কেরাণীগঞ্জে চালু হচ্ছে অত্যাধুনিক মাদক নিরাময় কেন্দ্র

পুলিশ কল্যাণ ট্রাষ্টের উদ্যোগে রাজধানীর শহরতলী দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে শিঘ্রই চালু হতে যাচ্ছে ওয়েসিস নামক একটি মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র। অত্যন্ত মনমুগ্ধকর ও নান্দনিক পরিবেশে উন্নত ব্যবস্থাপনায় দেশের সবচেয়ে অত্যাধুনিক মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র হবে এটি। ঠিক এমনটিই জানিয়েছেন এ পুনর্বাসন কেন্দ্রটির পরিচালক পুলিশ সুপার ডা. এসএম শহীদুল ইসলাম পিপিএম।
সম্পূর্ণ অলাভজনক এ প্রতিষ্ঠানটি আগামী ১ অক্টোবর থেকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর কথা থাকলেও রোগী ভর্তি হবে ২০ সেপ্টেম্বর থেকে।

এ লক্ষে ইতোমধ্যেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন কর্র্তপক্ষ। এখন কেবল উদ্বোধনের জন্য অপেক্ষার পালা। সাততলাবিশিষ্ট ৬০ শয্যার এই আধুনিক মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি খোলা থাকবে ২৪ ঘণ্টা। যেখানে ২২টি কক্ষের ১৬টিতে ৪৬টি শয্যা থাকছে পুরুষদের জন্য । এছাড়া বাকি ছয়টি কক্ষে ১৪টি শয্যা থাকছে নারীদের জন্য । এরমধ্যে ডাবল কেবিন ২৮টি, ট্রিপল কেবিন ১৫টি এবং জেনারেল ওয়ার্ডে থাকছে ১১টি বেড। এছাড়া জেনারেল ট্রিপল বেড আছে ছয়টি। জেনারেল ওয়ার্ড ছাড়া সব ওয়ার্ড বা কক্ষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। পরিচালিত হবে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে। উন্মুক্ত থাকবে সর্বসাধারণের জন্য। পুনর্বাসন কেন্দ্রটি পরিদর্শনকালে এমনসব তথ্যই জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সুপার ডা. এসএম শহীদুল ইসলাম।

এছাড়া প্রকল্পটির ছাদে রয়েছে গার্ডেন। যেখানে ছাদ বাগানে প্রাকৃতিক পরিবেশে খোলা আকাশের নিচে বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইয়োগা এবং মেডিটেশন করবে রোগীরা। ছাদ বাগানের পাশে রয়েছে ব্যায়ামাগার। ৬ষ্ঠ তলায় আছে নার্সিং স্টেশন। পঞ্চমতলায় আছে বিশেষ কেবিন ও ইনডোর গেমসের ববস্থা। সেখানে আছে টেবিল টেনিসসহ নানা ধরনের খেলার সরঞ্জামাদি। আছে লাইব্রেরি। চতুর্থতলায় রয়েছে ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা, সাধারণ ওয়ার্ড এবং সাধারণ কেবিন। ভবনের তৃতীয়তলায় আছে কেবিন বøক, ডাইনিং ও বিশেষ নার্সিং স্টেশন। ভবনের দ্বিতীয় তলা ব্যবহৃত হবে প্রশাসনিক বøক হিসেবে। সেখানে থাকছে প্যাথলজি বিভাগও। আছে সাইকোলজি কাউন্সিলিং ও ফ্যামিলি কাউন্সিলিং এবং স্যাম্পল কালেকশন রুম।
তাছাড়া পুলিশের অত্যাধুনিক এই মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটির অন্যতম চমক হচ্ছে গ্যাস ক্রমোটোগ্রাফি মেডিকেল ইকুইপমেন্ট। এই মেশিনের মাধ্যমে রক্ত ও প্রসাব ছাড়াও চুল থেকেও ডোপ টেস্ট করা যাবে। তিন মাস আগেও কেউ মাদক সেবন করে থাকলে তা ধরা পড়বে। দেশে প্রথমবারের মতো অত্যাধুনিক এই মেশিনটি স্থাপন করা হচ্ছে এই নিরায় কেন্দ্রে। এর ফলে দ্রæততম সময়ে শতভাগ নির্ভুল রিপোর্ট পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

