রক্তাক্ত মিয়ানমার: রাজপথে আরও বড় আন্দোলনের প্রস্তুতি
নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ৩৮ জন নিহতের পরদিনও আরও বড় পরিসরে বিক্ষোভের পরিকল্পনা করছে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারীরা। সামরিক জান্তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই রাজপথে নামছেন তারা।
বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারীরা আগের দিনের চেয়েও বড় আকারে মিছিল-সমাবেশের আয়োজন করেছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স।
আন্দোলনকারীদের একজন মাউং সাউংখা বলেন, আমরা জানি যে কোনও মুহূর্তেই আমরা গুলিবিদ্ধ কিংবা খুন হতে পারি। তারপরও সামরিক জান্তার অধীনে বেঁচে থাকার কোনও মানে নেই। এ কারণেই এই পথ বেছে নেওয়া।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বৃহস্পতিবার ইয়াঙ্গুনে অন্তত দুটি বিক্ষোভের পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে।
এরআগে বুধবার সেনাশাসনের অবসান দাবিতে মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরে গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালিয়ে কমপক্ষে ৩৮ জনকে হত্যা করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। পুলিশ-সেনা বাহিনীর এই তাণ্ডবে আহত হয়েছেন অনেকে। আটক করা হয়েছে তিন শতাধিক মানুষকে। এক মাসের চলমান বিক্ষোভে এক দিনে নিহতের সংখ্যা এটাই সর্বোচ্চ।
গত এক মাসের বিক্ষোভে ৫০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা ও দেড় সহস্রাধিক মানুষকে আটক করেছে সেনা-পুলিশ। বিক্ষোভরত মানুষের বিরুদ্ধে হত্যা-নিপীড়ন বন্ধে সেনা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস।
১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার পর প্রথমেই বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছিল মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন। সেখানেই সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হচ্ছে। বুধবার শহরের রাস্তায় হাজারো বিক্ষোভকারী নেমে এলে তাদের ওপর গুলি চালায় সেনা-পুলিশ। এতে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে আটজন। আহত হয়েছেন অনেকে। আটক করা হয়েছে কয়েকশ বিক্ষোভকারীকে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এএফপি জানায়, বুধবার নিরাপত্তা বাহিনী নির্বিচারে শক্তি প্রয়োগ করায় রক্তে রঞ্জিত হয়েছে সাগাইং অঞ্চলের মনিওয়া শহর। সেখানে সেনাবিরোধী বিক্ষোভে গুলি চালিয়ে কমপক্ষে সাতজনকে হত্যা করেছে পুলিশ। শহরের উত্তরাঞ্চলে সন্ধ্যার দিকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে তাদের ওপর গুলি চালানো হয়। তিনজার শুনলেই নামের এক বিক্ষোভকারী জানান, ‘পরিস্থিতি খুবই ভয়ংকর, এ তো গণহত্যা। এখানকার পরিস্থিতি ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়।’
মনিওয়া শহরের পরিস্থিতি নিয়ে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, বিক্ষোভে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন বলে তারা নিশ্চিত হতে পেরেছেন। কয়েকজন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী এএফপিকে জানান, তারা দেখেছেন, রক্তাক্ত দুই বিক্ষোভকারীকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। তখন তারা মৃত নাকি জীবিত ছিল, তা নিশ্চিত করতে পারেননি তারা।
মনিওয়া শহরের প্রতিবেশী ও মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে বুধবারের বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে অন্তত দু’জন নিহত হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। তার মধ্যে ১৯ বছর বয়সী একজনের মাথায় গুলি লাগে।
মিইংয়ান শহরে নিজেদের বানানো ঢাল, ফেসশিল্ড নিয়ে রাস্তায় নামা বিক্ষোভকারীরা তিন আঙুল দেখিয়ে সামনে এগোতে শুরু করলে তাদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও গুলি চালানো হয়। ঘটনাস্থলে অন্তত একজন গুলিতে নিহত হন। এ ছাড়া হপাকান্তে একজন নিহত হয়েছেন।
মিয়ানমারের অশান্ত পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বেড়ে চললেও অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান ন্যাশন্সের (আসিয়ান) সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল বৈঠকে বসে কোনো অগ্রগতি অর্জন করতে ব্যর্থ হন। তবে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রতি সংযম দেখানোর আহ্বান জানালেও সদস্য দেশগুলোর মধ্যে শুধু ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও সিঙ্গাপুর সু চি ও অন্য বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই মিয়ানমারজুড়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সামরিক শাসনের অধীনে থাকা দেশটির গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই সেনাবিরোধী গণতন্ত্রপন্থিরা রাজপথে নেমে বিক্ষোভ করছেন। প্রথম দিকে সংযম দেখালেও কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ দমনে সহিংসতার পথ নিয়েছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।