‘সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন হবে’

সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্রের বিকাশ ও অগ্রযাত্রায় আওয়ামী লীগই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।

অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার আন্তরিক এবং ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে আসছে। বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ সব কথা বলেন।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে এ সংক্রান্ত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন (ইসি) সম্পূর্ণ স্বাধীন। আইন অনুযায়ী কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ সম্পাদন করে। নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী সরকার সহায়তা করে থাকে। স্বাধীনভাবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সরকার ও নির্বাহী কর্তৃপক্ষের আবশ্যিক দায়িত্ব। আশা করি সব রাজনৈতিক দলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে।

একই প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, বর্তমান কমিশন সংবিধান ও প্রচলিত আইনের অধীনে জাতীয় সংসদসহ সব ধরনের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে বদ্ধপরিকর। সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণসহ দলীয় কার্যক্রম নির্বিঘ্নে করার পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। ইসি নিয়োগে আইন প্রণয়ন, অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে নতুন কমিশন গঠন, ইভিএম চালু, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স প্রবর্তন করেছে।

তিনি আরো বলেন , ভোটার নিবন্ধন, ভোটার তালিকা তৈরি ও হালনাগাদ করা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়েও নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন আলাপ আলোচনা করে থাকে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ করতে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের পর হতে আচরণ বিধি প্রতিপালন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে পর্যাপ্ত সংখ্যক এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এবং জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়।

এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন ও রিটার্নিং অফিসারের চাহিদার প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও কোস্ট গার্ড নিয়োগ করা হয়।

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা জানান, মেগা প্রকল্প অনুমোদনের আগে যথাযথ আর্থিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ফলে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের বিরূপ কোনো প্রভাবের সম্ভাবনা নেই। যে কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নের ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পগুলোর অধিকাংশ বৈদেশিক ঋণ বা অনুদান সহায়তায় গ্রহণ করা হলেও এসব ঋণ নমনীয় প্রকৃতির। সুদের হার তুলনামূলক কম ও ঋণ পরিশোধের মেয়াদ এবং গ্রেস পিরিয়ডও অনেক। উন্নয়ন সংস্থার দেওয়া ঋণের অর্থ অবমুক্তির ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো জটিলতা দেখা যায়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সরকারি দলের সদস্য মো. আফজাল হোসেনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, দক্ষ জনবল সৃষ্টি প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির উদ্দেশ্যে সরকার বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছে। কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান তৈরিসহ সার্বিকভাবে দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি সাধনের মাধ্যমে জনগণের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিভিন্ন খাতভিত্তিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

একই প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা আরো জানান, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি বিভিন্ন সংকট মোকাবিলা করে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ সংকট মোকাবিলায় এবং অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব কাটিয়ে উঠতে চারটি প্রধান কৌশলগত দিক সম্বলিত স্বল্প, মাঝারি ও দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্য নিয়ে একটি সামগ্রিক কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়েছে।

এই কৌশলগুলো ছিলো সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি ও কর্মসৃজনকে প্রাধান্য দেওয়া এবং কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় নিরুৎসাহিত করা, ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্পসুদে কতিপয় ঋণ সুবিধা প্রবর্তন করা, যাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত হয়। তিনি বলেন, হতদরিদ্র ও কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত জনগণকে সুরক্ষা দিতে সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি এবং বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। এসব কৌশলের আলোকে এ পর্যন্ত এক লক্ষ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার ২৮টি আর্থিক ও প্রণোদনা প্যাকেজ চালু ও তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.