প্রতি হাজারে তিনজন পারকিনসন্সে আক্রান্ত: বিএসএমএমইউ উপাচার্য
বাংলাদেশে প্রতি ১ হাজার জন লোকের মধ্যে ৩ জন লোক পারকিনসন্সে রোগে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়-বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেছেন, ষাটোর্ধ্ব নাগরিকরাই বেশি পারকিনসন্সে আক্রান্ত হয় বেশি। এ রোগের লক্ষণ-উপসর্গ প্রকাশ পাওয়ার পরও কেউ যদি হেলাফেলা করে, যদি বেশি ধূমপান করেন তবে এই রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বিশ্ব পারকিনসন্স দিবস-২০২২ পালিত হয়েছে। সোমবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে দিবসটি উপলক্ষ্যে র্যালি, সচেতনামূলক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ব্লকের সামনে থেকে শুরু হয়ে টিএসসি, বটতলা প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবন বি ব্লকের সামনে শেষ হয়। র্যালি শেষে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
পারকিনসন্স ডিজিস হলো মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত রোগ। মস্তিষ্কের সাবস্ট্যানশিয়া নাইগ্রা নামক অংশের স্নায়ু কোষ (নিউরন) শুকিয়ে যাওয়ার কারণে ডোপামিন নামক নিউরোট্রান্সমিটারের (এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ) ঘাটতি দেখা দেয়। স্বাভাবিক অবস্থায় মস্তিষ্কে ব্যাজাল গ্যাংলিয়া নামক অংশ শরীরের চলাফেরা বা গতি বা নড়াচড়া করার সমন্বয় করে থাকে। ডোপামিনের অভাবে এ সমন্বয় নষ্ট হয়ে যায়।
শতকরা সত্তর ভাগ ক্ষেত্রে পারকিনসন্স রোগের কারণ অজানা। শতকরা পাঁচ ভাগ ক্ষেত্রে জেনেটিক কারণে হয়। অবশিষ্ট পঁচিশ ভাগ বিভিন্ন কারণে হয়। যেমন- স্ট্রোক, টিউমার, বার বার মস্তিষ্কের আঘাত, মস্তিষ্কের ইনফেকশন, উইলসন ডিজিজ সহ মস্তিষ্কের অন্যান্য রোগ- যেগুলোকে বলা হয় পারকিনসনিজম।
এ রোগের প্রধান উপসর্গ বা লক্ষণ তিনটি। ১. হাত-পা কাঁপুনি। ২. হাত-পা স্বাভাবিকের চেয়ে শক্ত হয়ে যাওয়া ও ৩. চলাফেরার গতি ধীর হয়ে যাওয়া।
এছাড়া যেসব লক্ষণগুলো থাকতে পারে- সামনের দিকে ঝুঁকে হাটা, কথার স্বর কমে যাওয়া ও কম কথা বলা, চোখের পাতার নড়াচড়া কমে যাওয়া, বার বার পড়ে যাওয়া, কোষ্ঠ কাঠিন্য। একইসঙ্গে হতাশাগ্রস্ততা, উদ্বিগ্নতা, উদাসীনতা, ঘুম কম হওয়া, যৌন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের পরামর্শ জানিয়ে বলেন, ‘তারা নিয়মিত শারিরীক ব্যায়াম করবে, ডায়েট কন্ট্রোল করবে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখবে। সেই সঙ্গে কাঁপুনি হওয়ার সাথে সাথেই নিউরোলজিস্টদের সাথে যোগাযোগ করবে এবং চিকিৎসা নেবে। ’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার সোসাইটি অব বাংলাদেশের উদ্যোগে “পারকিনসন্স রোগ: রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী” বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও সচেতনামূল ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার সোসাইটি অফ বাংলাদেশের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. হাসান জাহিদুর রহমান, সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. আহসান হাবীব হেলাল, সোসাইটি অফ নিউরোলজিস্ট অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. ফিরোজ আহমেদ কোরাইশী এবং সাধারণ সম্পাদক বিএসএমএমইউ নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী বক্তব্য রাখেন।
অন্যান্যদের মধ্যে বিএসএমএমইউয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, রেজিস্ট্রার ডা. স্বপন কুমার তপাদার, নিউজোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুভাষ কান্তি দে, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ সবুজ, সার্জারি বিভাগের (অনকোলজি) সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোঃ রাসেল, মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাতেমা জোহুরা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।