কার্বন নিঃসরণ কমাতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৩৪ দেশ
২০৩০ সালের মধ্যে বন ধ্বংস বন্ধে কার্বন নিঃসরণ কমাতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৩৪ দেশ। গতকাল রবিবার পর্যন্ত জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউএনএফসিসির ওয়েবসাইটে বাংলাদেশসহ ১৩৪টি দেশের নাম প্রকাশ হয়েছে। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে ঐকমত্যে পৌছান বিশ্ব নেতারা। বাংলদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফা কামাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে বনভূমি রক্ষা, নতুন বনায়ন, বনাচ্ছাদন, বনসম্প্রসারণে বদ্ধপরিকর জানিয়ে গত ২৬ আগস্ট আমাদের এনডিসি জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউএনএফসিসিতে আপলোড করে দিয়েছি। কিন্তু, বাংলাদেশের এ তথ্য ইউএনএফসিসি’র ওয়েবসাইটে যথাসময়ে আপলোড না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করে বলা হয়, বাংলাদেশ বনভূমি রক্ষা, বন সৃজন প্রক্রিয়ার বৈশ্বিক উদ্যোগের সঙ্গে নেই।’
মোস্তফা কামাল আরো বলেন, ‘তথ্যটি সঠিক ছিল না। এ বিষয়ে কোনো দেশ চুক্তি করেনি। এসব দেশ ঐক্যমত পোষণ করেছে, তেমনি বাংলাদেশও এ ঐক্যমতের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। কিন্তু, সিস্টেমের কারণে ইউএনএফসিসির ওয়েবসাইটে প্রথমে বাংলাদেশের নাম তালিকায় ছিল না। পরে গতকাল বাংলাদেশের নাম যুক্ত করে প্রকাশ করা হয়েছে। এরকমভাবে আরও দেশের নাম সংযুক্ত হয়ে পর্য়ায়ক্রমে তালিকা প্রকাশ হতে পারে।’
সচিব বলেন, ‘মূলত কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে বনভূমি রক্ষা, বন বৃদ্ধির বৈশ্বিক উদ্যোগে বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ঐক্যমতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে নিজ নিজ দেশে বিদ্যমান বনভূমি রক্ষার পাশাপাশি নতুন বন সৃজন করবে। শুধু প্রাকৃতিক বনভূমি রক্ষা নয়, জলবায়ু মোকাবিলায় শহরগুলোতে সামাজিক বনায়ন বাড়ানোর প্রস্তাবও এসেছে সম্মেলনে।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ও প্রধান বন সংরক্ষক মো. আলমগীর হোসাইন ইউএনবিকে জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে বনভূমি ১৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ এবং বনায়ন ২২ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে উন্নীত করার মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বন রক্ষা, নতুন নতুন বন সৃজনে স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আলমগীর হোসাইন বলেন, “আমরা প্রতিনিয়ত বন রক্ষা করে চলছি। বিভিন্ন এলাকায় বনের সংখ্যা আরও বাড়ছে। উপকূলীয় বনসহ সামাজিক বনায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে (এসডিজি-১৫) বনভূমির টেকসই ব্যবস্থাপনা, বন উজাড় রোধ, বনভূমি পুনরুদ্ধারসহ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ বন ও বনজ সম্পদ সংরক্ষণে বিবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দেশের সংবিধানের ১৮ক অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, বনভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধানের সুনির্দিষ্ট সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়েছে। ২০০৪ সালে সামাজিক বনায়ন বিধিমালা প্রণয়ন করা হয় এবং সর্বশেষ ‘জাতীয় বন নীতি-২০১৬’-তে বনভূমির সংরক্ষণ ও বনজ এলাকা সম্প্রসারণ, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা এবং বাস্তুতন্ত্রের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।”
বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমেদ জানান, দেশের সংবিধানেই বন রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরা আছে। সে অনুযায়ী সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। সে লক্ষ্যে বন রক্ষায় সবার ঐক্যের সঙ্গে বাংলাদেশও একমত। কপ-২৬ সম্মেলনে বিশ্বের বনভূমি রক্ষা করা এবং জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় পৃথিবীর বন রক্ষায় ঐক্যমতে আসে বাংলাদেশসহ ১৩৪দেশ। এ সংখ্যা পর্যায়ক্রমে আরো বাড়বে বলেও জানানো হয়েছে।