বেসরকারি হাসপাতালে করোনার ১০ পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন
দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন ও কভিড-১৯ সম্পর্কিত ১০ ধরনের পরীক্ষার মূল্য তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন বিজ্ঞপ্তি জারির তারিখ থেকে নির্ধারিত মূল্যের বাইরে টাকা দাবি করতে পারবে না দেশের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো। রবিবার এ মূল্য তালিকায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো অক্সিজেন এবং কভিড-১৯ সম্পর্কিত বেশকিছু পরীক্ষার মূল্য তালিকায় অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। ১৩ জানুয়ারি এ মূল্য তালিকা কার্যকরের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে পাঠানো হয়। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের পাঠানো ওই তালিকায় গতকাল স্বাক্ষর করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। এর আগে গত ২৩ নভেম্বর একটি খসড়া মূল্য তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল অধিদপ্তর।
করোনা সম্পর্কিত ১০টি প্রয়োজনীয় পরীক্ষার মূল্য ৪০০ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব পরীক্ষায়ও ১৩ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রস্তাব করা হয়েছিল।
মূল্য তালিকায় অক্সিজেন সিলিন্ডার বা সিস্টেমের চারটি ধরনের কথা উল্লেখ রয়েছে। এতে একক অক্সিজেন সিলিন্ডার ও মেনিফোল্ড অক্সিজেন সিলিন্ডার সিস্টেমে প্রতি ঘণ্টা ২ থেকে ৫ লিটার অক্সিজেন মাত্রার জন্য ১০০ টাকা, ৬ থেকে ৯ লিটার মাত্রার জন্য ১২৫ এবং ১০ থেকে ১৫ লিটার মাত্রার মূল্য ধরা হয়েছে ১৫০ টাকা।
এছাড়া সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম (জেনারেটর বেইজড) ২ থেকে ৫ লিটার মাত্রার ঘণ্টাপ্রতি ১২০ টাকা, ৬ থেকে ৯ লিটার মাত্রার জন্য ৩০০ টাকা এবং ১০ থেকে ১৫ লিটার মাত্রার জন্য ৩৫০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম (লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক বেইজড) ২ থেকে ৫ লিটার অক্সিজেন মাত্রার জন্য ঘণ্টাপ্রতি ১২০ টাকা, ৬ থেকে ৯ লিটার মাত্রার জন্য ২৫০ টাকা এবং ১০ থেকে ১৫ লিটার মাত্রার জন্য ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম এবং হাইফ্লো নেজাল ক্যানুলা ৬০ থেকে ৮০ লিটার মাত্রার অক্সিজেনের জন্য ঘণ্টাপ্রতি ৫০০ টাকা ধরা হয়েছে। এসব অক্সিজেনের প্রস্তাবিত মূল্যের ১৪ থেকে ৩০ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া জানান, দেশে মেডিকেল অক্সিজেন উৎপাদন ও সরবরাহের জন্য চারটি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন রয়েছে। এগুলো হলো লিন্ডে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাস লিমিটেড, স্পেক্ট্রা ইন্টারন্যাশনাল লি. ও ইসলাম অক্সিজেন প্রাইভেট লিমিটেড। এর মধ্যে লিন্ডে বাংলাদেশ এবং স্পেক্ট্রা ইন্টারন্যাশনাল সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে।
তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘অক্সিজেনের মূল্য নির্ধারণের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে। আর কোনো প্রক্রিয়া বাকি নেই। দুই-একদিনের মধ্যেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।’
অক্সিজেন ও উল্লেখিত পরীক্ষার জন্য বেসরকারি হাসপাতালগুলো এখন ইচ্ছেমতো দাম নিতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, হাসপাতাল শাখা এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রচার করলেই তা কার্যকর করতে বাধ্য হবে বেসরকারি হাসপাতালগুলো।’
অক্সিজেন ও অন্যান্য জরুরি পরীক্ষা মূল্য নির্ধারণ করায় মানুষের হয়রানি কিছুটা বন্ধ হবে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব। তবে মূল্য নির্ধারণের সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতাল বা ক্লিনিকের প্রকারভেদ করা উচিত বলে মনে করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কাসেম। তিনি বলেন, ‘যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা ঠিক আছে। তবে এটা বিবেচনায় আনতে হবে উপজেলা বা জেলা পর্যায়ের একটি হাসপাতাল যে খরচে সেবা দিতে পারবে রাজধানীর একটি বড় হাসপাতাল সে খরচে সেবা দিতে পারবে না। এক্ষেত্রে হাসপাতালের প্রকারভেদ করে মূল্য নির্ধারণ করা উচিত।’