প্রথম ডোজ চলবে টিকার, দ্বিতীয় ডোজ বৃহস্পতিবার থেকে
করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার কার্যক্রম মঙ্গলবার থেকে বন্ধের যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা থেকে সরে এসেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ফলে দুই মাস ধরে যেভাবে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া চলছিল, তা অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে আগামী ৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া। এ জন্য আজ থেকে পর্যায়ক্রমে এসএমএস পাঠানো হবে প্রথম ডোজ নেওয়া সবার কাছে। প্রথম ডোজ নেওয়া কেউ এসএমএস না পেলেও তিনি যে তারিখে প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন, সেই তারিখের দুই মাস পর টিকা কার্ড নিয়ে আগের কেন্দ্রে গিয়ে দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারবেন।
জানা গেছে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি যাঁরা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাঁদের ডাকা হবে প্রথম দিন অর্থাৎ ৮ এপ্রিল, ওই দিন দ্বিতীয় ডোজ পাবেন ৩১ হাজার ১৬০ জন। যদিও গত ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি উদ্বোধনী কার্যক্রমের আওতায় যাঁদের প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে কয়েকজন গত চার-পাঁচ দিনে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য কেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন।
এদিকে টিকা ব্যবস্থাপনা নিয়ে গত রবিবার এক সভা অনুষ্ঠিত হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। ওই সভার আলোকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) ও টিকা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা গতকাল সোমবার ছয়টি নির্দেশনা জারি করেছেন। এতে বলা হয়, ৮ এপ্রিল থেকে টিকার দ্বিতীয় ডোজ চালু হবে এবং একই সঙ্গে প্রথম ডোজ চলতে থাকবে। আজ থেকে দ্বিতীয় ডোজের জন্য এসএমএস যাওয়া শুরু করবে। যাঁরা যে কেন্দ্রে প্রথম ডোজ নিয়েছেন, সেই কেন্দ্রেই দ্বিতীয় ডোজ নেবেন। ৬ এপ্রিল (আজ) থেকেই বেক্সিমকো ফার্মা সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে সব জেলায় টিকা পৌঁছে দেবে। আগে যাওয়া টিকার সঙ্গে তা সমন্বয় করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ওই টিকা বুঝে রাখবে। এ ছাড়া রমজান মাসেও যথারীতি টিকাদান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
ওই নির্দেশনায় বলা হয়, নিষেধাজ্ঞা চলা অবস্থায়ও টিকার কার্যক্রম চলবে। টিকাদান কেন্দ্রে যাওয়ার সময় তাঁরা টিকা কার্ড সঙ্গে নিয়ে রিকশা বা ব্যক্তিগত পরিবহন ব্যবহার করতে পারবেন। এ ছাড়া সভায় টিকা গ্রহণে
মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে মসজিদের মাইক, কেবল টেলিভিশন চ্যানেলসহ অন্যান্য মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণার ব্যবস্থা করতে হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়।
ড. ফ্লোরা ওই নির্দেশনাপত্রে উল্লেখ করেন, টিকা কার্যক্রম বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দ্বিতীয় ডোজের জন্য নতুন করে কোনো নিবন্ধন করতে হবে না। আগের নিবন্ধন অনুসারে যাঁরা যেই তারিখে প্রথম ডোজ দিয়েছিলেন তার দুই মাসের মাথায় একই তারিখে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষ কিছুটা দেরি হলেও কোনো অসুবিধা নেই। আর যাঁরা যেদিন দ্বিতীয় ডোজ পাবেন তার দু-এক দিন আগে থেকে এসএমএস পেতে শুরু করবেন।’
একই সঙ্গে প্রথম ডোজ ও দ্বিতীয় ডোজ চালানো হলে প্রয়োজনীয় টিকার জোগান মিলবে কি না, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যেই কিছু টিকা আসবে, তবে দিনক্ষণ সম্পর্কে এখনো বলা যাচ্ছে না।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দেশের বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মা ও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের ত্রিপক্ষীয় ক্রয় চুক্তির আওতায় প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ টিকা দেশে আসার কথা। সেরামের কারখানায় উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার জন্য এই চুক্তি হয় গত বছরের নভেম্বরে। পরে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে দুই দফায় টিকা আসে মোট ৭০ লাখ ডোজ। প্রথমবার আসে ৫০ লাখ এবং পরে আসে ২০ লাখ ডোজ। ফলে ফেব্রুয়ারিতে ৩০ লাখ ডোজ বকেয়া পড়ে যায়। মার্চে ৫০ লাখ ডোজের কোনো টিকাই আসেনি। অর্থাৎ ৮০ লাখ ডোজ টিকা বকেয়া পড়ে গেছে। এর বাইরে ভারত সরকার থেকে বাংলাদেশ সরকারকে ৩২ লাখ ডোজ টিকা উপহার দিয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশে সব মিলিয়ে টিকা এসেছে এক কোটি দুই লাখ ডোজ, যার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত (দুই মাসে) টিকা দেওয়া হয়েছে ৫৫ লাখের বেশি মানুষকে। অর্থাৎ এখন সরকারের হাতে টিকা আছে ৪৬ লাখের কিছু বেশি। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনেকটাই দোটানায় পড়ে গেছে টিকা ব্যবস্থাপনা সামাল দিতে গিয়ে।
অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র উদ্বেগ প্রকাশ করে কালের কণ্ঠকে জানায়, গত দুই মাসে যে পরিমাণ টিকা আসার গ্যারান্টি দেওয়া ছিল, সেই টিকা আসেনি। ফলে সামনের দুই মাসে প্রয়োজনমতো পুরো টিকা আসবে তেমন গ্যারান্টিতেও আস্থা রাখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় এখন প্রথম ডোজ ও দ্বিতীয় ডোজ একই সঙ্গে চললে দ্বিমুখী ঝুঁকি রয়েছে। একটি হচ্ছে, এখন পর্যন্ত যে ৫৫ লাখ মানুষ প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাঁদের সবাই দ্বিতীয় ডোজ প্রাপ্য হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আগামী দুই মাসের মধ্যে কমপক্ষে ৫৫ লাখ টিকা লাগবে শুধু দ্বিতীয় ডোজের জন্যই। কিন্তু আছে ৪৬ লাখ; ঘাটতি গতকাল পর্যন্ত আট লাখ। এখান থেকে যদি প্রথম ডোজ আরো চালানো হয়, তা কমে যাবে এবং ওই ঘাটতি দ্বিতীয় ডোজের ওপর প্রভাব ফেলবে। আবার যদি প্রথম ডোজ বন্ধ করে দেওয়া হয়, তবে নিবন্ধন করেও প্রথম ডোজের টিকা এখনো নেননি এমন ১৫ লাখের বেশি মানুষের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হবে। নিবন্ধন বৃদ্ধির সঙ্গে ওই সংখ্যা আরো বাড়তে থাকবে। ফলে এখন একমাত্র পথ হচ্ছে যেকোনোভাবেই হোক টিকা জোগাড় করা।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গতকাল বিকেল পর্যন্ত দেশে করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৬৯ লাখ ৪৫ হাজার ৬৭৮ জন। টিকা নিয়েছেন ৫৫ লাখ ৩৯ হাজার ৪৯৪ জন। গতকাল এক দিনে টিকা নিয়েছেন ৪১ হাজার ৩২২ জন।