নরসিংদীতে স্কোয়াশ চাষে সাফল্য
বিদেশি সবজি স্কোয়াশ চাষ শুরু হয়েছে নরসিংদীর মনোহরদীতে। কৃষি বিভাগের সহায়তায় প্রথমবারে ভালো ফলন পেয়ে খুশি অ্যাডভোকেট মো. আলমগীর হোসেন। নরসিংদী জজকোর্টের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আলমগীর হোসেন পেশায় একজন আইনজীবী হলেও নরসিংদীতে স্কোয়াশ চাষে অন্যদের পথ দেখাচ্ছেন। তিনি ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রতিবেদন দেখে স্কোয়াশ চাষে উৎসাহিত হন। চন্দনবাড়ী ইউনিয়নের মইষাকান্দী গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্কোয়াশ মূলত ইউরোপীয় দেশগুলোর শীতকালীন সবজি। এটি সুস্বাদু ও জনপ্রিয় সবজি হিসেবে বিদেশিদের কাছে অনেক আগে থেকেই পরিচিত। বেলে দো-আঁশ মাটিতে স্কোয়াশ চাষ ভালো হয়। বর্তমানে দেশে স্কোয়াশ একটি উচ্চমূল্যের ফসল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই সবজির চাষাবাদ বাড়ছে। প্রতিটি স্কোয়াশগাছ রোপণের পর থেকে প্রায় আড়াই মাসে ১৪ থেকে ১৫টির মতো ফল ধরে। এটি অনেকটা আমাদের দেশের বাঙ্গির মতো দেখতে ও মিষ্টি কুমড়ার মতো সবুজ। এই সবজির আদি নিবাস অস্ট্রেলিয়ায়। স্কোয়াশ উপজেলায় প্রথমবারের মতো চাষ শুরু হলেও বাজারে এর চাহিদা ও দাম ভালো হয়েছে।
আলমগীর হোসেন বলেন, “গতানুগতিক কৃষি থেকে কৃষকদের দৃষ্টি পরিবর্তন করে আধুনিক এবং লাভজনক কৃষিতে প্রবর্তন করার জন্য স্কোয়াশ চাষে আগ্রহী হই। ‘বদলে যাও বদলে দাও’ স্লোগানে সুদৃষ্টি অ্যাগ্রো নামের একটি প্রকল্প হাতে নিয়ে ৪০ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে স্কোয়াশ রোপণ করি। এই সবজির ফলন অনেক ভালো হয়। বীজ বপনের ৪৫ থেকে ৫০ দিনেই বাজারজাত করা যায়। প্রায় এক ফুট লম্বা একেকটি স্কোয়াশ দুই থেকে তিন কেজি ওজনের হয়। প্রতিটি স্কোয়াশের ওজন প্রায় এক কেজি হতেই স্থানীয় বাজারে বিক্রি শুরু করি। বর্তমান বাজারে স্কোয়াশ ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ৪০ শতাংশ জমিতে সবজির পরিচর্যা, বীজ ও সার ক্রয়সহ এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় লাভ অনেক বেশি। এখন পর্যন্ত এক লাখ ৩০ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। বাজার ভালো থাকলে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই আগামীতে এই সবজি চাষের পরিধি আরো বৃদ্ধি করার ইচ্ছা আছে।”
তিনি আরো বলেন, ‘তাঁর ক্ষেতটি বিষমুক্ত। আধুনিক মালচিং পদ্ধতি চাষাবাদ করায় পোকা-মাকড় থেকে রক্ষা করতে কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন হয়নি। এলাকায় এই সবজি নতুন হওয়ায় প্রতিদিন তাঁর ক্ষেত দেখতে আসছে অনেকেই। পরামর্শ নিচ্ছেন স্কোয়াশ চাষের। লাভজনক হওয়ায় অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছে স্কোয়াশ চাষের।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আয়েশা আক্তার বলেন, ‘স্কোয়াশ সবজি হিসেবে খুবই ভালো এবং ফলনও খুব ভালো হয়। অল্প জায়গায় ও কম পরিশ্রমে অধিক লাভজনক একটি সবজি। স্কোয়াশ চাষ বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।’
পুষ্টিগুণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘স্কোয়াশ সাধারণ কুমড়ার মতো সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এর খাদ্য ও পুষ্টিগুণ কুমড়ার চেয়ে অনেক বেশি। স্কোয়াশ শরীরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও বিটা ক্যারোটিন সরবরাহ করে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ও হৃদরোগীদের জন্য খুবই উপকারী।’