কাল থেকে সারাদেশে টিকাদান শুরু
সবকিছু ঠিক থাকলে কাল রোববার সারাদেশে একযোগে করোনাভাইরাসের গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে। সারাদেশের হাসপাতাল ও টিকাদান কেন্দ্রে এখন শেষ সময়ের প্রস্তুতি চলছে। সর্বশেষ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গতকাল শুক্রবার সিভিল সার্জনদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ। অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে সিভিল সার্জনদের বেশকিছু দিকনির্দেশনা দেন। রোববার সকালে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নিজে টিকা নিয়ে গণটিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। এরপর সারাদেশে একযোগে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত টিকা নিতে আগ্রহী দুই লাখ ৬০ হাজার ৪৩৬ জন সুরক্ষা ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করেছেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল এক লাখ ৮৭ হাজার। গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৩ হাজারের বেশি মানুষ টিকা পেতে নিবন্ধন করলেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রথম মাসে ৬০ লাখ মানুষকে টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। টিকা গ্রহণের জন্য নিবন্ধন অ্যাপে সাড়া কম থাকায় গত বৃহস্পতিবার ওই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনাসহ পরিকল্পনায় বেশকিছু পরিবর্তন করা হয়। নতুন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রথম মাসে ৩৫ লাখ মানুষ টিকা পাবেন। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম সমকালকে বলেছেন, বর্তমানে স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে ৭০ লাখ টিকা মজুদ আছে। প্রত্যেককে দুই ডোজ করে এই ৭০ লাখ টিকা বিতরণ করা হবে। এরপর চুক্তি অনুযায়ী সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ৫০ লাখ টিকা আসার পর আবার নতুন করে পরিকল্পনা করা হবে।
মহাপরিচালক আরও বলেন, টিকা নিয়ে বিশ্বব্যাপী এক ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। ইউরোপের অনেক দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা সরবরাহ করতে পারছে না। তবে সেরাম ইনস্টিটিউট কেনা তিন কোটি ডোজ চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে সরবরাহ করবে বলে জানিয়েছে। এর পরও সরকার টিকা নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না। এজন্য যখন যে পরিমাণ টিকা পাওয়া যাবে, সে অনুযায়ী বিতরণের পরিকল্পনা করা হবে।
জনগণকে আগ্রহী করতে শুরুতেই টিকা নেবেন মন্ত্রী, এমপি ও শীর্ষ কর্মকর্তারা :টিকা গ্রহণে মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে পরিকল্পনায় বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। শুরুতে করোনা চিকিৎসার জন্য সরাসরি যুক্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এরপর পর্যায়ক্রমে সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়ার কথা। কিন্তু টিকা পেতে নিবন্ধনে সাড়া কম পড়ায় এখন শুরুতেই মন্ত্রী, এমপি, সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা টিকা নেবেন। কাল রোববার সকালে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নিজে টিকা নিয়ে গণটিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। একই দিন সরকারের অন্যান্য মন্ত্রী এবং এমপিরা নিজ নিজ এলাকার টিকাকেন্দ্রে টিকা নেবেন। একই সঙ্গে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তাও প্রথম দিনেই টিকা নেবেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সমকালকে বলেন, টিকাদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেণির জন্য বিভিন্ন হাসপাতাল নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সরকারের মন্ত্রী, এমপিদের টিকার জন্য রাজধানীর মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালকে নির্ধারণ করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের বিচারকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকা নিতে পারেন। আবার সচিবরা, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কোথায় টিকা নেবেন সেটিও ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। টিকাদান কার্যক্রম যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, সেজন্য এভাবে টিকাদানের স্থান ভাগ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
টিকাদানের প্রস্তুতি :গণটিকাদান কর্মসূচি সফল করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এখন হাসপাতালে হাসপাতালে শেষ সময়ের প্রস্তুতি চলছে। প্রথম দিনে সারাদেশের ৬১৩ কেন্দ্রে একযোগে টিকাদান শুরু হবে। এর মধ্যে রাজধানীর ঢাকায় ৪৯টি কেন্দ্র রয়েছে। একই সঙ্গে প্রত্যেকটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিভাগীয় শহর, জেলা সদর হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকা দেওয়া হবে। প্রথম দিন প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের একটি করে কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। ঢাকার ৪৯ টিকাদান কেন্দ্রে ৩৫৪টি টিম কাজ করবে। আর সারাদেশের কেন্দ্রগুলোতে ছয় হাজার ৬৯০টি টিম কাজ করবে। প্রত্যেকটি কেন্দ্রে দু’জন করে স্বাস্থ্যকর্মী এবং চারজন করে স্বেচ্ছাসেবী থাকবেন।
প্রথম ধাপে টিকা পাবেন ১৫ ক্যাটাগরির মানুষ :প্রথম ধাপে ১৫ ক্যাটাগরির ব্যক্তিরা টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন কভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় নিয়োজিত সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী, ৫৫ বছরের ওপরে বয়সী জনগোষ্ঠী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, বিচার বিভাগ, মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, শিক্ষাকর্মী, ব্যাংক-বীমার কর্মীরা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অগ্নিনির্বাপক কর্মী, এনজিওকর্মী, দাফন ও সৎকারকর্মী, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত ব্যক্তিরা।