওপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ, তাগিদপত্র পাঠানো এসব কাজ করতে পারবেন। এ ছাড়া ব্যাক অফিস ম্যানেজমেন্ট থেকে অভিযোগ নিবন্ধন ও অভিযোগ অনুমোদনসংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিবেদন দেখতে এবং প্রিন্ট করতে পারবেন।
অনুসন্ধান ম্যানেজমেন্ট মডিউল
আইপিএমএসের মাধ্যমে দুর্নীতিসংক্রান্ত যাবতীয় অভিযোগ গ্রহণ করা হবে। অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে অনুমোদিত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। এরপর অভিযোগগুলো অনুসন্ধানের জন্য পাঠানো হবে। যেসব অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য পাঠানো হবে, তা এই মডিউলে থাকবে। অনুসন্ধানসংক্রান্ত সব কাজ অনুসন্ধান মডিউলের মাধ্যমে করা হবে।
তদন্ত ম্যানেজমেন্ট মডিউল
অনুসন্ধান শেষে যেসব অভিযোগে মামলা করা হবে, তা তদন্ত মডিউলে থাকবে। তদন্তের সব তথ্য ও আলামত এই মডিউলে সংরক্ষণ করা হবে এবং তদন্তসংক্রান্ত সব কাজ তদন্ত মডিউলের মাধ্যমে শেষ করা হবে।
প্রসিকিউশন ম্যানেজমেন্ট মডিউল
দুদকের প্রসিকিউশনসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রসিকিউশন ম্যানেজমেন্ট মডিউলটি প্রস্তুত করা হয়েছে। কোনো অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা হলে তার জন্য আইনজীবী ও কোর্ট ইন্সপেক্টর নিয়োগ করা, মামলার শুনানির তথ্যাবলি সংরক্ষণ, বিশেষ কারণে আইনজীবী ও কোর্ট ইন্সপেক্টর পরিবর্তন, আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী কাজ করা, বিল দেওয়া ইত্যাদি কাজ সহজ ও নির্ভুলভাবে করতে এই মডিউলটি তৈরি করা হয়েছে। এই মডিউলে সংরক্ষিত যাবতীয় তথ্য এবং প্রয়োজনীয় প্রতিবেদন স্বল্প সময়ে স্বয়ংক্রিয় ও নির্ভুলভাবে প্রস্তুত এবং প্রিন্ট করা যাবে।