দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সব সমস্যা শুধু আইনি কাঠামো দিয়ে মোকাবিলা সম্ভব নয়

স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত সবাইকে প্রথমেই ভাবতে হবে রোগী কেন্দ্রিক সেবার কথা যার পূর্বশর্ত পেশাদারিত্ব এবং সদাচারণ। হাসপাতালে ন্যূনতম নির্দিষ্ট জায়গা পাবার আইনি অধিকার রোগীর থাকলেও বাংলাদেশের মতো দেশে সব সমস্যা আইনি কাঠামো দিয়ে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়াদের প্রায় সবাই বলেন তারা সেখানে তুলনামূলকভাবে হাসপাতাল বা চিকিৎসক থেকে ভালো আচরণ পেয়েছেন। স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অবকাঠামোগত দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান মন্দ নয়।

(২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরাম আয়োজিত ‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পারস্পরিক যোগাযোগ ও আচরণের ভূমিকা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এই মত জানান।

এতে অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন কানাডা থেকে ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টোর ডালা লানা স্কুল অফ পাবলিক হেলথ এর সহকারী অধ্যাপক ড. সফি ভূইয়া এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার খান খালিদ আদনান।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লুবনা ইয়াসমিনের। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরাম নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক এই আয়োজন করে আসছে।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাথে জড়িতরা সবাই জানেন এবং মানেন যে সেবাই উত্তম মন্তব্য করে ড. সফি বলেন, এক্ষেত্রে প্রথমেই চিন্তা করতে হবে রোগী কেন্দ্রিক সেবার কথা। আর তার পূর্বশর্ত হলো পেশাদারিত্ব এবং সদাচারণ। মনে রাখতে হবে, সবকিছুই রোগীর জন্য। যতোই ব্যস্ত থাকিনা না কেন, আমার কাছে আমার রোগী-ই প্রথম অগ্রাধিকার।

ব্যারিস্টার আদনান বলেন, হাসপাতালগুলো রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছে এ ধরনের কথা বলা হলেও দেশে একজন রোগীর হাসপাতালে ন্যুনতম নির্দিষ্ট জায়গা পাবার অধিকার আছে। সে জায়গা না দিতে পারলে হাসপাতালের বাড়তি রোগী নেয়া বেআইনি। তবে, এ সংক্রান্ত সমস্যা আইনি কাঠামো দিয়ে মোকাবিলা করাও সম্ভব নয় বলে তিনি স্বীকার করেন।

তিনি বলেন, মানুষ দেশে সুচিকিৎসা না পেয়ে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। এর ফলে দেশের টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। সরকার সেই মুনাফার কথা চিন্তা করে হলেও দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে পারে। এছাড়া যারা বিদেশে চিকিৎসা নিতে যান তারা প্রায় সবাই বলেন তারা হাসপাতাল বা চিকিৎসক থেকে ভালো আচরণ পেয়েছেন। দেশেও যদি রোগীরা এমন আচরণ পান তাহলে স্বাস্থ্য সেবায় শত সমস্যা থাকলেও তারা অন্তত মানসিকবভাবে তৃপ্তি পাবেন।

তবে অবকাঠামোগত দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান মন্দ নয় উল্লেখ করে ড. সফি প্রশ্ন রাখেন, সুব্যবস্থা বা সুচিকিৎসা না থাকলে অবকাঠামো থেকে কি লাভ? তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নেতৃত্ব বলত্র শুধু চিকিৎসককেই মনে করা হয় না; নার্স, ক্লিনার থেকে শুরু করে সচিব, মন্ত্রী সবাই এর মধ্যে পড়েন। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ১৭ কোটি মানুষের দেশে শত শত বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ থাকলেও কোথাও হেলথ সিস্টেম লিডারশিপ, হেলথ কেয়ার ম্যানেজমেন্ট কিংবা হেলথ বিহেভিয়ার এডুকেশন এর কোনো সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের কারিকুলাম মুখস্থ বিদ্যা নির্ভর হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। কিন্তু উন্নত দেশগুলোয় কারিকুলাম এমনভাবে তৈরি যেনো শিক্ষার্থী নিজেই উৎসাহী হয়ে পাঠে সম্পৃক্ত হয়। ব্রিটিশ আমলেত কারিকুলামকে ঢেলে সাজাতে হবে। একে আধুনিক করতে হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে ‘সার্ভেন্ট লিডারশিপ’ মনোভাব থাকতে হবে। রোগী-ই প্রথম এই মনোভাবও রাখতে হবে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাথে জড়িত সবার মধ্যে সেবার মানসিকতা থাকতে হবে। সারা দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যে কারো যে কোন গাফেলতির জন্য অভিযোগ জানাবার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.