করোনাভাইরাসের মহামারীতে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে ‘যত টিকা দরকার তত টিকাই কেনা হবে’ বলে সংসদে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে সংসদ নেতার সমাপনী ভাষণে তিনি এই প্রতিশ্রুতি দেন।
টিকার সঙ্কটে দেশে টিকাদানে ছন্দপতনের প্রসঙ্গ ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর যখনই বিশ্বে টিকা নিয়ে গবেষণা শুরু হয়, সরকার তখন থেকেই টিকা সংগ্রহের জন্য সব দেশে যোগাযোগ শুরু করেছিল।
পাশপাশি ভারত থেকে নগদ টাকা দিয়ে টিকা কেনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সংক্রমণ প্রকট আকার ধারণ করলে ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেয়, ফলে বাংলাদেশ তখন কিছুদিন সমস্যায় পড়ে।
“কিন্তু বর্তমানে টিকা এসে গেছে। যেমন ফাইজারের টিকা যেটা এসেছে, আমরা বলেছি যারা বিদেশে আমাদের শ্রমিক, যারা যাচ্ছেন, তাদের অগ্রধিকার থাকবে এই টিকা পাওয়ায়।
“আর গতকাল রাতে এবং আজকে খুব ভোরে মডার্না এবং সিনোফার্মের টিকা বাংলাদেশে পৌঁছে গেছে। মডার্না থেকে ২.৮৫ মিলিয়ন চলে এসেছে আর সিনোফার্মের ২ মিলিয়ন এসে গেছে।”
সিনোফার্মের ওই ২০ লাখ টিকা যে বাংলাদেশের কেনা টিকার অংশ, সে কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, “তার আগে তারা আবার আমাদেরকে চীন থেকে কিছু উপহারও পাঠিয়েছে এবং ভারতও কিছু উপহার দিয়েছে।”
পৃথিবীর অন্যান্য দেশ এবং টিকা উৎপাদনকারী কোম্পানির সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আরো টিকা আমরা নিয়ে আসব কিনে। যত লাগে আমরা কিনব। তার জন্য আলাদা বাজেটে টাকাই রাখা আছে। এর জন্য কোনো চিন্তা হবে না।
“আমরা চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান থেকে শুরু করে সব দেশের সঙ্গেই যোগাযোগ করছি। যেখানেই পাওয়া যাচ্ছে নিয়ে নিচ্ছি। আমাদের নিজেদের প্লেন পাঠিয়ে আমরা চীন থেকে সিনোফার্মের টিকা নিয়ে এসেছি। এভাবে আমরা কিন্তু সংগ্রহ করছি।”
দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, “সমস্ত টিকা বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। আমরা কিনছি অনেক টাকা দিয়ে। প্রথমে যেটা কিনেছিলাম সেটা… কিন্তু এখন আমাদের অনেক দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। তারপরও জনগণের জন্য, জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে আমরা বিনামূল্যে টিকাদান কর্মসূচি নিয়েছি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাজেটেও প্রচুর পরিমাণে টাকা আমরা রেখেছি। ৩২ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। আরো ১০ হাজার কোটি টাকা আলাদা রাখা আছে রিজার্ভ, যদি লাগে আমরা সেটা ব্যবহার করব।”
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে গণটিকাদান শুরু হয়। কিন্তু ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলে টিকার সঙ্কটে গত ২৫ এপ্রিল প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে এ পর্যন্ত ১ কোটি ২ লাখ ডোজ টিকা এসেছে। যারা প্রথম ডোজ পেয়েছেন, তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার মতো টিকা দেশে নেই।
এই প্রেক্ষাপটে সরকার অন্যান্য উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়, চীনের সিনোফার্ম থেকে দেড় কোটি ডোজ টিকা কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
এর মধ্যে ২০ লাখ ডোজ শুক্রবার রাতে ও শনিবার সকালে দুটি ফ্লাইটে দেশে এসেছে। এছাড়া কোভ্যাক্সের আওতায় দুই ফ্লাইটে এসেছে মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ টিকা।
এর মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাস মহামারীর মারাত্মক বিস্তারের মধ্যে টিকা নিয়ে চলমান সঙ্কট আপাতত কাটল।
দেশে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৩ লাখ মানুষকে দুই ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। ৪৫ লাখ ডোজ দিয়ে আরও সাড়ে ২২ লাখ মানুষের টিকার কোর্স সম্পন্ন করা যাবে।