অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রই আশা
দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার (কোভিশিল্ড) দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় আছেন প্রায় ১৬ লাখ মানুষ। তাদের টিকার ব্যবস্থা করতে হন্যে হয়ে চেষ্টা করছে সরকার। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য কোনো দেশের কাছ থেকে ভরসা পাওয়া যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা আছে। বাইডেন প্রশাসন সম্প্রতি তার মজুদ থেকে ছয় কোটি ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা ও দুই কোটি ডোজ অন্যান্য টিকা বিশ্বকে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে চলতি জুন মাসেই যুক্তরাষ্ট্র দিচ্ছে প্রায় দুই কোটি ডোজ টিকা। তবে সেই ডোজগুলোর ৭৫ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র দেবে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ তার ঘাটতি টিকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে আছে। হোয়াইট হাউস এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, বাংলাদেশসহ ১৬টি দেশকে যুক্তরাষ্ট্র ৭০ লাখ ডোজ টিকা দেবে।
এমন পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। তার এ সফরের উদ্দেশ্য নিউ ইয়র্কে রোহিঙ্গাবিষয়ক একটি আলোচনা ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) একটি বৈঠকে অংশ নেওয়া। এলডিসির বৈঠকে তিনি বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য টিকা চাইবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ২০ লাখ ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা চেয়েছে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসসহ প্রবাসী বাংলাদেশিরাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা চলছে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) ওই দেশটিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয়নি এখনো। এর ফলে ওই টিকা রপ্তানিতে জটিলতা আছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএর অনুমোদন পেয়েছে এমন টিকা যেমন ফাইজার, মডার্নার টিকা রপ্তানি করা তুলনামূলক সহজ। ওই টিকাগুলো যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় রপ্তানির বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, কভিডের সব টিকা নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে তারা বাংলাদেশকে টিকা দেবে। তবে কী পরিমাণ দেবে যুক্তরাষ্ট্র এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
এদিকে গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের একটি সহায়তা চালান বাংলাদেশে পৌঁছার পর গতকাল বুধবার আরেকটি চালান বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড জে অস্টিন এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন এবারের চালানে কভিড মোকাবেলায় পিপিইসহ অন্য সামগ্রী আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে চীনের কাছ থেকে আরো ছয় লাখ সিনোফার্ম টিকা পাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া চীন ও রাশিয়ার কাছ থেকে বাণিজ্যিকভাবে টিকা পাওয়ার চেষ্টা চলছে। এ ক্ষেত্রে কাজ এগিয়ে চলছে। কিন্তু সরকারের মূল দুশ্চিন্তা এখন ১৬ লাখ লোকের অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করা নিয়ে।
অন্যদিকে ‘কভিড-১৮ ভ্যাকসিন্স গ্লোবাল অ্যাক্সেস (কোভ্যাক্স)’ উদ্যোগ থেকেও টিকা যথাসময়ে পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, কোভ্যাক্সের আওতায় বাংলাদেশের জন্য এক লাখ ৬২০ ডোজ ফাইজার-বায়োএনটেক টিকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সেই টিকা এ মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশকে সরবরাহ করা হয়েছে। কোভ্যাক্স বাংলাদেশের জন্য এক কোটি ৯ লাখ আট হাজার ডোজ সেরাম-অ্যাস্ট্রাজেনেকা (কভিশিল্ড) টিকা বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এক ডোজও সরবরাহ করতে পারেনি।
সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এসআইআই) গত মে মাসেই জানিয়ে দিয়েছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ তারা কোভ্যাক্স ও অন্য দেশে টিকা সরবরাহ শুরু করতে পারে। অর্থাৎ সেরাম ইনস্টিটিউট কোভ্যাক্সকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা (কোভিশিল্ড) না দিলে বাংলাদেশের কোভিশিল্ড টিকা প্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র তার মজুদে থাকা অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা সরবরাহ করলে সাময়িক সংকট কিছুটা হলেও কাটতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র গত বছর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা উদ্ভাবন চেষ্টার সময় সেখানে প্রায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের পাশাপাশি টিকা উদ্ভাবন হওয়ার পর ৩০ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহের আদেশ দিয়েছিল।