আমরা কেন পেঁয়াজ খাবো?

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয় সম্ভবত পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি। দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে অনেকে অনেক কথা বললেও, কেউ কেউ সাধারণ মানুষকে পেঁয়াজ খাওয়াই ছেড়ে দিতে বলছেন। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে পেঁয়াজ শুধু মুখরোচক হিসেবেই খাওয়া হয় না, পেঁয়াজের রয়েছে হরেক রকম স্বাস্থ্য গুণ। এটি রান্না থেকে শুরু করে সালাদ, স্যান্ডউইচ এবং নানাভাবে খাওয়া যায়। রয়েছে। স্যালাদ থেকে স্যান্ডউইচ, কিংবা শুধু মুড়িতে মেখে যেমন নানা ভাবে পেঁয়াজ খাওয়া যায়, তেমনই এর রয়েছে নানাবিধ গুণ। আজকের প্রতিবেদনে দেখে নিন পেঁয়াজের নানা গুণাগুণ, যেগুলো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে এসেছে-

ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ
পেঁয়াজের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট কোষের ডিএনএ কে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়ে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। পেঁয়াজের রস টেস্ট টিউবের টিউমার সেলকে ধ্বংস করে এবং শরীরের টিউমারের বৃদ্ধি রোধ করে। বিশেষতঃ ব্রেইন, কোলন এবং ঘাড়ের ক্যান্সারের সঙ্গে লড়তে সাহায্য করে।

সংক্রমণ সারাতেঃ
পেঁয়াজের মধ্যে কার্মিনেটিভ, অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল, অ্যান্টিসেপ্টিক এবং অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় পদার্থ মজুত রয়েছে। তাই শরীরে কোথাও সংক্রমণ ঘটলে কাঁচা পেঁয়াজ বেশি করে খেলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।

হজমশক্তি বৃদ্ধিতেঃ
যাদের হজমে সমস্যা রয়েছে তারা রোজ কাঁচা পেঁয়াজ খেতে পারেন। পেঁয়াজ খাবার হজমের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন এনজাইম বাড়াতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিকদের জন্যঃ
শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়াতে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে পেঁয়াজ উপকারি। ফলে ডায়াবেটিসের প্রকোপ বৃদ্ধির সুযোগ কমে।

যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ
যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে পেঁয়াজ অত্যন্ত উপকারি। প্রতিদিন আধা গ্লাস করে পেঁয়াজের রস খেলে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। অনেকে পেঁয়াজের রস খেতে পছন্দ করেন না। সেক্ষেত্রে তারা খাবারের সাথে কাঁচা পেঁয়াজ খেলেও উপকার পাবেন।

জ্বর-সর্দি-কাশি কমাতেঃ
ঠান্ডা লাগার ফলে গলা ব্যথা, সর্দি-কাশি, জ্বর, অ্যালার্জি বা সামান্য গা ব্যথায় দারুণ কাজ করে। সামান্য পেঁয়াজের রসের সঙ্গে খানিকটা মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যাবে। রেসিপিঃ একটা পেঁয়াজকে কেটে নিয়ে তার রস সংগ্রহ করে নিন। তারপর তাতে কয়েক ড্রপ মধু মিশিয়ে এই মিশ্রন দিনে কম করে দুবার পান করলেই কাশি কমে যেতে শুরু করবে।

স্মৃতিশক্তির উন্নতিতেঃ
নিয়মিত কাঁচা পেঁয়াজ খেলে ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটে। পাশাপাশি নার্ভাস সিস্টেমের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে একাধিক ব্রেইন ডিজিজ হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।

নাক থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করতেঃ
গ্রীষ্মে বা শীতে অনেকের নাক থেকে রক্তপাত হয়। যদি এ সময়ে কাছাকাছি পেঁয়াজ থাকে তাড়াতাড়ি কেটে তার ঘ্রাণ নিন। এতে রক্তপাত কমে যাবে বা একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে।

পুড়ে গেলেঃ
পুড়ে গেলে ক্ষতস্থানে এক টুকরো পেঁয়াজ কিছু সময়ের জন্য রেখে দিন। অল্প সময়েই দেখবেন জ্বালা ভাব কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতও অনেকটা সেরে গেছে।

ত্বকের সমস্যা মেটাতেঃ
পোকামাকড়ের কামড় কিংবা ব্রণ-ফুস্কুরি জাতীয় সমস্যা থাকলে সে সমস্ত জায়গায় একটু পেঁয়াজের রস লাগান। একটু জ্বালা করলেও দ্রুত সমাধান পাবেন।

হার্ট ভালো রাখতেঃ
শরীরে ভাল কোলেস্টেরল বা এইচ ডি এল-এর মাত্রা বাড়িয়ে একদিকে যেমন শরীরকে চাঙ্গা রাখে, তেমনি অন্যদিকে খারাপ কোলেস্টরলের পরিমাণ কমিয়ে হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। এভাবে পেঁয়াজ আমাদের আয়ু বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।

মুখের বদ-গন্ধ দূর করেঃ
কাঁচা পেঁয়াজ খেলে মুখ গহ্বরের উপস্থিত ব্যাকটেরিয়াগুলি মরতে শুরু করে। ফলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। সেই সঙ্গে মাড়িতে নানাবিধ রোগ হওয়ার শঙ্কাও কমে।

ইনসমনিয়ার মতো রোগের প্রকোপ কমাতেঃ
ইনসমেনিইয়া বা রাতজাগার মতো রোগের উপশমে পেঁয়াজ দারুন কাজে আসে।

আঁচিল দূর করতেঃ
গোল করে পেঁয়াজ কেটে আঁচিলের উপর রেখে একটা কাপড় দিয়ে বেঁধে দিন। যাতে সেটি পরে না যায়। প্রতিদিন রাতে শুতে যাওয়ার আগে এমনটা করলে অল্প দিনেই দেখবেন আঁচিল খসে পরে গেছে।

অন্যান্য পুষ্টিগুণঃ
পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, সালফার, ভিটামিন বি এবং সি রয়েছে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.