আগুন আবিষ্কারের গল্প
আগুন আবিষ্কারের ইতিকথাঃ
মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে সবচেয়ে বড় এবং বিস্ময়কর ঘটনা আগুন আবিষ্কার। আগুন যদি আয়ত্ত করতে না পারতো,তাহলে মানুষ আজকের এই পর্যায়ে কোন দিনই এসে পৌঁছাতে পারতো না।
তাই মানব সভ্যতার অগ্রগতির মূল ভিত্তি হলো আগুন।
আগুনের আবিষ্কারের পূর্ব সময়ঃ
আগুন আবিষ্কারের আগে মানুষের সাথে বন্যপ্রাণীদের ব্যাহত কোন পার্থক্য ছিল না। মানুষও বন্য প্রাণীদের মতোই কাঁচা খাদ্য ভক্ষণ করত। অন্য প্রাণীরা এখনো করে।
আগুনের আবিষ্কারের পরবর্তী সময়ঃ
আগুন আবিষ্কারের পরেই মানুষ প্রথম খাবার পুড়িয়ে খেতে শিখলো। আর তখন থেকেই বন্যপ্রাণীদের সাথে মানুষের পার্থক্যের আদি পর্বেরও সূচনা হলো সূচনা হলো। শুরু হল মানব সভ্যতার অগ্রগতির প্রথম ধাপ পার হবার পালা।
আগুন আবিষ্কারের ইতিহাসঃ
এ বিশাল কৃতিত্বের অধিকারী ছিলেন আমাদের পূর্ব-পুরুষ, সভ্যতার আদি পর্বের মানুষেরা, যারা কখনও বাস করত পর্বত গুহায়। তাই তাদেরকে আজ আমরা বলি গুহা মানব।
আদিপর্বের সেই গুহামানবেরাই যে সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেছিল তার প্রত্যক্ষ প্রমাণও পরে আবিষ্কৃত হয়েছে।
আধুনিককালের প্রত্নতাত্ত্বিকগণ প্রাচীন পর্বত গ্রহ থেকে আদি মানবদের যেসকল গৃহস্থালী সাজসরঞ্জাম আবিষ্কার করেছেন, তার মধ্য থেকে পাওয়া গেছে কাঠ কয়লা এবং অর্ধদগ্ধ পশুর হাড়। এমনকি কোনো কোনো স্থান থেকে পাথরে আগুনের গাছ লাগানোর চিহ্ন পাওয়া গেছে।
আখোকে অনুমান করা হয়, হয়তো আজ থেকে লক্ষ বছর আগের আদি পর্বের গুহামানবেরাও আগুনের ব্যবহার জানতো।
তাই আগুন আবিষ্কার কোনও হাল আমলের ঘটনা নয়। মানব সভ্যতার আদিপর্বের ইতিহাসের সঙ্গে আগুন আবিষ্কারের কাহিনীও ও অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ।
তবুও আজকে মনে প্রশ্ন জাগে, আদিপর্বের মানুষেরা সর্বপ্রথম কেমন করে আগুন জ্বালাবার কৌশল আবিষ্কার করেছিলো?
আগুন আবিষ্কারে বিজ্ঞানীদের ধারনাঃ
বিজ্ঞানীদের অনুমান- হয়তো আদিম মানুষেরা হঠাৎ করে আগুন জ্বালাতে শিখেনি। নিজের চেষ্টায় কোনোকালেই প্রথমে কেউ আগুন জ্বালাতে শেখিনি।
প্রথমে তারা আগুন দেখেছিল। আগুনকে চিনতে শিখেছিল। তাকে ব্যবহার করতে শিখেছিল। তারপর হয়তো কোনও একপর্যায়ে আগুন-নিজের চেষ্টা জ্বালাতে শিখেছিল।
আদিমানবদের আগুন দেখা বাপ্রথম আগুন আবিষ্কারের ঘটনাটাও ছিলো আকস্মিক।হয়তো গহীন অরণ্যের কোনও শুকনো মরা গাছে কখনো ঘটেছিল আকর্ষণীয় বজ্রপাত। তাতেই জ্বলে উঠেছিল আগুন।
আদিমানবেরা অদূরে দাঁড়িয়ে সবিস্ময়ে দেখেছিল সেই দৃশ্য। তারা আরো অবাক হয়েছিল যে, আগুন জ্বলে উঠতে আশেপাশের অন্ধকার কেমন জানি দূরে পালিয়ে গেল। অথবা কোনও গহন অরণ্যে দাবানল জ্বলে ওঠা থেকেই ওরা প্রথমে সাক্ষাৎ পেতে পারে আগুনের।
তারপর তারা সাহস করে আগুনের কাছে এসেছ। আগুনকে ধরে রেখেছে আরো মরা শুকনো কাঠ এনে জড়ো করে।
আগুন জ্বালাবার কৌশল তখনও তাদের আয়ত্তে আসেনি। কেটে গিয়েছিল এমনি করে হাজার বছর।
তারপর হয়তো একসময় আবার একদিন রক্ষা করেছিল তারা যে পর্বত গুহায় বাস করছে সেখানে একটি বড় আয়তনের পাথর এসে ছিটিয়ে পড়ল আর একটি পাথরের উপর। মুহূর্তেই দেখা দিল আগুনের ঝলকানি।
শুকনো গাছের উপর বজ্রপাত দেখে আদিমানবেরা প্রথম আগুন চিনতে পারল।
এমনকি পরেই গুহা মানবেরা বুঝল পাথরে পাথর ঘষে আগুন জ্বালানো সম্ভব। আসলে এটাই ছিল আগুন আবিষ্কারের আদি কথা।
তবু আদিপর্বের লোকেরা নতুন করে পাথরে পাথরে ঘষে আগুন জ্বালাবার চেয়ে জলন্ত আগুন জ্বালিয়ে রাখাটায় সহজ মনে করতেন।
ওরা একবার আগুন জ্বালিয়ে তাকে ধরে রাখতো বছর ধরে। কারণ নতুন করে আগুন জ্বালানোর ব্যাপারটি খুবই কষ্টসাধ্য কাজ।
আগুন কি জিনিস তখনও তারা কিছুই জানতো না। তাই এর মধ্যে লক্ষ করেছিল অলৌকিক কিছু। আগুন ডেকে আনার ব্যাপারটা ছিল খুবই বড় কিছু কর্মকান্ড।
এ কাজটি তখন করা হতো বড় অনুষ্ঠান করে। কাজটি করতো সমাজের পুরোহিত বলে পরিচিত একটি গোষ্ঠী। সাধারণ মানুষ তাতে অংশ নিতে পারত না। আগুন জ্বলেছিল আদি মানবের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। আগুন ছিল দেবতা। তাকে ডেকে আনার সহজ ছিল না। এ কাজ তো যে কেউ করতে পারে না।
তারপর থেকে মানুষ ধীরে ধীরে আগুন জ্বালাতে শিখল। এ কাজ করতো পাথরে পাথরে ঘষে শুকনো কাঠের কাঠ ঘোষে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আদি মানবেরা আগুন জ্বালাত পাথরে পাথর ঘষে।
উত্তর আমেরিকার আদিম মানুষেরা দুটো কাঠি পরস্পরের সাথে ঘষে আগুন জ্বালাতে পারতো।
এই আগুন মানুষকে দ্রুত সভ্যতার দিকে তাড়িয়ে নিয়ে এসেছে। আগুন থেকে মানুষ পেয়েছে শক্তির সন্ধান। আজও আগুনই সকল শক্তির উৎস।