বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর অন্যতম সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম রাত (০৪ মার্চ) ১ টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। এর আগে তিনি ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন । গত কয়েক দিন ধরে তিনি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
২০০৯ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এইচটি ইমাম। প্রথমে তিনি প্রশাসনিক উপদেষ্টা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করা এইচটি ইমাম ২০১৪ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন । গত তিনটি নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে ছিলেন। এদিকে এইচটি ইমাম সম্পর্কে উইকিপিডিয়া জানিয়েছে, তিনি তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের উচ্চ পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তা হয়েও ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ক্যাবিনেট মন্ত্রীর মর্যাদায় জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা নিয়োগ করেন। ২০১৪ তে তাকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়।তিনি একজন সুবক্তা ও সুলেখক। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা পরিচালনা বিষয়ে তার মূল্যবান কয়েকটি গ্রন্থ রয়েছে। উইকিপিডিয়া জানিয়েছে, তার জন্ম ১৯৩৯ সালের ১৫ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহরে। পিতা তাফসির উদ্দীন আহমেদ বি.এ. বি.এল. ও মাতা তাহসিন খাতুন। পিতার চাকুরির সূত্রে শৈশবে রাজশাহীতে অবস্থান এবং রাজশাহীতেই প্রাথমিক শিক্ষা। পরবর্তীকালে লেখাপড়া করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া ও কলকাতায়। ১৯৫২ সালে ম্যাট্রিক পাস করেছেন ঢাকা কলেজিয়েট হাইস্কুল থেকে। এরপর ভর্তি হন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে। এখান থেকেই ১৯৫৪ তে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এর পর ভর্তি হন রাজশাহী কলেজ এবং সেখান থেকে অর্থনীতিতে অনার্স সহ বি.এ. ডিগ্রী অর্জন করেন ১৯৫৬তে। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এ সময় তিনি প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির সাথে বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৫৮ তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর জীবিকার সন্ধানে তিনি রাজশাহী সরকারি কলেজে অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। এ সময় তিনি পাকিস্তানে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন। ১৯৬১ ব্যাচের সিএসপিদের মধ্যে তিনি ৪র্থ স্থান লাভ করেন এবং পাকিস্তান সরকারের উচ্চ পদে যোগদান করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স থেকে ‘উন্নয়ন প্রশাসনে’ পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে এম. এ. পাস করার পর তিনি রাজশাহী সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ১৯৬২ তে তিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে সদস্য হিসেবে তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করেন। শুরুতে রাজশাহী কালেক্টরেটে তিনি ১৯৬২-১৯৬৩ মেয়াদে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। এরপর তিনি পদোন্নতি লাভ করেন এবং ১৯৬৩-১৯৬৪ মেয়াদে নওগাঁ মহকুমা মহকুমা প্রশাসক বা এসডিও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে নারায়ণগঞ্জ মহকুমার এসডিও হিসেবে বদলী হন এবং প্রায় এক বৎসর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৫ তে তিনি ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন।
উইকিপিডিয়া জানিয়েছে, ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম ক্যাবিনেট সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর পর তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে ক্যাবিনেট সচিবের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। ১৯৭৫-এর ২৬ আগস্ট পর্যন্ত তিনি ক্যাবিনেট সচিবের পদে নিযুক্ত ছিলেন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত সাভারস্থ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত তিনি সড়ক এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব-এর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত পরিকল্পনা সচিবের পদে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া যমুনা মাল্টিপারপাজ ব্রিজ অথরিটির এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭১ এর মার্চ মাসে তিনি রাঙ্গামাটি জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর দায়িত্বে ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা। তিনি ২০০৯ থেকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা নিয়োগ করেন। ২০১৪ তে তাকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও দলীয় নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।
এইচ টি ইমামের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি এডভোকেট আবদুল হামিদ এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।