‘জনগণের টাকা ফেরত না দিলে ভেতরে ঢোকানো হবে’

পিপলস লিজিংয়ের ঋণখেলাপিদের উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেছেন,আপনারা টাকা তুলে নিয়ে চলে গেছেন। আর পিপলস লিজিংয়ে যারা টাকা জমা রেখেছিল, তারা না খেয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। পিপলস লিজিংয়ের টাকা জনগণের টাকা, চোর-বাটপারদের না। আগে টাকা দিন, পরে কথা বলুন। তা না হলে ভেতরে (কারাগারে) ঢোকানো হবে।

পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের ঋণখেলাপি ও তাদের আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে আদালত এসব কথা বলেন। বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের ভার্চুয়াল একক বেঞ্চ বৃহস্পতিবার অসন্তোষ প্রকাশ করে এ মন্তব্য করেন।

এ সময় শুনানি করছিলেন আইনজীবী ড. সাঈদা নাসরিন। তার মক্কেল আদালতকে বলেন, তার কাছে ৩৮৪ কোটি টাকা পাওনা পিপলস লিজিংয়ের। এ সময় আদালত ঋণ খেলাপিদের সতর্ক করে বলেন, টাকা না দিয়ে কোনো মন্ত্রী বা কারো প্রভাবে কাজ হবে না। আইনের মধ্যে থেকেই টাকা ফেরত দিতেই হবে। আগে টাকা দেবেন, তারপর ইনস্টলমেন্টের (কিস্তি) আবেদন করবেন। না হলে কারাগারে যেতে হবে। এটা জনগণের সঞ্চয় করা টাকা। পিপলস লিজিংয়ের চোর-বাটপারদের টাকা না।

আদালত স্পষ্ঠ করে বলেন, অ্যাকাউন্ট থেকে পেমেন্ট দিতে তো বাধা নেই। আমি এখনই আদেশ দিয়ে দিচ্ছি। আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে পেমেন্ট দিতে পারবেন। কিন্তু ব্যক্তিগত খরচের জন্য টাকা তুলতে পারবেন না। বাংলাদেশ ব্যাংককেও এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, পিপলস লিজিংয়ে জালিয়াতির ঘটনায় বর্তমানে অনেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ রয়েছে।

আদালত আরও বলেন, আমরা চিন্তা করছি হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে, এ কোম্পানিকে বাঁচিয়ে রেখে টাকা উদ্ধার করা যায় কি না। আমানতকারীরা আজ খেয়ে না খেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। আমরা চেষ্টা করছি ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধারের।

অবসায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিকুইডেটর) মো. আসাদুজ্জামান খানের দেওয়া তালিকা দেখে ৫ লাখ টাকা এবং তার বেশি ঋণ নিয়ে খেলাপি হওয়া ২৮০ জনকে গত ২১ জানুয়ারি তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। তাদের মধ্যে আদালত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে হাইকোর্টে উপস্থিত হতে বলেন। তারই আলোকে ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত দিনে আদালতে ১৪৩ জনের হাজিরা ছিল। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় ৪৫ জন ঋণখেলাপি আদালতে স্বশরীরে হাজিরা হয়ে ব্যাখ্যা দেন। গত দুই দিনে যারা আসেননি তাদের আগামী ৯ মার্চ হাজির হতে বলেন আদালত। ওইদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুদক চেয়ারম্যান ও সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানের ভার্চুয়াল বক্তব্যে শুনবেন।

আদালত বলেছেন, আদালতের তলবে যারা আজকে আসেননি, তাদের আরেকবার সুযোগ দেওয়া হবে। এরপরও তারা আদালতে হাজির না হলে প্রয়োজনে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করা হবে।

আদালতে সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিকুইডেটর) মো. আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মেজবাহুর রহমান। ঋণ খেলাপিদের পক্ষে ছিলেন সৈয়দা নাসরিন, আব্দুস সাত্তার পালোয়ান, বেলায়েত হোসেন প্রমুখ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কাজী এরশাদুল আলম।

আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে না পারায় ২০১৯ সালের জুলাইতে পিপলস লিজিং অবসায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের আবেদন গ্রহণ করে আদালত। মূলত মালিকপক্ষের ঋণ জালিয়াতিসহ নানা উপায়ে অর্থ লোপাটের কারণে চরম খারাপ অবস্থায় পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বেশ আগেই খারাপ অবস্থা হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী ও বর্তমান নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ আলমসহ কয়েকজন কর্মকর্তা ঘুষ নিয়ে তা ধামাচাপা দিতেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পিপলস লিজিং ছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, এফএএস ফাইন্যান্স ও বিআইএফসির অর্থ ফেরত দিতে না পারার বিষয়টি সামনে আসে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতায় এনআরবি গ্লোবাল (বর্তমানে গ্লোবাল ইসলামী) ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের (বর্তমান আভিভা ফাইন্যান্স) সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার ২০১৪ সালে এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানা নিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা লোপাটের বিষয়টি তদন্ত করছে দুদক। পিকে হালদারের সহযোগি হিসেবে দুদকের মামলায় আটক ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক এমডি রাশিদুল ইসলাম ও পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করেছেন।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.