ওয়েসিস কর্তৃপক্ষ সূত্র জানাযায় যে, সাধারন মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলাতে অহরহই আত্মহত্যার মত অনাকাঙ্খিত সব ঘটনা ঘটে থাকে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে ওয়েসিস মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ তাদের এ কেন্দ্রের রুমগুলো এমনভাবে তৈরি করেছেন, যেখানে কেউ চাইলেও আত্মহত্যা করার সুযোগ পাবেন না। কারণ কোনো রুমে সিলিংফ্যান নেই। তার পরিবর্তে স্থাপন করা হয়েছে বিশেষ ফ্যান । যেখানে ঝুলে আত্মহত্যা করা সম্ভব নয়। তাছাড়া ২০ কেজি ওজনের বেশি কিছু ঝুললেই ভেঙে পড়বে এ ফ্যান। এছাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রটির প্রতি রুমেই রয়েছে এটাস্ট বাথরুম। অথচ কেউ যাতে বাথরুমে গিয়ে আত্মহত্যা করতে না পারে সেজন্য কোনো বাথরুমেই রাখা হয়নি লক সিস্টেম। তার পরিবর্তে রাথরুমগুলোর দরজায় লাগানো হয়েছে ম্যাগনেট। বাথরুমের শাওয়ারে রডের পরিবর্তে দেওয়া হয়েছে বিশেষ প্লাস্টিক। তাই শাওয়ারেও আত্মহত্যার সুযোগ নেই। প্রতি ফ্লোরের সিঁড়িতে আছে বিশেষ লকের ব্যবস্থা। তাই কোনো রোগী ইচ্ছা করলেই এক ফ্লোর থেকে অন্য ফ্লোরে অবাধে চলাচল করতে পারবেন না।

মাদক নিরাময়কেন্দ্রে জানালার সঙ্গে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা ঘটনা মাঝে মধ্যে ঘটে। কিন্তু ওয়েসিস মাদক নিরাময় কেন্দ্রের জানালায় রয়েছে স্বচ্ছ কাচ। জানালার গ্রিল হিসেবে দেওয়া হয়েছে শক্ত নেট। যেখানে কোনো কিছু বাঁধার সুযোগ নেই। জানালার পর্দাগুলো লাগানো হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থায়। জোরে টান দিলে নিচে পড়ে যাবে। তাই জানালা বা পর্দা ব্যবহার করে আত্মহত্যার ঝুঁকি থাকছে না। বেশির ভাগ রুমে রয়েছে দুটি করে বেড। তবে ভিআইপি কেউ একা থাকতে চাইলে ওই রুম থেকে একটি বেড অপসারণের সুযোগ রয়েছে।

জানাযায়, মোট ৮৫ জন জনবল সংখ্যা নিয়ে চালু হতে যাচ্ছে এ মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি। এর মধ্যে একজন পরিচালক (এসপি পদমর্যাদার), তিনজন সহকারী পরিচালক, চারজন কো-অর্ডিনেটর এবং ২৭ জন নার্সিং অফিসার বা মেট্রন রয়েছে। এছাড়া হিসাব শাখায় ২ জন, নিরাপত্তা ও রিসিপশন শাখায় ১১ জন, কন্ট্রোল রুমে ছয়জন এবং প্রশাসন শাখায় জনবল আছে আরও ১৪ জন।

প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান। আমাদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কয়েক বছরের মধ্যে মানিকগঞ্জে আরও একটি অত্যাধুনিক মাদক নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সেখানে ইতোমধ্যে ১০ বিঘা জমি কেনা হয়েছে। আরও জমি কেনা হবে। ওই কেন্দ্রটিতে সুইমিং পুল এবং গার্ডেনসহ নানা ধরনের অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। প্রস্তাবিত কেন্দ্রটি নির্মাণ করতে সময় লাগবে। এজন্য আপাতত কেরানীগঞ্জে প্রকল্পটি শুরু করছি। সম্পূর্ণ অলাভজনক এই সেবা নিঃসন্দেহে একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ। যেখানে আর্ন্তজাতিক মানের সেবা পাবেন সেবা গ্রহীতারা এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন আমাদের অনেক সফলতার মাঝে আশা করছি, আমাদের এ প্রকল্পটিও সফলতার মুখ দেখবে।

ওয়েসিস মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের পরিচালক পুলিশ সুপার ডা. এসএম শহীদুল ইসলাম বলেন, পুলিশের আইজি ড. বেনজীর আহমেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী নিরাময় কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে। যা আধুনিক পুলিশের আইকন খ্যাত ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমানের সার্বিক তত্তাবধানে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন,প্রকল্পটি শুরুর আগে আমরা বিভিন্ন মাদক নিরাময় কেন্দ্র ঘুরে দেখেছি। ওইসব কেন্দ্রে যেসব ত্রুটি চোখে পড়েছে, এই কেন্দ্রে সে ধরনের কোন ত্রæটি রাখা হয়নি। কাজেই নতুন এ প্রকল্পটির সফলতা নিয়ে তিনিও যথেষ্ঠ আশাবাদি।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.