সুপ্রিমকোর্টে অনিয়ম-দুর্নীতি বরদাস্ত করবো না : প্রধান বিচারপতি

সুপ্রিমকোর্টে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘এখানে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি বরদাস্ত করবো না।’ বুধবার সুপ্রিমকোর্ট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।

সুপ্রিমকোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সতর্ক করে বিচার বিভাগের প্রধান বলেন, ‘আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলে দিতে চাই- এই পবিত্র আদালত দেশের মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। এখানে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির ন্যুনতম উপস্থিতি বরদাস্ত করবো না। এখানের অনিয়ম দুর্নীতি নির্মুল করতে যে কোন পদক্ষেপ নিতে কুণ্ঠাবোধ করবো না। অনিয়ম বা দুর্নীতি পরিলক্ষিত হলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দেশের সর্বোচ্চ বিচারাঙ্গনে সরকারি আইন সহায়তার মানোন্নয়নে বেঞ্চ অফিসার, বেঞ্চ রিডার ও সেকশন সুপারদের নিয়ে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজক সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।
নানা ভোগান্তির শিকার হয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিচারপ্রার্থীরা আদালতে আসেন- তা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমি তাদের হুশিয়ার করে দিচ্ছি, এই দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের কাছ থেকে কেউ সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছেন, তাহলে কোনোভাবেই বরদাস্ত করবো না। আমি এরইমধ্যে একজন অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার, ডেপুটি রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে কমিটি করে দিয়েছি, তাদের খেয়াল রাখতে বলেছি কোথাও কোনো অনিয়ম বা সাধারণ মানুষকে কেউ হয়রানি করছে কিনা”।

হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, “আমাদের যে বেতন হয়, সেটা কিন্তু জনগনের ট্যাক্সের টাকায়। সে হিসেবে আমরা জনগণকে কতটুকু সেবা দিতে পেরেছি তা চিন্তা করতে হবে। যদি আমরা সেবা দিতে না পারি তাহলে সেটা হবে আমাদের ব্যর্থতা”।
তিনি বলেন, “আমি শপথ নেওয়ার পরেই হাইকোর্টের সেকশনগুলো পরিদর্শন করেছি। তাতে যে অবস্থা দেখেছি, সেখানে কাজ করার মত পরিবেশ নাই। আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রশাসনিক কাজের জন্য পৃথক একটি ভবন তৈরি করে দেবেন। যেখানে পৃথক রেকর্ড রুম থাকবে”।

সুপ্রিমকোর্টের শাখায় বদলি বা পদায়ন নিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, “মেধা-যোগ্যতার ভিত্তিতে পদায়ন করা হবে। যিনি যে কাজের জন্য উপযুক্ত তাকে সেই পদে পদায়ন করা হবে। অযোগ্য ও চাটুকারদের মাধ্যমে সঠিক সেবা দেওয়া সম্ভব না। বরং এরা নিজ নিজ স্বার্থ হাসিলের চেষ্টায় থাকবে। তারা কর্মঘণ্টা নষ্ট করে। যারা সঠিকভাবে, সৎভাবে কাজ করবেন তাদের প্রত্যেকের পেছনে শুধু আমি না, প্রত্যেক বিচারপতি থাকবেন। কতিপয় বেঞ্চ অফিসার, বেঞ্চ রিডার এবং বিভিন্ন সেকশনের সুপারসহ অসাধু কিছু কর্মকর্তার জন্য তাদের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। এটা কোনভাবেই বরদাস্ত করা হবে না’।

বিচারপতি হিসাবে নিজেদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দিয়ে বিচার বিভাগের প্রধান বলেন, ‘আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশের সাথে সাথে শক্তিমান, দুর্বল, ধনী, গরিব সকলের মধ্যে যাতে একই বিশ্বাস জন্মে যে তারা সকলেই সমান। আদালতের নিকট শুধুমাত্র আইন অনুযায়ী ন্যায় বিচার পাবেন সেই ব্যবস্থা করে দেয়ার দায়িত্ব আমাদের’। সুপ্রিম কোর্ট থেকে প্রতারক, অসাধু সিন্ডিকেট উচ্ছেদে আইনজীবীদের সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বানও জানান প্রধান বিচারপতি।

সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথসহ আরও অনেকে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.