সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহের পাশাপাশি দেশে উৎপাদনেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়ে বিভিন্ন দেশ ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ তথ্য জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে লিখিত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বেগম মনিরা সুলতানা। জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বর্তমান সরকার করোনা মহামারি থেকে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শুরু থেকেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দেশব্যাপী ও অঞ্চলভিত্তিক লকডাউন কার্যকরসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি দরিদ্র মানুষকে ত্রাণ সহযোগিতা প্রদানসহ জীবিকা ও অর্থনীতি বাঁচাতে সরকার বিভিন্ন প্রণোদনামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, প্রশাসনসহ করোনা মোকাবেলায় ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের জন্য সুরক্ষাসামগ্রী প্রদান, আর্থিক প্রণোদনা প্রদান, যথাসময়ে টেস্ট কিট আমদানি এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ল্যাব স্থাপনসহ করোনা পরীক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করায় ভাইরাসের বিস্তার রোধে দক্ষিণ এশিয়াসহ অনেক উন্নত দেশের চেয়ে বাংলাদেশ সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশ্বের যেসব দেশ টিকাদান কার্যক্রম প্রথম দিকে শুরু করতে সক্ষম হয়, বাংলাদেশ তার অন্যতম। যথাসময়ে করোনার টিকাপ্রাপ্তির বিষয়ে সরকার শুরু থেকেই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। টিকা সংগ্রহে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো হলো ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে সরকারের সংগৃহীত এবং ভারত সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া মোট এক কোটি দুই লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দ্বারা করোনা টিকাদান কার্যক্রম চলমান। ১৮ মে পর্যন্ত দেশের চল্লিশোর্ধ্ব ও সম্মুখসারির বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে মোট ৯৬ লাখ ৪১ হাজার ৩১২ ডোজ টিকা প্রদান করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ভারত থেকে টিকা সংগ্রহের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ভারতে করোনা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটায় এপ্রিলে ভারত সরকার টিকা রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ফলে বাংলাদেশ সরকার বিকল্প উৎস হিসেবে চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়। এরই মধ্যে চীনের সিনোফার্ম থেকে টিকা ক্রয়ের বিষয়টি মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন করা হয়েছে। জুন, জুলাই ও আগস্ট—প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে টিকা চীন থেকে পাওয়া যাবে। চীন সরকারের কাছ থেকে কভিড-১৯ ভ্যাকসিনের পাঁচ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে পাওয়া গেছে। এসব ভ্যাকসিন প্রদানের কাজ ২৫ মে শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি থেকে ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর জন্য ভ্যাকসিন সংগ্রহের কাজ চলছে। এরই মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় জরুরি ভিত্তিতে ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি বরাবর পত্র পাঠিয়েছে। ফাইজারের টিকার এক লাখ ৬২০ ডোজ আজ (২ জুন) দেশে পৌঁছাবে বলে নিশ্চিত করেছে কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি কর্তৃপক্ষ। সরকার রাশিয়া থেকে টিকা আমদানির জন্যও এরই মধ্যে আনুষঙ্গিক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। মহামারি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন দেশ ও ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিবিড় যোগাযাগ চলছে।
শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী
গতকাল অধিবেশনে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। চলতি সংসদের সদস্য আবদুল মতিন খসরু ও আসলামুল হকের মৃত্যুতে এই শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী এ সময় বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন প্রয়াত সংসদ সদস্য আবদুল মতিন খসরু। এই অধিকার প্রতিষ্ঠার কাজ সহজ ছিল না। তিনি এ বিষয়ে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। অদম্য শক্তি ও সাহস নিয়ে তিনি কাজ করেছেন। গত অধিবেশনেও তিনি সংসদে ছিলেন। কিন্তু এখন নেই—এটাই সত্য। এ ছাড়া অনেকেই চলে গেছেন। এটা খুবই মর্মান্তিক। কোনোভাবে তা মেনে নেওয়া যায় না। আমি তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করছি। একই সঙ্গে তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।’
ফিলিস্তিনিদের ওপর হত্যা-নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর যে হত্যা-নির্যাতন চালানো হয়েছে, তা খুবই বর্বর। শিশু ও নারীরাও রক্ষা পায়নি। এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্বের অনেকেই বড় বড় কথা বলেন। কিন্তু এ বিষয়ে নীরব থাকেন। আমরা ফিলিস্তিনের জনগণের সঙ্গে আছি। তাদের ওপর সব নির্যাতন ও নিপীড়ন বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘করোনা আমাদের অনেককেই কেড়ে নিয়েছে। এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এই ঢেউ মোকাবেলা করতে হবে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’ এ সময় প্রয়াত সংসদ সদস্যসহ সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘জঙ্গি, সন্ত্রাস, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা যখন যুদ্ধ করছি, তখন আবদুল মতিন খসরুর মতো দায়িত্বশীল নেতারা বিদায় নিচ্ছেন। বিদায় নিয়েছেন আসলামুল হকসহ অনেকেই।’ নিজ নিজ কাজের মধ্য দিয়ে তাঁরা অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আলোচনায় আরো অংশ নেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, সরকারি দলের সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফ, মুজিবুল হক, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, এ কে এম রহমতুল্লাহ্ ও সাদেক খান, বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা, জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও কাজী ফিরোজ রশীদ, বিএনপির মো. হারুনুর রশীদ প্রমুখ।